জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব 

জনসংখ্যার উপর পরিবেশের স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর। 

➢ভূমিকাঃ উন্নত দেশ বা অনুন্নত দেশ সব দেশেই গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর হতে শহরে স্থানান্তর সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে সব দেশে একই কারণ বিদ্যমান তা নয়। কোন দেশে বিকর্ষণজনিত কারনে আবার কোন কোন দেশে আকর্ষণ জনিত কারণে জনসংখ্যা স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। 

জনসংখ্যার উপর স্থানান্তর গমনের প্রভাব আলোচনা কর


১। জনসংখ্যার উপর গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রভাবঃ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলে শহরে আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের জনসংখ্যা ও ঘনত্ব বাড়ছে। গ্রামের লোক শহরমুখি হচ্ছে বলেই শহর ও শহরের আশেপাশের শিল্প কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ হচ্ছে। বাংলাদেশের শহর ও শহরের আশেপাশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা স্থাপিত হচ্ছে। এসব খাতে নারী পুরুষ জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অতিরিক্ত লোকের চাপ পড়ছে শহরের বিভিন্ন খাতে। বিশেষ করে শহর এলাকায় দেখা দিচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত চাহিদা। ক্রেতার প্রতিযোগিতার কারনে বৃদ্ধি পাচ্ছে পণ্যর মূল্য। 

২। জনসংখ্যার উপর গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তরের প্রভাবঃ গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তর বেশির ভাগই অস্থায়ী। দৈনন্দিন কাজের সন্ধানে বা কাজ করার উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। আবার সম্পর্কের কারণে স্ত্রী যেমন স্বামীর বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় তেমনি আবার স্বামীও স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। এছাড়া কাজের প্রয়োজনেও মানুষ এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। এ ধরনের স্থানান্তর দ্বারা গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার পরস্পর পরস্পর কর্তৃক স্বসমর্থিত হয়ে ওঠে। একে অপরের সমর্থিত হয়ে প্রায় ভারসাম্য জীবনযাত্রা নির্বাহ করার সুযোগ পায়। একজনের বিপদে অন্য গ্রামের লোকের এগিয়ে আসে। জন্ম, মৃত্যু, উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে পারস্পরিক সমর্থিত হয়ে একে অপরের প্রতি হৃদয় সুলভ সম্পর্ক দ্বারা জীবনযাত্রা নির্বাহ করার সুযোগ পায়। শ্রমদক্ষতা বিনিময়, সংস্কৃতির প্রভাব, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির জীবিকা শক্তি বৃদ্ধি, জীবিকা শক্তিবৃদ্ধি পায় এ ধরনের স্থানান্তর দ্বারা।

৩। জনসংখ্যার উপর শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তরের প্রভাবঃ গ্রাম প্রধান দেশগুলোর এ ধরনের স্থানান্তর যদি দক্ষ ব্যবস্থাপক, প্রশাসক, ডাক্তার, কৃষিবিদ, মৎস্যবীদ, অর্থনীতিবিদ কর্তৃক সম্ভাব হয় তবে উন্নয়ন গ্রাম থেকে শুরু হবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কৃষি ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, প্রশাসন ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, সেতু, শিক্ষা ও মৎস্য প্রভৃতির উন্নয়ন শুরু করলে গ্রামের বেকার অসংখ্য লোকের কর্মসংস্থান হবে। গ্রামের লোক শহরমুখী হবেনা।উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ নীতির বলবৎ থাকলে গ্রামের লোক শহরে আসবে না। বরং শহরের লোক গ্রামমুখী হবে বেশি স্থানান্তরিত হবে। তখন শহরের অতিরিক্ত বোঝা কমবে।

৪। শহর থেকে শহরে স্থানান্তরের প্রভাবঃ শহর থেকে শহরের স্থানান্তর দ্বারা কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কর্মের দক্ষতা বাড়ে। কর্ম দক্ষতা পরস্পর বিনিময় হয়। এক শহরের লোকেরা অন্য শহরের স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে দেশের শহরের আয়তন বাড়ে। সব শহরের মধ্যে কর্মদক্ষতার বিস্তৃতি ঘটে। উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পায়, আয় বাড়ে, আয়ের সঞ্চয় বাড়ে, বিনিয়োগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক ও নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে।

উপসংহার: জনসংখ্যা স্থানান্তর দ্বারা গ্রাম, শহর প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হয়। আবার উৎপাদনমুখী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই জনসংখ্যা স্থানান্তরের ঋণাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জনসংখ্যার রাষ্ট্র সমগ্র সমাজ অর্থনীতি এই তিন বৃহৎ শক্তির উন্নয়নের সহায়ক হয়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post