সারণিবদ্ধকরণ কী? সারণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য, সুবিধা, প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা: পরিসংখ্যান গবেষণার কার্যে গৃহীত পরীক্ষণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে তথ্য সঙ্কাহ করা আর এ সংগৃহীত তথ্যসমূহকে যথার্থ রূপ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সারণিবদ্ধকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সারণিবদ্ধকরণের সাহায্যে অত্যন্ত সহজ ও সরল উপায়ে তালিকার মাধ্যমে উপস্থাপন করা সম্ভবপর হয়। সারণিবদ্ধকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সারণিবদ্ধকরণের সংজ্ঞা: শ্রেণিবদ্ধ তথ্যসমূহের একটি সুপরিকল্পিত এবং যুক্তিসঙ্গত উপায়ে এদের নিনিম্ন বৈশিষ্ট। অনুসারে। উপস্থাপন করার প্রক্রিয়াই হলো সারণিবদ্ধকরণ বা তথ্যসমূহের অন্ত নিহিত বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সারণি পরিসংখ্যানের সংখ্যাসূচক তথ্যসমূহকে সহজবোধ্য ও সুস্পষ্ট করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিকভাবে বিশ্লেষণে সহায়তা করে।
হ্যান্স রাজ বলেন, উপাত্তসমূহকে সংক্ষিপ্ত, নির্দিষ্ট এবং যৌক্তিক নিয়মে উপস্থাপন করাকে সারণিবদ্ধকরণ বলা হয়।
গুপ্ত এবং গুপ্ত এর মতে, পরিসংখ্যানিক তথ্যাবলিকে কলাম ও সারির মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপন করাকেই সারণিকরণ বা তালিকাকরণ বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, শ্রেণিবদ্ধকৃত তথ্যসমূহকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে উপস্থাপনের একটা প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি হলো abulation বা সারণিবদ্ধকরণ। যা তথ্য রাশির বিশ্লেষণের প্রক্রিয়াকে এহজ করে থাকে এবং গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সারণির প্রকারভেদ, কতপ্রকার ও কি কি
সারণির প্রকারভেদ: সারণি প্রধানত দু-প্রকার, যথা। ১. সরল সারণি, ২. জটিল সারণি। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো।
১. সরল সারণি: উপাত্তের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনের জন্য যে সারণি তৈরি করং হয় তাকে সরল সারণি বলে। এটি সারণির সবচেয়ে সরলত্তর রূপ। সরল সারণিকে একমুখী সারণি বলা হয়।
২. জটিল সারণি: দুই বা ততোধিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিন্যস্ত উপাত্তকে যে সারণিতে উপস্থাপন করা হয় তাকে জটিল সারণি বলে। এ ধরনের সারণি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জটিল সারণিকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা। দ্বিমুখী সারণি ও বহুমুখী সারণি। যেমন-
৩. দ্বিমুখী সারণি: দুটি বৈশিষ্টের ভিত্তিকে প্রস্তুতকৃত সারণিকে দ্বিমুখী সারণি বলে।
৪. বহুমুখী সারণি: তিন বা ততোধিক বৈশিঠোর ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত সারণিকে বহুমখী সারণি বলা হয়।
উপাত্তের সারণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্যসমূহ:-
নিম্নে সারণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্যসমূহ বর্ণনা করা হলো:-
১. সারণিবদ্ধকরণ জটিল উপাত্তসমূহকে সহজভাবে প্রকাশ করে।
২. সারণিবদ্ধকরণের ফলে উপাত্তের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারা অর্জন করা যায়।
৩. এর সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্তসমূহের মধ্যে তুলনাকরণ সহজ হয়।
৪. সারণিবদ্ধকরণের উপাত্তসমূহের বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে এবং সাহায্য করে থাকে।
৫. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্রের পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়তা করে।
৬. সংগৃহীত উপাত্তের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল ত্রুটি থাকলে সারণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।
৭. সারণিবন্ধকরণ উপাত্তের লৈখিক উপস্থাপনকে সহজ করে
৮. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করে। এতে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হয়।
৯. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তের গাণিতিক প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।
১০. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়।
সারণিবদ্ধকরণের সুবিধাসমূহ:-
বিভিন্ন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যে সারণিবদ্ধকরণ করা হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
১. জটিল উপাত্তকে বোধগম্য করে প্রকাশ করা যায়।
২. উপাত্তসমুহকে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়।
৩. উপাত্তকে সহজে বিশ্লেষণ করা যায়।
৪. ভুলত্রুটি দূর করা যায়।
৫. সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায়।
৬. উপাত্তকে সহজে লেখচিত্র বা নকশা তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
৭. স্বল্প পরিসরে অধিক উপাত্ত উপস্থাপন করা যায়।
৮. উপাত্তসমূহ পর্যালোচনা করে সহজে সিদ্ধান্তে পৌছানো যায়।
উপসংহার: অবশেষে বলা যায় যে, পরিসংখানের তথ্য গরণিবদ্ধকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনা। কেননা পরবর্তী সকল গবেষণা এর উপর নির্ভরশীল। এজন্য প্রতিনায় বেশ গুরুত্ব দিতে হবে।
সারণিবদ্ধকরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
সারণিবদ্ধকরণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা: পরিসংখ্যান শাস্ত্রে এমনকি প্রাত্যহিক জীবনে সারণিবদ্ধকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
১. সারণিবদ্ধকরণ জটিল উপাত্তসমূহকে সহজভাবে প্রকাশ করে।
২. সারণিবন্ধকরণ এর ফলে উপাত্তের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা যায় এবং বুঝতে সহজ হয়।
৩. এর সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্তসমূহের মধ্যে তুলনাকরণ সহজ হয়।
৪. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তসমূহের বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে এবং সঠিক ধারণা দিয়ে থাকে।
৫. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তের পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়তা করে।
৬. সংগৃহীত উপাত্তের মধ্যে কোনো প্রকার ভুলত্রুটি থাকলে সারণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।
৭. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তের লৈখিক উপস্থাপনকে সহজ করে কোলে।
৮. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করে। এতে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হয় এবং কম পরিশ্রম করতে হয়।
৯. সারণিবদ্ধকরণ উপাত্তের গাণিতিক প্রক্রিয়াকে সহজতর করে
১০ সারণিবদ্ধকরণ উপাত্ত থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সারণিবদ্ধকরণ পরিসংখ্যানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর মাধ্যমে তথ্যসমূহকে সহজ ও স্বল্প সময়ে উপস্থাপন করা সম্ভব। আধুনিক তথ্যবিশ্বে সংক্ষিপ্ত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবে এর বিকল্প নেই।