ভূমিসংস্কার বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ- প্রাক ভারতে ভূমি মালিকানা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদরা ভিন্ন মতামত পোষণ করেন।ভূমিতে ব্যক্তি মালিকানা বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মালিকানার কথা বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে ক্ষুদ্রার্থে হলে ভূমিতে মালিকানা ছিলো। এক কথায় ভূমি বিষয়ে যে সংস্কার আইন তৈরী করা হয় তাই ভূমি সয়স্কার আইন নামে পরিচিত।
ভূমিসংস্কারঃ সাধারণভাবে ভূমিসংস্কার বলতে বুঝায় চাষির নিকট জমি ও কৃষি আয়ের পুনঃবন্টনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এদেশের সরকার ৮০ জন Gundar Mydral এর মতে ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে আমরা মানুষ এবং জমির মধ্যে সম্পর্কের একটি পরিকল্পিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন বুঝি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবীদ, তাত্ত্বিক ও ভূমি বিশেষজ্ঞ ভূমি সংস্কার সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রদান করেছেন। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-
অধ্যাপক এম এ হামিদ বলেন পল্লীউন্নয়নের লক্ষ্যে অস্তিত্বমান ভূমিব্যবস্থার সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা শনাক্ত করে তার সংস্থারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের রুপরেখাই ভূমি সংস্কার।
বদরুদ্দীন উমর এর মতে ভূমি সংস্কার বলতে বোঝায় মূলত ভূমি সম্পর্কের পরিবর্তন অর্ণব জমি ও উৎপাদনের অপরাপর উপকরণের মালিকানার ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে যে সম্পর্ক প্রচলিত আছে তার পরিবর্তন।
Thomas F. Currel এর মতে There are defination ranging all the way from simple slogan land to tiller through the large scale change in exciting tenure patterns to the more economic concept of redistribution of agriculture income and earning capacity.
জাতিসংঘের ভূমি সংস্কার কমিটির মতে land বা ভূমি সংস্কার হচ্ছে একটি সমন্বিত কর্মসূচি যা কৃষি কাঠামোর সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি যা বাধার সৃষ্টি করে তাকে সরিয়ে দেই।
ভূমিসংস্কারের গুরুত্ব ও ফলাফল:
১. ভূমির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা: ভূমিসংস্কারের মাধ্যমে জমির উপর অভিজাত শ্রেণির একচেটিয়া মালিকানা ভেঙে চাষিদের মধ্যে জমি বণ্টন করা হয়। এতে ভূমিহীন কৃষকরা জমির মালিক হয়ে ওঠে এবং সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা পায়।
২. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি: যারা নিজের জমিতে কাজ করে, তারা জমির প্রতি যত্নবান হয় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ভূমিসংস্কার কৃষিতে উৎসাহ বৃদ্ধি করে এবং ফলন বাড়ায়।
৩. শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা: জমিদার বা মহাজনের হাত থেকে ভূমির মালিকানা তুলে নিয়ে বাস্তব চাষিদের হাতে তুলে দিলে সামাজিক শোষণ কমে এবং দারিদ্র্য হ্রাস পায়।
৪. গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক: ভূমিসংস্কারের ফলে কৃষক জমি চাষ করে উপার্জনের সুযোগ পায়, যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হয়
উপরের আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পরিপন্থী কৃষি কাঠামোয় বিরাজমান ত্রুটিসমূহ নিরসনের উদ্দেশ্য যে অবিচ্ছেদ্য কার্যক্রম গৃহীত হয় তাকেই ভূমি সংস্কার বলা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের permanent settlement এর মাধ্যমে ভূমি সংস্কারের সূচনা হয়। লোকের ভাগ্য বিজরিত ভূমি সংস্কার ব্যবস্থায় অসংখ্য ত্রুটি লক্ষ্য করে যার কারণে ভূমি সংস্কার সাধনে সরকার গভীরভাবে মনোনিবেশ করে এবং ১৯৭২ ও, ১৯৮৪ সালে দুটি ভূমি সংস্কার নীতি প্রণয়ন করেন।

No comments:
Post a Comment