নগর পরিকল্পনা কী? নগর পরিকল্পনার প্রধান উপাদান ও প্রয়োজনীয়তা

নগর পরিকল্পনা: উপাদান এবং প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা:- পরিকল্পনা শব্দটি বহুল বিস্তৃত ও ব্যাপক অর্থবোধক। ব্যক্তি সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ব্যাপকতা লক্ষণীয়। পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে করা বা হওয়া কোনটাই সম্ভব নই। নগরে অল্প জায়গায় অধিক মানুষের বসবাস। নগরের এ স্বল্প এলাকায় সুস্থ ও সুন্দর যীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন নগর পরিকল্পনা।

নগর পরিকল্পনা কী? উপাদান ও প্রয়োজনীয়তা

নগর পরিকল্পনার সংজ্ঞা

নগর পরিকল্পনা বলতে সাধারণত নগর বা শহরের কাঠামোগত পরিকল্পনাকে বোঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে সকল পরিকল্পনার দ্বারা কোন শহর বা নগরকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠে তাকে নগর পরিকল্পনা বলে। উদাহরণস্বরুপ আমরা হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর কথা বলতে পারি যা পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন সভ্যতায় নগরের একটা নীল নকশা পূর্ব হতে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। এ নকশা অনুযায়ী নগরের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নির্ধারিত হয়। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নগর পরিকল্পনা একটি বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য নতুন পেশা হিসেবে গুরুত্ব পায়।

নগর পরিকল্পনা প্রামাণ্য সংজ্ঞা

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও নগরপরিকল্পনাবিদ তাদের দৃষ্টিকোণ হতে নগর পরিকল্পনাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

 J. C. Doubriere এর মতে ''নগর পরিকল্পনা প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টির সাথে সম্পর্কযুক্ত, যার ফলে সম্প্রদায় দৈহিক ও নৈতিক দিক দিয়ে সজীব, স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ জীবনযাপনে সক্ষম হয়।''

J. A. Henderson বলেন- ''নগরিক পরিকল্পনা হচ্ছে পরিবেশ সন্ধকীয় পলিসি, গৃহায়ন পরিকল্পনা, নগর বিন্যাস এবং জানবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টাকে বুঝানো হয়। এর মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশে কাঙ্খিত নাগরিক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করার চেষ্ঠা করা হয়।''

ড. জি. দাস বলেন ''Urban planing involves the creation of proper physical environment s as to enable a community to live a health, wholesome and safe life.''


নগর পরিকল্পনার প্রধান উপাদানসমূহ:

১. ভূখণ্ড ব্যবহারের পরিকল্পনা:

আবাসিক, বানিজ্যিক, শিল্প এলাকা ইত্যাদি নির্ধারণ ও যথাযথ ব্যবহার।

২. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা:

রাস্তা, ব্রিজ, গণপরিবহন ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

৩. জল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:

বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ড্রেনেজ, ময়লা অপসারণ ইত্যাদি।

৪. আবাসন ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা:

সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত ও ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ এর পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।

৫. খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থা:

খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থার জন্য পার্ক, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার প্রভৃতি স্থাপন।

৬. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো:

শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, কলেজ, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন।


নগর পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা:

  • দ্রুত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট সমস্যার মোকাবিলা
  • পরিবেশ দূষণ হ্রাস
  • বাসযোগ্য ও স্বাস্থ্যকর নগর গঠন
  • অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সহায়তা প্রদান
  • সামাজিক সেবা নিশ্চিতকরণ
  • দুর্যোগ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে নগরায়ন হলো নগর নকশা প্রকরণের প্রয়োগ। এটি নগরের যাবতীয় কাঠামোর এমন এক বিন্যাস যেখানে জীবন হয় সহজ ও সুখময়। অন্যভাবে বলা যায়, কোন নগর ্এলাকার বিদ্যমান অবস্থা থেকে ভবিষ্যতে কোন বঞ্চিত বা সুবিধাজনক অবস্থায় পৌছানোর সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা নির্ধারণকেই নাগরিক পরিকল্পনা বলে অভিহিত করা হয়। নগর পরিকল্পনার পশ্চাতে মৌলিক ধারণাটি হলো পরিকল্পনাবিদ যুক্তিসম্মত আকর্ষণ ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা ।

No comments:

Post a Comment