শ্রেণিবদ্ধকরণ কাকে বলে? শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রকারভেদ, উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য, সুবিধাসমূহ লিখ
ভূমিকা: কোনো উদ্দেশ্য সংগৃহীত উপাত্ত এলোমেলো অবস্থায় থাকে। তাই সংগৃহীত উপাত্তকে গবেষণার লক্ষ্য অনুযায়ী সাজানো হয়। উপাত্তকে শ্রেণিকবদ্ধরণের মাধ্যমে সংক্ষেপে উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। একে উপাত্তের সংক্ষিপ্তকরণ বা শ্রেণিবদ্ধকরণ বলা হয়।
শ্রেণিবদ্ধকরণ: উপাত্ত সংক্ষিপ্তকরণ ও উপস্থাপনের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে উপাত্ত শ্রেণিবদ্ধকরণ। এটি হলো একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে উপাত্তসমূহকে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গুচ্ছ বা শ্রেণিতে বিন্যাস বা সাজানো হয়। অর্থাৎ, গুণ, সময়, অবস্থান ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য অনুসারে উপাত্তগুলোকে সাজিয়ে লেখার পদ্ধতিকে শ্রেণিবদ্ধকরণ বলে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণার মতে শ্রেণিবদ্ধকরণ ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেমন- এস. কে. বাপুর বলেন- শ্রেণিবদ্ধকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার দ্বারা একক ও মানসমূহের সাদৃশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন গোষ্ঠী বা শ্রেণিতে সাজানো হয়।
এল, আর বান্নর এর মতে, শ্রেণিবদ্ধকরণ হলো উপাত্তকে পারস্পরিক সাদৃশ্য ও মিল অনুসারে বিভিন্ন দল বা শ্রেণিতে সাজানো প্রক্রিয়া।
পি. ভি. ইয়ং বিজ্ঞানীর মতে, উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণ হলো সময়, স্থান, সম্পর্ক এবং ঘটনা, মনোভাব ইত্যাদির ভিত্তিতে উপাত্তকে কতিপয় ভাগে ভাগ করা।
শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রকারভেদ আলোচনা কর
বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে সংগৃহীত উপাত্তগুলে এলেংমালো অবস্থায় থাকে। এলোমেলো উপারগুলোকে গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যায়। শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে উপারগুলোর সাজিয়ে প্রকাশ করা যায়। উপাত্তের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতির ভিন্নতার কারণে এই প্রকার শ্রেণিবদ্ধকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না।
শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রকারভেদ: শ্রেণিবদ্ধকরণ ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা: ১. সময়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ২. স্থানভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ, ৩. গুণভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ ৪. সংখ্যাভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ।
নিম্নে একটি শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সময়ভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ: সংগৃহীত উপাত্তকে যখন সময় অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে সাজানো হয় তখন তাকে সময়ভিত্তিক শ্রেণিবন্ধকরণ বলে। এক্ষেত্রে উপাত্তসমূহকে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর ইত্যাদির সাজানো হয়।
২. স্থানভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ: সংগৃহীত উপাত্তকে যখন কোনো স্থান বা ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে সাজানো হয় তাকে স্থানভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ বলে। এক্ষেত্রে, রাষ্ট্র, অকল নগর, থানা ইত্যাদি এলাকার ভিত্তিতে সাজানো হয়।
৩. গুণভিত্তিক শ্রেণিবন্ধকরণ: সংগৃহীত উপাত্তকে যখন কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সাজানো হয় তাকে গুণভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ বলে। এক্ষেত্রে বয়স, আয়, পেশা, লিঙ্গ, শিক্ষা ইত্যাদির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়।
৪. পরিমাপভিত্তিক শ্রেণিবদ্ধকরণ: সংগৃহীত উপাত্তকে যখন কোনো পরিমাপ বা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবন্ধকরণ করা হয় তখন তাকে পরিমাণ বা পরিমাপ ভিত্তিক বা সংখ্যাতাক শ্রেণিবদ্ধকরণ বলা হয়। এক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ, পাসের হার, আকার ইত্যাদির ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয়।
শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্যসমূহ কি কি?
