শিক্ষা কি? What is Education? শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষা কী? What is Education?

ভূমিকাঃ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। শিক্ষা মানুষের ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশিত করে। শিক্ষা হলো একটি সচেতন ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবণতা গুলোকে বিকশিত করা ও মানুষের মনে আদর্শ লক্ষ্যকে স্থির করা। মানব জীবনে সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষা কি What is Education


শিক্ষাঃ মানবসমাজ মাত্রেরই একটি মৌলিক কার্যপ্রক্রিয়া হলো শিক্ষা। সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলতে বোঝায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই। প্রকৃত প্রস্তাবে শিক্ষা হলো এক ধরনের বিশেষ সংস্কার সাধন। ব্যাপক অর্থে শিক্ষা বলতে শুধু বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বোঝায় না বরং পারিবারিক , সামাজিক ও আমাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের উদ্দেশ্য সচেতনভাবে সকল প্রচেষ্টাই শিক্ষা।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ শিক্ষাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।নিম্নে তাদের সংজ্ঞাগুলি প্রদান করা হলো-

এরিস্টটল এর মতে-“শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীর দেহে এবং মনের বিকাশ সাধন যা দ্বারা সে তার জীবনের সত্য উপলব্ধি করে।”

মোতাহের হেসেন চৌধুরীর মতে-“মানুষ নিজেকে সৃষ্টি করার পদ্ধতি হলো শিক্ষা। শিক্ষা মূলত অন্তর্নিহিত শক্তি ও চেতনার বিকাশ।”

ম্যাকেঞ্জির মতে-“আমাদের ক্ষমতাকে বিকশিত ও অনুশীলন করার উদ্দেশ্যে সচেতনভাবে পরিচালিত যে কোন প্রচেষ্ঠাই সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা।”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় যা কেবল তথ্য অধিবেশন করে না, যা বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।”

দার্শনিক রুশোর মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশকে, যে বিকাশের মাধ্যমে সে সুসামঞ্জস্য স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী হয়।”

জন ডিঙ্গরের মতে- সংকীর্ণ অর্থে ইচ্ছেমূলক সকল জ্ঞান অর্জনই শিক্ষা।

পেস্টালৎসি এর মতে-“শিক্ষা বলতে বুঝায় সুপ্ত আত্মশক্তির বিকাশের কথা বুঝিয়েছেন।”

ফ্রান্সিস বেকল এর মতে-“শিক্ষা হচ্ছে মনের চোঁখ। শিক্ষা বলতে তিনি মূলত মানুষের মনের বিকাশকে বুঝিয়েছেন।”

White Head এর মতে-‘শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান অর্জন এবং সুষ্ঠু প্রয়োগের একটি পরিকল্পনা কৌশল মাত্র।”

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব

শিক্ষা শুধু তথ্য জানার একটি উপায় নয়, বরং একজন মানুষকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রধান মাধ্যম। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার জ্ঞান বৃদ্ধি করে, নৈতিকতা শিখে এবং সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়।

প্রথমত, শিক্ষা জ্ঞানের আলো দেয়। মানুষ জন্ম থেকে অনেক কিছু জানে না; শিক্ষা তাকে জানতে শেখায়, ভাবতে শেখায় এবং বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতা প্রদান করে। এটি মানুষের চিন্তাশক্তিকে বিকাশ করে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। একজন শিক্ষিত মানুষ শিষ্টাচার, সততা ও দায়িত্ববোধ শেখে। সে নিজের আচরণ ও কাজের প্রতি সচেতন হয় এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে শেখে।

তৃতীয়ত, শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নতির পথ খুলে দেয়। শিক্ষিত মানুষ সহজেই কর্মসংস্থান পায় এবং নিজেকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করতে পারে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাস পায় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

চতুর্থত, শিক্ষা সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ শেখে। এটি সমাজে হিংসা, কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

সর্বোপরি, একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে সেই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। তাই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্যও অপরিসীম।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। বর্তমান যুগে শিক্ষা অর্জনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়। মানব সমাজকে উন্নত করে তুলতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মানব জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন অশিক্ষিত লোকের চেয়ে একজন শিক্ষিত লোক সর্বদা আচার ব্যবহার ভিন্ন হয়ে থাকে যা শুধু শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন সম্ভব।

No comments:

Post a Comment