সমাজকাঠামো কি? সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ

সমাজকাঠামো বলতে কী বুঝ? সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ কি কি

ভূমিকাঃসমাজকাঠামো সমাজবিজ্ঞানপর আলোচ্য বিষয়। শুধু সমাজকাঠামোর মাধ্যমেই সমাজকে অনুধাবন করা যায়। যে কোন সমাজকে জানার জন্য সমাজের সমাজকাঠামো জানার বিকল্প নেই। কতকগুলো বিষয় দ্বারা সমাজের বহিঃপ্রকাশ ঘটে সে বিষয়গুলোই সমাজকাঠামোর উপাদান। তাই উপাদান গুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাজকাঠামোর বিশ্লেষণ পরিপূর্ণ হয়।

সমাজকাঠামো কি


সমাজকাঠামো: সমাজবিজ্ঞান এ সমাজকাঠামো একটি স্বতন্ত্র প্রপঞ্চ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণ সমাজ যার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তাকেই সমাজকাঠামো বলে। সমাজকাঠামোর ধারণাকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা (ক) জৈবিক ধারণা (খ) অজৈবিক ধারণা। অজৈবিক ধারণার প্রবর্তক মার্কস ও জৈবিক ধারণার সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রেড ক্লিফ ব্রাউন, ই. আর. লিচ ও মরিচ জিন্সবার্গ।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সমাজকাঠামো সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানীর কতিপয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

ই. আর. লিচ সমাজকাঠামোকে রাজনৈতিক ক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে "ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের যে সমষ্টিগত ধারণা, তার সমন্বয়ে সমাজকাঠামো গঠিত।"


এস. এস. নেডেল তার The theory of social structure গ্রন্থে বলেন "ব্যক্তির নির্দিষ্ট ভূমিকার মাধ্যমে সমাজকাঠামো উপলব্ধি করা যায়।" তার মতে প্রত্যেক ব্যক্তিই কতকগুলো ভূমিকা পালন করে থাকে এবং সে যে ভূমিকা পালন করে থাকে তার মাধ্যমেই সমাজকাঠামোর স্বরূপ উম্মেচিত হয়।

সমাজকাঠামোর উপাদানসমূহ:

সমাজকাঠামো মূলত কিছু মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এই উপাদানগুলো সমাজের অভ্যন্তরে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভূমিকা নির্ধারণ করে। সমাজকাঠামো বিশ্লেষণের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ:

১। সামাজিক অবস্থান (Social Status): সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট সামাজিক অবস্থানে অধিষ্ঠিত থাকে। এই অবস্থান জন্মসূত্রে বা অর্জনসূত্রে  হতে পারে।

২। সামাজিক ভূমিকা (Social Role): প্রত্যেক ব্যক্তি তার অবস্থানের ভিত্তিতে সমাজে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকে। এই দায়িত্ব বা কাজের ধারাকেই বলা হয় সামাজিক ভূমিকা।

৩। সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Social Institutions): সমাজে সামাজিক চাহিদা পূরণের জন্য গঠিত সংগঠিত কাঠামোকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। যেমন: পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্ম, রাষ্ট্র ও অর্থনীতি।

৪। সামাজিক সম্পর্ক (Social Relationships): সমাজকাঠামোতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলো সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখে।

৫। মূল্যবোধ ও বিধিনিষেধ (Values and Norms): সমাজে চলার জন্য কিছু প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, আদর্শ ও নৈতিক নীতিমালা থাকে যেগুলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৬। সামাজিক স্তরবিন্যাস (Social Stratification): সমাজে মানুষ বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে স্তরে বিভক্ত থাকে। এই স্তরবিন্যাস সমাজের ক্ষমতা ও সম্পদের বণ্টন নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

কার্ল মার্কস এর মতে "সমাজকাঠামো বলতে দুটি অংশকে বুঝিয়েছেন। যেমন মৌলকাঠামো ও উপরিকাঠামো। মার্কসীয় ব্যাখ্যায় সামাজিক শ্রেণির বা গোষ্ঠীর প্রাধান্য নিরুপণ করা হয়ে থাকে সমাজকাঠামোর উৎপাদন সম্পর্কের প্রেক্ষিতে। মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বারা সমাজের বস্তগত বা অর্থনৈতিক কাঠামো বা উৎপাদন শক্তির যে বিকাশ ঘটে তা সমাজে মৌল কাঠামো তৈরী করে। সমাজের উপরিকাঠামো গড়ে উঠে আইন, সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। উপরিকাঠামোর পরিবর্তন মৌল পরিবর্তন এর সাথে আবশ্যক। 


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজে বসবাসরত অবস্থায় আমাদের সকল কাঠামো ব্যবস্থার একক ভিত্তি সমাজকাঠামো যা প্রত্যক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক সম্পর্কই সমাজকাঠামো কে গড়ে তোলে। সমাজকাঠামো সমাজস্থ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্কের ফলস্বরূপ যেখানে সবাই নিজস্ব ভূমিকা পালনের মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়

No comments:

Post a Comment