রাজনৈতিক সংস্কৃতি কী? উপাদান ও প্রকারভেদ
ভূমিকা:- রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য প্রত্যয়গুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় একটি বিষয় হলো রাজনীতি।বর্তমান সময়ে রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণাটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। কেননা কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হলে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন রাজনীতি ব্যবস্থাকে তুলনামূলকভাবে অলোচনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যবহার করা হয়।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি
রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণত সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিকরুপ। রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃতি ও স্বাতন্ত্র্যবোধের কারণে রাজনৈতিক কৃষ্টি সাধারণ কৃষ্টি হতে আলাদা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনীতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটির দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে কতিপয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝায়। এতএব, বলা যায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সাধারণ সংস্কৃতির সেই অংশ যা রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের বিশ্বাস, অনুভূতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান দান করে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রামাণ্য সংজ্ঞা
বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা দেওয়া হলো-
G. A. Alward তার Comparative Political System গ্রন্থে বলেন রাজনৈতিক সংস্কৃতি মূলত কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও এর বিভিন্ন অংশ এবং এতে ব্যক্তির আসল ভূমিকা সম্পর্কে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রকাশ করে।
অ্যালবন্ড ও ভার্বা- এর মতে একটি জাতির সদস্যগণের মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যাবলির মধ্যে যে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বিভাজন বিদ্যমান থাকে তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
Alan Ball- এর মতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সমস্যার সাথে জড়িত সামাজিক মনোভাব, বিশ্বাস, অনুভূতি, আবেগ এবং মূল্যোবোধের যার সমন্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠিত।
প্রফেসর সাইদ বলেন রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো জাতীয় বা সাধারণ সংস্কৃতির সেই অংশ যা সামগ্রিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যেবোধ, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গঠিত।
L. W. Pye এর মতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতকগুলো মানোভাব বিশ্বাস ও অনুভূতির সমন্বয়।রাজনৈতিক সংস্কৃতি যা কোনো রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সুশৃঙ্খল ও অর্থপূর্ণ করতে সাহায্য করে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার আনয়ন নিয়ন্ত্রমুখী অনুমানবিধি উপস্থিত করে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপাদানসমূহ:
১. রাজনৈতিক বিশ্বাস
২. নাগরিকদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
৩. কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের প্রতি মনোভাব
৪. রাজনৈতিক শিক্ষার মাত্রা
৫. সরকারের প্রতি আস্থা ও অনাস্থা
৬. রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা
রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ:
১. অধীন সংস্কৃতি (Parochial):
জনগণ রাজনীতিতে খুব কম আগ্রহ বা অংশগ্রহণ করে।
২. আন্তঃসম্পর্কিত সংস্কৃতি (Subject):
নাগরিকরা সরকার সম্পর্কে কিছু ধারণা রাখে কিন্তু সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে না।
৩. নাগরিক সংস্কৃতি (Participant):
জনগণ সচেতনভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং মত প্রকাশ করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে উপাদানগুলো কোনো রাজনীতি ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও অর্থপূর্ণ করে তাকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে। সুতরাং রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজ ও দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতি, সমাজের মানুষের বিশ্বাস অুভূতি এবং মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করে থাকে যা সমাজ ও দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও শাসনপ্রণালির ভিত্তি গড়ে তোলে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধরন যেমন গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক হতে পারে, তেমনি একনায়কতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশও তৈরি করতে পারে। ফলে একটি উন্নত ও সচেতন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা একটি সমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

No comments:
Post a Comment