ভদ্রবেশি অপরাধ কি? ভদ্রবেশি অপরাধের ধরন বৈশিষ্ট্য, শর্তসমূহ

ভদ্রবেশি অপরাধ কি?

ভূমিকাঃ- মানব আচরণের গতিশীল বিষয় হলো অপরাধ। সমাজবিজ্ঞানে অপরাধ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। মানুষ স্বভাবতই অপরাধপ্রবণ হয়ে থাকে। সমাজভেদে অপরাধ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সমাজে যতধরনের অপরাধ রয়েছে তার মধ্যে ভদ্রবেশি অপরাধ অন্যতম। সমাজে এক শ্রেণির লোক রয়েছে যারা প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত লোকেরা আইন পরিপন্থি যে কাজ করে তা ভদ্রবেশি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এ ধরনের অপরাধ সমাজবাসীর চোঁখে পড়ে না।অপরাধীরা নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও পোশাক খাটিয়ে অপরাধ করে। 

ভদ্রবেশি অপরাধ কি?


ভদ্রবেশি অপরাধঃ সমাজের উচ্চ আর্থ সামাজিক সদস্যরা নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ও পোশককে কাজে লাগিয়ে আইন পরিপন্থি যে কাজ করে তাই ভদ্রবেশি অপরাধ। ভদ্রবেশি অপরাধকে Upper World Crime ও বলা হয়।

Frank Hartung এর মতে ''ব্যবসা ক্ষেত্রে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্য এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা তার গোপন প্রতিনিধিদের দ্বারা সংঘঠিত বাণিজ্যিক অপরাধ।''

Criminologist sir Walther Reckless ভদ্রবেশি অপরাধ সম্পর্কে বলেন ''ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে তাদের অপরাধসমূহকে মূলত White colour crime বলে।''

Marshall Clinard এর মতে ''নিজেদের পেশার অসৎ ব্যবহার করে আইনকে ভঙ্গ করে এমন ব্যবসায়, পেশাদার শ্রেণি ও রাজনীতিবিদদের সংঘবদ্ধঅপরাধ হলো ভদ্রবেশি অপরাধ।''

Richard T Scharfer বলেন-''নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে কাজর লাগিয়ে বিত্তবান ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘোঠিত অপরাধই ভদ্রবেশি অপরাধ।''

পরিশেষে বলা যায় ভদ্রবেশি অপরাধ  সমাজের উচ্চ শ্রেণি কর্তৃক সংঘঠিত হয়। এ অপরাধটি অভিনব পদ্ধতিতে সংঘঠিত হয়।

ভদ্রবেশি অপরাধের ধরন ও উদাহরণ:

১. কর ফাঁকি দেওয়া

২. ঘুষ গ্রহণ বা প্রদান

৩. সরকারি অর্থ আত্মসাৎ

৪. ভুয়া তথ্য দিয়ে শেয়ার বাজারে প্রতারণা

৫. ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন

৬. ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি

৭. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার

৮. গোপন তথ্য ফাঁস

৯.  অর্থ পাচার বা মানি লন্ডারিং


ভদ্রবেশি অপরাধের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

১. গোপন ও সূক্ষ্মভাবে সংঘটিত হয়: সাধারণ মানুষ সহজে তা বুঝতে পারে না।

২. আইনের দুর্বল ব্যবহার: অপরাধীরা প্রভাবশালী হওয়ায় আইন তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কার্যকর হয় না।

৩. অভিনব ও কৌশলগত পদ্ধতি: এসব অপরাধ অনেক সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হয়।

৪. সমাজে মর্যাদাবান অবস্থান: অপরাধীরা সামাজিকভাবে সম্মানিত হওয়ায় সন্দেহও কম হয়।

৫. বড় পরিসরে প্রভাব ফেলে: এ ধরনের অপরাধ শুধু ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্র ও অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৬. নীতিহীন পেশাগত ব্যবহার: পেশাগত দায়িত্বের সুযোগ নিয়ে তারা অপরাধ করে।

৭. শাস্তি পাওয়া কঠিন: প্রমাণ জোগাড় করা কঠিন হওয়ায় অনেকে শাস্তি এড়াতে সক্ষম হয়।


অপরাধের শর্ত ও প্রকৃতিঃ নিম্নে অপরাধের কতিপয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

১। অপরাধ হতে হলে প্রয়োজনীয় একটি কাজ অথবা কোন বিশেষ কর্তব্য অবহেলা। কর্তব্য অবহেলাও একটি অপরাধের বৈশিষ্ট্য। উদাহারণস্বরুপ- কোনো ব্যাংকের নৈশ প্রহরির কর্তব্যে অবহেলায় ব্যাংকে চুরি হলে সেটা নৈশ প্রহরির অপরাধ এবং চুরি করা কাজটি চোরদের অপরাধ।

২। কর্তব্যে অবহেলা যে নিষিদ্ধ তা অপরাধ আইনে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। 

৩। অপরাধের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো অপরাধমূলক বৈশিষ্ট্য। অপরাধ হতে হলে কোন ব্যক্তির মধ্যে অপরাধ কার্যটি করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

৪। অপরাধী হতে হলে প্রথম এবং তৃতীয় শর্ত একই সাথে পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ অপরাধমূলক কাজ ও ঐ কাজটি সংঘঠিত করার উদ্দেশ্য এ দুটি বৈশিষ্ট্য অপরাধের জন্য একই সাথে বর্তমান থাকতে হবে।

৫। অপরাধ হতে হলে কাজটি শাস্তিযোগ্য হতে হবে এবং তা অবশ্যই আইনে উল্লেখ থাকতে হবে, তবেই তা অপরাধ বরে গণ্য হবে।

No comments:

Post a Comment