দাসপ্রথা বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ- মানব সমাজ সর্বদায় গতিশীল। বিভিন্ন পরিবর্তন এর মধ্য দিয়ে এই গতিশীলতা তৈরী হয়। সামাজিক পরিবর্তন একটি চিরন্তন প্রথা। এক সমাজ পরিবর্তিত হয়ে অন্য সমাজে রুপ লাভ করে এবং পৃথিবীর কোন সমাজ ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী থাকে না। এরুপ বিভিন্ন পরিবর্তন এর এক পর্যায়ে সমাজে এই দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। দাস সমাজ মূলত দাস প্রথার উপরই প্রতিষ্ঠিত তবুও এ প্রথার মধ্যে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
দাসপ্রথাঃ দাসপ্রথা হলো এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আধিপত্যের বশ্যতা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। এ সম্পর্কের যাত্রা খুবই গভীর এবং বিস্তৃত। দাস প্রথায় একদিকে যেমন দাস মালিকের হাতে রয়েছে দাসের জীবন-মরণ এর অধিকার অন্যদিকে রয়েছে সুনিশ্চিতভাবে প্রণীত পারস্পরিক দায়দায়িত্বের এবং আইন প্রণয়নের অধিকার। কিন্তু এসবের মূল কথা হলো আপন স্বার্থ হাছিল করার জন্য দামকে কাজে বাধ্য করার অধিকার।
সমগ্র পৃথিবীতে দাসপ্রথা কলঙ্কজনক অধ্যয়ের সূচনা করেছে। আদিম সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা পতনের মধ্য দিয়েই মূলত দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। সমগ্র প্রাচীন কাল জুড়েই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দাস প্রথা প্রচলিত ছিলো এবং প্রাচীন রোমান ও গ্রিক সভ্যতায়ও দাসপ্রথা সম্পর্কে জানা যায়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে দাসপ্রথাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে দাসপ্রথার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা প্রদান করা হলো
এল. টি. হবহাউজ (L. T. Hobbhouse) এর মতে "দাস হচ্ছে সে ব্যাক্তি যাকে আইন বা প্রথার মাধ্যমে অন্যের সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়। চরম অবস্থায় দাম সম্পূর্ণভাবে অধিকারহীন অস্থাবর সম্পত্তি। কখনো তাকে গাধা বা গরুর মত রক্ষা করার ব্যবস্থা পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে দাস তার বিচারশক্তি ও ব্যাক্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে মানবীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয় এমনকি বাঁচার অধিকার থেকেও সে বঞ্চিত হয়।"
কার্ল মার্কস দাসপ্রথার সংজ্ঞায় বলেন "দাসসমাজ হলো প্রথম শ্রেণিবিভক্ত সমাজ। এ সমাজে তিনি দুটি বিরোধধর্মী শ্রেণির অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন প্রথমত দাস মালিক দ্বিতীয়ত দাস।"
প্রাচীন রোমের আইনে দাসকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীন রোমে দাসকে সবসময় অন্যের ইচ্ছেমত চলতে হয়েছে এবং নিজের যাবতীয় ইচ্ছা, স্বভাব ও প্রকৃতি বাদ দিতে হয়েছে।
এরিস্টটল (Aristottle) এর মতে "এরিস্টটল দাসকে প্রাণযুক্ত হাতিয়ার বলে অভিহিত করেছেন তার মতে মানুষ সকলে মৌলিকভাবে সমান নয় কেউ শরীরিকভাবে দুর্বল এবং কেউ হীনমানসিকতার আর এসব লোকেরাই দাস।"
নাজমুল করিম বলেন (Nazmul Karim) বলেন "ভারতের দাসপ্রথা পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারেনি কারণ উৎপাদন কাজের জন্য ভারতে দাসদের ব্যবহার করা হতো না দাসরা সাধারণত ব্যক্তিগত চাকর হিসেবে পরিগনিত হতো।
সুতরাং বলা যায় যে সকল সমাজেই দাসপ্রথা ছিলো মানবতা বিরোধী। বহু দার্শনিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দাসপ্রথা মেনে নিলেও বর্তমানে দাসপ্রথা বিলোপের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।