পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর জীবনী
কবি জসীম উদ্দীন ছিলেন একজন বাঙালি কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক।
জন্মঃ ১ জানুয়ারি ১৯০৩
পূর্ণ নামঃ মোহাম্মাদ জমীর উদ্দীন মোল্লা ।
বাবার নামঃ আনসার উদ্দিন মোল্লা ও মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থঃ রাখালী, নকশী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানখেত,সোজন বাদিয়ার ঘাট, হাসু প্রভৃতি।
মৃত্যু ১৪ মার্চ ১৯৭৬ (বয়স ৭৩)।
জম্ম ও পারিবারিক পরিচয়ঃ জসীম উদ্দীন১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত) বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলানায় জন্মগ্রহণ করেন। জসীম উদ্দীনের পুর্ণ নাম মোহাম্মাদ জমীর উদ্দীন মোল্লা ডাকনাম জসীম উদ্দিন । তার বাবার বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন।
শিক্ষাজীবনঃ জসীম উদ্দীনের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুলে (বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল)। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিষয় নিয়ে ১৯২৯ সনে বি.এ. এবং ১৯৩১ সালে এম.এ. শেষ করেন।
কর্মজীবনঃ ১৯৩১ সালে এম.এ পাশ করার পর জসিম উদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৩৩ সালে ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন এবং তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন। তারপর ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে গেছেন।
পুরষ্কারঃ জসিম উদ্দীন প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড ফর প্রাইড অফ পারফরম্যান্স, পাকিস্তান (১৯৫৮) পুরুস্কার প্রাপ্ত হন।
১। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি, ভারত (১৯৬৯)
২। ১৯৭৪ সনে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার {প্রত্যাখ্যান করেন}
৩। একুশে পদক, বাংলাদেশ (১৯৭৬)
৪। স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৭৮ (মরণোত্তর)
সাহিত্য ধারা সমূহঃ পল্লী কবি জসীম উদ্দীন একদম অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। কলেজে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায়, পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে, একদম সাবলীল ভাষায় তিনি বিশেষ আলোচিত কবিতা কবর লেখেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় কবর কবিতাটি লেখেন যা প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়।
গাঁয়ের লোকের গ্রাম্য জীবন এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য জসীম উদ্দীন বিশেষভাবে পরিচিত। তার এই সুখ্যাতিই তাকে 'পল্লী কবি' উপাধি এনে দিয়েছে। তার কাব্যের গঠন প্রণালী এবং বিষয়বস্তু পাঠককে বাংলা লোক সাহিত্যের প্রগাঢ় আস্বাদন এনে দেয়। তার রচিত নকশী কাঁথার মাঠ কাব্য গ্রন্থকে তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পৃথিবীর অনেক ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে।
মৃত্যুবরণঃ ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর গ্রামে দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলিঃ কাব্যগ্রন্থ-রাখালী (১৯২৭), নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), বালুচর (১৯৩০), ধানখেত (১৯৩৩), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩), হাসু (১৯৩৮), রুপবতি (১৯৪৬), মাটির কান্না (১৯৫১), এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬), সখিনা (১৯৫৯), সুচয়নী (১৯৬১), দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি (১৯৮৭)।
নাটক- পদ্মাপার (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), মধুমালা (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯), ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮), আসমান সিংহ (১৯৮৬)।
উল্লেখযোগ্য গান সমূহ
- কাজল ভ্রমরা রে
- আমার সোনার ময়না
- আমার গলার হার খুলে নে
- আমার হাড় কালা করলাম রে
- আমায় ভাসাইলি রে
- আমায় এতো রাতে
- কেমন তোমার মাতা পিতা
- নদীর কূল নাই কিনার নাই
- ও বন্ধু রঙিলা
- রঙিলা নায়ের মাঝি
- নিশিতে যাইও ফুলবনে, রে ভোমরা
- ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙল বাইতে
- প্রাণসখী রে ঐ শোন কদম্ব তলে
- ও আমার দরদি আগে জানলে
- বাঁশরি আমার হারাই গিয়াছে
- বালু চরের মেয়া
- বাদল বাঁশি ওরে বন্ধু
- গাঙ্গের কূলরে গেলো ভাঙিয়া
- ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে
- ও আমার গহীন গানের নায়া
- আমার বন্ধু বিনুধিয়া