রাজনৈতিক যোগাযোগ কী? রাজনৈতিক যোগাযোগের গুরুত্ব
ভূমিকা:- প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এই বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ, রাজনৈতিক যোগাযোগ, অর্থনৈতিক যোগাযোগ, বৈজ্ঞানিক যোগাযোগ ইত্যাদি। এ ধরনের সব যোগাযোগই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যোগাযোগ আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি হলো সে প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ব্যবস্থা। যোগাযোগ ছাড়া যেমন কোন প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না তেমনি যোগাযোগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তাই রাজনৈতিক দলের সুষ্ঠু কাজ করার জন্য রাজনৈতিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক যোগাযোগ
রাজনৈতিক যোগাযোগ এমন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যাতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন বিষয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অন্যভাবে বলা যায় যে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ, স্বার্থ জ্ঞাপন, স্বার্থ সমষ্টিকরণ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি কাজ রাজনৈতিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
রাজনৈতিক যোগাযোগের প্রামাণ্য সংজ্ঞা
বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক যোগাযোগের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
ডেভিড বেরলো বলেন ‘‘রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এমন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যাতে বিভিন্ন বিষয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকে।’’
কার্ল ডায়েশ্চের মতে ‘‘রাজনৈতিক যোগাযোগ হলো রাজনৈতিক বিচারে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি প্রেরণের একটি প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্তঃস্থ অংশ থেকে আর একটি অংশে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যভস্থার মধ্যে রাজনৈতিক তথ্যাদি প্রেরিত হয়ে থাকে।’’
লুসিয়ান ডব্লিউ পাই-এর মতে ‘‘সংযোগ সাধনের প্রবাহ গতিশীল সমাজের অগ্রগতির গতিপথ ও গতিকে নির্ধারণ করে।সংযোগ সাধনের ধারনার সাথে ব্যাপক সামাজিক আচরণ জড়িত। উচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সংবাদ প্রেরণের মধ্যেই সামর্থ্যের মানবিক সম্পর্কের মূল শক্তি নির্ভরশীল।’’
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক তথ্য ধারণা মতামত ও আবেগের পারস্পরিক আদান-প্রদানই হলো যোগাযোগ।
অস্টিন রেনির মতে ‘‘সংযোগ সাধন হলো অন্য বিষয়ের পরিবর্তন সাধনকারী প্রধান প্রতিনিধি। তার মাধ্যমে মানুষের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিক বিরোধের গতিশীল পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।’’
রাশ এবং অ্যালথপ- এর মতে ‘‘রাজনৈতিক যোগাযোগ বলতে বুঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিচারে প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি অংশ হতে অন্য একটি অংশে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমূহের মধ্যে প্রেরিত হয়।’’
অ্যালমন্ড বলেন ‘‘রাজনৈতিক যোগাযোগ হল সেই উপায় যা তথ্য সমাজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বিভিন্ন কাঠামোর মাধ্যমে যা এনপিকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা করে তোলে।’’
রাজনৈতিক যোগাযোগের গুরুত্ব:
রাজনৈতিক যোগাযোগ একটি রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি না থাকলে নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। রাজনৈতিক দল, সরকার, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের মধ্যে যোগাযোগ যত কার্যকর হবে, গণতন্ত্র তত বেশি শক্তিশালী হবে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জনমত সৃষ্টি, আন্দোলন গড়ে তোলা এবং নীতিনির্ধারণের জন্য রাজনৈতিক যোগাযোগ অপরিহার্য।
পরিশেষে বলা যায় যে রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি গতিশীল উপাদান হলো রাজনৈতিক যোগাযোগ । তাই রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রসারিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগাযোগের ভূমিকা অপরিসীম।

No comments:
Post a Comment