সংগৃহীত তথ্যকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আলোকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনার প্রয়োজন হয়। কেননা সংগৃহীত উপাত্তগুলো অবিন্যস্ত বা এলোমেলো অবস্থায় থাকার কারণে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সম্ভব নয় বলে কোনো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা যায় না। তাই উপাত্তগুলো প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে | শ্রেণিবদ্ধকরণ করা হয় এবং উপাত্তগুলো সহজে বুঝা যায়।
শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য: নিম্নে শ্রেণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো:
১. একটা শ্রেণি সহজে ধারণা লাভ করা যায়।
২. একই শ্রেণির সকল বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৩. বিশাল উপাত্ত সারিকে সংক্ষিপ্তকরণে সহায়তা করে।
৪. পরবর্তী গবেষণার কাজকে সহজ করে তোলে।
৫. উপাত্তসমূহের স্বীয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। কারণ একই শ্রেণিতে একই উপাত্তের সংকলিত হয় এবং তথ্যগুলো খুবই সহজ হয়ে ওঠে।
৬. অন্য শ্রেণির উপাত্তের সাথে তুলনা করা যায়।
৭. এর মাধ্যমে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফুট ওঠে।
শ্রেণিবদ্ধকরণের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।
পরিসংখ্যানে প্রাথমিক অবস্থান সংগৃহীত উপাত্তগুলো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় উপাত্তগুলো থেকে কোনো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। তাই উপাত্তগুলোকে তাদের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধকরণ করা জরুরি হয়ে পড়ে
শ্রেণিবদ্ধকরণের বৈশিষ্ট্য: উপাত্তসমূহ শ্রেণিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হয় যেন প্রতিটি প্রয়োজনীয় উপাত্ত কোনো শ্রেণিতে ব্যবহৃত হয়। যেন কোনো উপাত্ত শ্রেণিবদ্ধকরণ থেকে বাদ না পড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। এতে করে সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কোনো শ্রেণির তথ্য যেন বাদ না পড়ে। অর্থাৎ, শ্রেণিবদ্ধকরণ যেন আংশিক না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। একই উপাত্ত যেন একাধিকবার ব্যবহৃত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া হবে সুস্পষ্ট নমনীয়, সুস্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য, নমনীয় শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করলে পরবর্তী যেকোনো গবেষণায় ব্যবহার উপযোগী করা যায়।
শ্রেণিবদ্ধকরণ করতে যেয়ে খেয়াল রাখতে হয় যেন কোনো তথ্য বাদ না পড়ে আবার একাধিকবার তথ্য যেন ব্যবহৃত না হয়। কেননা তাছাড়া গবেষণা কর্ম গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে এবং সুস্পষ্টভাবে কানো প্রকাশ করা যায় না।
শ্রেণিবদ্ধকরণের সুবিধা কী?
প্রাথমিক অবস্থায় উপাত্তগুলো অগোছালো অবস্থায় থাকে। এলোমেলো বা বিক্ষিপ্ত উপাত্ত থেকে কোনো ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা যায় না এবং তা থেকে কোনো কার্যকরী সিদ্ধান্তে পৌছানো যায় না। তাই সুষ্ঠুভাবে গবেষণা কার্যকে সম্পাদন করার জন্য উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণ নানামুখী সুবিধা দিয়ে থাকে এবং এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত।
শ্রেণিবদ্ধকরণের সুবিধা: নিম্নে শ্রেণিবন্ধকরণের সুবিধা বর্ণনা করা হলো।
১. সহজে উপাত্তকে বুঝা যায়।
২ . উপাত্তকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায়।
৩. সংগৃহীত উপাত্তের সারাংশকরণ সম্ভব হয়।
৪. উপাত্তের যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ সম্ভব হয়।
৫. তুলনামূলক চিত্র সহজেই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
৬. সংক্ষেপে উপাত্তসমূহের উপস্থাপন করা যায়।
৭. প্রয়োজনে অপ্রয়োজনীয় অংশ অপসারণ করা যায়।
সামাজিক বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কে তথ্যবলি সংগ্রহ করার সময় সেগুলো অগোছানো অবস্থা থাকে। তবে তথ্যগুলোকে শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে খুব সহজে কোনো বিষয়ে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।