নৃগোষ্ঠীর ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

নৃগোষ্ঠীর ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ

ভূমিকা:  যেসব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নৃগোষ্ঠীকে শ্রেণীকরণ করা হয়, ভৌগোলিক অবস্থান তার মধ্যে অন্যতম। বস্তুত পৃথিবীর সকল অঞ্চলের ভৌগোলিj অবস্থান একরকম নয়। কেননা আবহাওয়া, জলবায়ু তথা অঞ্চলভেদে সমগ্র ভৌগোলিক অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যার প্রভাবে অঞ্চলভেদে মানুষের দৈহিক রূপ, প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে।

নৃগোষ্ঠীর ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

নৃগোষ্ঠীর ভৌগোলিক শ্রেণিবিভাগ: ১৯৫০ সালে নৃবিজ্ঞানী কুন, গার্ণ ও বার্ডগেল তাঁদের Race A Study of Race Formation in Man নামক গবেষণামূলক প্রবন্ধে নৃগোষ্ঠীর গঠন সম্পর্কে আলোচনাপূর্বক এর ভৌগোলিক শ্রেণিবিন্যাস প্রদান করেন। নিম্নে সংক্ষেপে নৃগোষ্ঠীর ভৌগোলিক শ্রেণিবিন্যাস উল্লেখ করা হলো-

১. ভারতীয় ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: এশিয়ার ভারতীয় উপমহাদেশে এ মানবগোষ্ঠীর সদস্যরা বসবাস করে। কিছু পরিমাণে অধিকতর কালো চামড়া ছাড়া বহু ভারতীয় দেখতে ইউরোপীয়দের মতো। তাদের অনুরূপ চুল ও দা্ড়ি এবং সাহস রয়েছে। যাই হোক, মঙ্গোলীয়দের মতো তাদের মধ্যে B শ্রেণির রক্ত বেশি মাত্রায় দেখতে পাওয়া যায়।

২. অস্ট্রেলীয় ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: প্রধানত অস্ট্রেলিয়া ও তাসমেনিয়ায় এ নৃগোষ্ঠী দেখতে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এ উভয় স্থান থেকে তারা প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। বড় বড় দাঁত, খুব লম্বা সংকীর্ণ খুলি ও কালো চামড়া তাদের বৈশিষ্ট্য। ইউরোপীয়দের মতো কিছু পরিমাণে হালকা ও লালচে চুলবিশিষ্ট অস্ট্রালয়েডও দেখতে পাওয়া যায়।

৩. আমেরিকান ইন্ডিয়ান ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: চুল, দাঁত এবং চোখের পাতার আকৃতির দিক থেকে আমেরিকার ইন্ডিয়ানরা যথেষ্ট স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলেও তারা মঙ্গোলীয়দের অনুরূপ। তাদের মধ্যে 'B' শ্রেণির রক্ত ঘুম কম দেখতে পাওয়া যায় এবং মনে হয় কলম্বাসের আবির্ভাবের আগে এ মহাদেশে B শ্রেণির রক্তবিশিষ্ট মানুষ একেবারেই ছিল না।

৪. পলিনেশিয়ান ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: দক্ষিণে তুবুয়ই দ্বীপপুঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে ইস্টার দ্বীপ পর্যন্ত সমগ্র মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপমালা পলিনেশিয়ার অন্তর্গত। বিশাল সাগরের জলরাশি পলিনেশিয়ার দ্বীপগুলোকে বিচ্ছিন্তা করায় এলিনেশীয় নৃগোষ্ঠীর আঞ্চলিক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। দৈহিক গঠন, উচ্চতা, চুলের আকৃতি, মুখমণ্ডলের গঠন, চামড়ার বং নাকের গঠন প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের জন্য পলিনেশীয়রা অন্যান্য নৃগোষ্ঠী থেকে স্বতন্ত্র। এদের দেহ লম্বা, হাড় বড় এবং মাথায় সচরাচর ঢেউ খেলানো চুল দেখতে পাওয়া যায়।

