নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালাসমূহ উল্লেখ কর
ভূমিকা:- নগর উন্নয়ন বলতে নগরের ক্রমাগত উন্নয়ন বা বিকাশকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট নগরের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বসত স্থাপনার উন্নয়ন, নাগরিক সচেতনতার উন্নয়ন প্রভৃতি যে কোন ধরনের উন্নয়ন নগরের সাথে যুক্ত হলে তখন তাকে নগরের উন্নয়ন হিসেবে ধরা হয়।
নগর উন্নয়নের মৌল নীতিমালা
নিম্নে নগর উন্নয়নের কতিপয় নীতিমালা আলোচনা করা হলো-
১। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
নগর উন্নয়ন করতে হলে ঐ এলাকার লোকজনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য যে সব বিষয় প্রয়োজন সেগুলি স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২। অর্থনৈতিক উন্নয়ন
নগর উন্নয়ন করতে হলে অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন। কেননা আর্থিক অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে নগরের উন্নয়ন সাধিত হবে।
৩। পৌর ব্যবস্থাপনা
পৌর ব্যবস্থাপনা পরিকল্পিতভাবে স্থাপন না করলে নগরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হয়। এজন্য পৌর ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য উপাদানগুলোর যথাযথ উন্নয়ন সাধন করা খুবই জরুরি।
৪। নগর দারিদ্র্য দূরীকরণ
শহরে কাজের সুযোগ বেশি থাকায় গ্রামাঞ্চল হতে বিভিন্ন লোকজন এসে শহরে অবস্থান করে যাতে করে নগরের দারিদ্র্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসকল দারিদ্র্যতা নির্মূল করতে হবে।
৫। উত্তম পরিকল্পনা
উত্তম পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল একটি দেশের নগর উন্নয়ন সম্ভব। নগর উন্নয়নের প্রাথমিক শর্তই হলো উত্তম পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন। যদি উত্তম পরিকল্পনা নিয়ে সেট বাস্তবায়িত হয় তবেই নগরে উন্নয়ন সাধিত হবে।
৬। যোগাযোগ ব্যবস্থা
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না ঘটলে নগরের উন্নয়ন সাধিত হয় না। এতএব নগর উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে নগরের উন্নয়ন ও তত দ্রুত প্রসারিত হবে।
৭। নগরের আয়তন
সীমিত আয়তনের নগরের উন্নয়ন মূলত কষ্টসাধ্য। এজন্য নগরের আয়তন বাড়াতে হবে। নগরের আয়তন বাড়লে বসতবাড়ি প্রসারিত হবে ফলে ভারসাম্য ও রক্ষা হবে।
৮। পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন
নগরের উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্মল বায়ু, সবুজ এলাকা, খাল-বিল-নদী রক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগর গড়ে তোলা যেতে পারে।
৯। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) ব্যবহার
স্মার্ট নগর গড়তে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য। ডিজিটাল প্রশাসন, অনলাইন নাগরিক সেবা, স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সিসিটিভি মনিটরিং ইত্যাদির মাধ্যমে নগরকে আরও উন্নত ও সুশাসিত করা সম্ভব।
১০। জনসম্পৃক্ততা ও নাগরিক সচেতনতা
নগর উন্নয়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা প্রয়োজন। নাগরিকদের মতামত, স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও কর্তব্যবোধ নগর উন্নয়নকে টেকসই ও কার্যকর করে তোলে।
১১। আবাসন ও বস্তি উন্নয়ন
নগর উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। বস্তি উন্নয়ন, স্বল্পমূল্যের আবাসন এবং নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা নগরকে বাসযোগ্য করে তোলে।
১২। স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা
নগরবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিশুদ্ধ পানি ও আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য।
১৩। নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা
নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পুলিশিং, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন।
১৪। সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়ন গড়ে তুলতে হবে।
এতএব সর্বশেষ বলা যায়, নগর উন্নয়ন হলো নগর এলাকার শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, বসতি, জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন, ব্যাংকিং কার্যক্রম, বীমা কর্যক্রম, যাতায়াত এবং নগর পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন প্রভৃতি কার্যক্রমের সমষ্টি। এই নীতিমালাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই একটি নগর টেকসই, পরিকল্পিত এবং বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

No comments:
Post a Comment