গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি?

ভূমিকাঃ- সভ্যতার উষাকাল থেকে যৌথবদ্ধ মানুষ একত্রে থাকার সুযোগ সুবিধা এবং সমস্যা নিয়ে ভেবেছে।সমাজজীবনকে অর্থবহ করার নানা উপায় ও কৌশল উদ্ভবন করেছেন। ফলে জম্ম হয় বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের, দর্শন শাস্ত্র, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের, ইতিহাসের মনস্তত্ত্বের সবশেষে আত্মপ্রকাশ করেছে একদিকে আদি মানব চিন্তার মতই প্রাচীন আবার অন্যদিকে প্রতি দিনের সংবাদপত্রের মতই নতুন বিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান।

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান কি


গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানঃ আমরা জানি, প্রাচীনতম স্থায়ী জনসমষ্টি হচ্ছে গ্রাম। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানের যে শাখাটি গ্রামীণ মানুষের যীবনযাত্রা, আচার-আচরণ, ধ্যান-ধারণা ও গ্রাম সমাজের সংগঠন, কাঠামো প্রক্রিয়া এর মৌলিক সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ এবং পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে থাকে তাকেই গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বলা হয়।


 প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী নানা ধরনের সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন । নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানী লরী নিলসন বলেন ''গ্রামীণ পরিবেশে যে সকল সামাজিক গোষ্ঠী অবস্থান করে তাদের বর্ণণা ও বিশ্লেষণ হচ্ছে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।''

Bogardrs এর মতে ''সমাজবিজ্ঞানের যে শাখাটি গ্রাম সমাজের সংগঠন, কাঠামো প্রক্রিয়ার মৌলিক ও সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ এবং পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করে তাকে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বলে।''

D. Sanderson গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলেছেন ''গ্রামীণ পরিবেশে জীবন ব্যবস্থার সামাজিক অধ্যয়নই হলো গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।

A. R. Desai এর মতে ''যে বিজ্ঞান গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ননীতি সম্পর্কে আলোচনা করে তাই গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।''

F.S. Chapin এর ভাষায় ''গ্রামের জীবনের সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে গ্রামের জনসংখ্যার সামাজিক সংগঠন এবং গ্রামীণ সামাজিক প্রক্রিয়া যা গ্রামীণ সমাজকে পরিচালনা করে।''

গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

১. গ্রামীণ জনজীবন ও জীবনধারা সম্পর্কে আলোচনা করে।

২. গ্রামীণ সমাজের সামাজিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান

৩. পরিবার, আত্মীয়তা ও বৈবাহিক সম্পর্কের ধরণা

৪. গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে বিবরন

৫. গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা।

৬. গ্রামীণ সমাজে নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও রাজনীতি

৭. সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ

৮. গ্রামীণ সমাজে পরিবর্তন ও আধুনিকতার প্রভাব

৯. গ্রামীণ দারিদ্র্য, সমস্যা ও উন্নয়ন নীতি

১০. সামাজিক শ্রেণি ও বর্গ বিভাজন

১১. গ্রামীণ নারী ও নারীর অবস্থান

১২. গ্রামীণ সমাজে প্রযুক্তির প্রভাব ও বৈষম্যসহ গ্রামীণ সমাজের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয় নিয়ে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান হলো গ্রাম সমাজের বিজ্ঞান। এটি মূলত জ্ঞানের একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো যা গ্রামীণ সমাজকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অধ্যয়নের ফলশ্রুতি। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান একটি নতুন শাস্ত্র হলেও ‌এর প্রকৃতি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিজ্ঞানভিত্তিক। কারণ, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান তার বিষয়বস্তুতে বস্তুনিষ্ঠ, মূল্যবোধ ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আলোচনা ও পর্যালোচনা করে। তাই বলা যায় গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান একাধারে বিজ্ঞান ও কলা বটে। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রামীণ মানুষের যীবনযাত্রা তাদের আচার-আচারণ, ধ্যান-ধারণা, প্রথা, প্রতিষ্ঠান তথা গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর অধ্যয়ন।

No comments:

Post a Comment