৫. মাইক্রোনেশীয় ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: পশ্চিম প্রশস্থ মহাসাগরে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে মাইক্রোনেশীয় অবস্থিত। অতীতে সংস্কৃতি ও মানবধারা উভয় দিক থেকে মাইক্রোনেশীয়দের প্রায়ই পলিনেশীয়দের সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু অধুনা অপেক্ষাকৃত কালো চামড়া, খর্ব আকৃতি এবং তরঙ্গায়িত, পেঁচানো এমনকি কুঞ্চিত চুলের জন্য তাদের আলাদা নৃগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিউজিল্যান্ডের মাউরি উপজাতি এ নৃগোষ্ঠীর অভাতি।

৬. মেলানেশীয় পাগুয়া ভৌগোলিক নৃগোষ্ঠী: মাইক্রোনেশিয়ার দক্ষিণে মেলানেশিয়া অবস্থিত। নিউজিল্যান্ড থেকে ফিজি পর্যন্ত তিন হাজার মাইল জুড়ে এ নৃগোষ্ঠীর বাসভূমি বিস্তৃত। আধুনিক কালের পূর্ব পর্যন্ত পৃথিবীর অন্যান্য স্থান থেকে আপেক্ষিকভাবে বিচ্ছিন্ন এ নরগোষ্ঠীর সদস্যদের চামড়া যথেষ্ট কালো, খুলি আদিম প্রকৃতির এবং চুল কুজিত থেকে তরঙ্গায়িত।

উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, নৃগোষ্ঠী হায় জনসংখ্যার সেই এক বিশেষ অংশ, যারা জৈবিক উত্তরাধিকার সূত্রে কতকগুলো নির্দিষ্ট দৈহিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে নৃগোষ্ঠীকে উপযুক্ত ছয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।

নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।

পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতির মানুষের বসবাস। কিন্তু বিজ্ঞানের বিচারে এরা সবাই একই গোষ্ঠীভুক্ত। নৃগোষ্ঠীর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের বংশানুসারে দৈহিক আকৃতিসহ জীবনের বিভিন্ন লক্ষণ শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া এর মাধ্যমে বিভিন্ন মানবজাতির সামাজিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাকেন্দ্রিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রতিভাত হয়। ফলে নৃগোষ্ঠী বা মানবগোষ্ঠী বয়ে আনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বতন্ত্র ইতিহাস ধারা।।

নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য: নৃগোষ্ঠীর সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি নিম্নরূপ-

১. নৃগোষ্ঠী মাত্রই মানবজাতির একটি উপবিভাগ।

২. ঐ উপবিভাগের সদস্যদের মধ্যে কতকগুলো সাধারন দেহিক বৈশিস্ট্য বিদ্যমান থাকে।

৩. সাধারণ দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং ঐ বৈশিষ্ট্যাবলি জৈবিক সূত্রে বংশধরদের মধ্যে বর্তিয়ে থাকে।

৪. নৃগোষ্ঠীগুলো একে অন্য থেকে ভিন্নতর।

৫. নৃগোষ্ঠী ইতিহাসের ঘটনাধারায় গড়ে ওঠা একটি জনসমষ্টি।

৬ এদের নিজেদের একই ভাষা ও এরা একই অঞ্চলে বসবাস করে।

৭. এরা এমন জনগোষ্ঠী, যারা যৌগোলিক কারণেও একটু পৃথক।

৮. একই নৃগোষ্ঠীর সবাইকে দেখতে একই রকম লাগে।

নৃগোষ্ঠী মানব প্রজাতির এমন এক দিককে বোঝায়, যার সদস্যবৃন্দ তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যা বংশ পরস্পরায় পেয়ে থাকে এবং নৃগোষ্ঠীসমূহের মাধ্য ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে।

No comments:

Post a Comment