উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব


ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে, একটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে তার নাগরিকদের মানসিকতা, মূল্যবোধ এবং পেশাগত দায়িত্ববোধের উপর। বিশেষত, সেবামূলক পেশা সমূহ যেমন—চিকিৎসা, শিক্ষা, সমাজসেবা, নার্সিং, আইন, প্রশাসন ইত্যাদি একটি জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, উন্নত জাতি গঠনে এসব পেশাকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

উন্নত জাতি গঠনে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব


সেবামূলক পেশা কী?

সেবামূলক পেশা হলো এমন ধরনের পেশা যা ব্যক্তিগত লাভের চেয়ে জনকল্যাণকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এই পেশার মাধ্যমে সরাসরি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা হয় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়।

কেন সেবামূলক পেশা উন্নত জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ?

১. মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সহায়ক: প্রত্যেক মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষালাভ, আইনের সুরক্ষা পাওয়া মৌলিক অধিকার। শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে কাজ করেন।


২. নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে: সেবামূলক পেশার মূল ভিত্তি হচ্ছে নৈতিকতা ও মানবিকতা। যেমন, একজন চিকিৎসক রোগীর সেবায় আত্মনিয়োগ করেন শুধুমাত্র পারিশ্রমিকের জন্য নয়, বরং রোগীকে সুস্থ করার দায়িত্ববোধ থেকেই। এই ধরনের পেশা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে মানবিক গুণাবলি অর্জনে।


৩. সমাজে সচেতনতা ও নেতৃত্ব গড়ে: শিক্ষক বা সমাজকর্মীর মতো পেশাজীবীরা সমাজে সচেতনতা তৈরি করেন, মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উৎসাহ দেন এবং নেতৃত্ব গড়তে সাহায্য করেন। যার ফলে সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আসে।


৪. দুর্নীতি রোধ ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করে: সেবামূলক পেশার নৈতিক দায়বদ্ধতা দুর্নীতি রোধে সহায়ক। একজন সৎ প্রশাসক বা আইনের রক্ষক অপরাধ দমন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।


৫. পরিবার ও সমাজ গঠনে সহায়ক: একজন সেবাকর্মী শুধু একজন পেশাজীবী নন, তিনি একজন সমাজ গড়ার কারিগর। একজন ভালো শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়েন, তেমনি একজন ভালো চিকিৎসক সুস্থ সমাজ নিশ্চিত করেন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেবামূলক পেশার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান পেশাজীবীর ঘাটতি রয়েছে। তাই এসব পেশাকে আরও মর্যাদাপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। তরুণ সমাজকে এই পেশায় উৎসাহিত করতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সম্মান ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।

উপসংহার: উন্নত জাতি গঠনের জন্য কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, প্রয়োজন মানবিক ও নৈতিক উন্নয়ন। আর এই উন্নয়ন সম্ভব সেবামূলক পেশাগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলেরই উচিত এই পেশার গুরুত্ব অনুধাবন করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে অবদান রাখা।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post