প্রতিবেদন লেখার প্রচলিত রীতি ও কাঠামো তুলে ধর।
অথবা, প্রতিবেদনের রীতি ও কাঠামো আলোচনা কর।
ভূমিকা: গবেষণা হলো কোন কিছু অনুসন্ধানের কাজ। এই গবেষণার কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে। আর এসকল উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো গবেষণা প্রতিবেদন। কোন গবেষণা কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রতিবেদন প্রধান ভূমিকা পালন করে।
কেননা, গবেষণা প্রতিবেদন একটি গবেষণা কাজের পরিপূর্ণতা নির্দেশ করে থাকে। একটি গবেষণার পরিপূর্ণ সফলতা ও ব্যর্থতা আসে একটি প্রতিবেদনের উপর। একটি প্রতিবেদন এর মাধ্যমে গবেষক একটি নতুন মডেল দাঁড় করাতে সক্ষম হন যার উপর সমাজের উপকৃত হওয়ার ব্যাপারটি নির্ভরশীল। তাই একটি গবেষণাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করার জন্য একটি সুষ্ঠু প্রতিবেদন এর প্রয়োজন হয়।
প্রতিবেদন লেখার প্রচলিত রীতি বা প্রকারভেদ
একটি প্রতিবেদন লিখতে গেলে বিভিন্ন ধরনের রীতি বা পদ্ধতি মেনে চলতে হয়। এ সম্পর্কে গুড ও হ্যাট কতগুলো রীতির কথা বলেছেন।
১. প্রথমে সমস্যা উপস্থাপন ও তাত্ত্বিক প্রস্তাবনার সম্পর্ক বর্ণনা;
২. গবেষণার নকশার বর্ণনা ও উপাত্ত সংগ্রহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা;
৩. গবেষণা নকশা বর্ণনা এবং ফলাফল উপস্থাপন করা;
৪. প্রকল্প ও ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা ও
৫. পরিশেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তাত্ত্বিক ভিত্তিক নির্দেশ করা;
সমাজ বিজ্ঞানী মার্গারেট স্ট্যাসি এর মতে একটি সামাজিক গবেষণার প্রতিবেদনে নিম্নলিখিত তথ্যাবলি থাকা উচিত যথা:-
১. গবেষণাটির উদ্দেশ্যাবলি।
২. কে বা কারা গবেষণাটি পরিচালনা করবে।
৩. গবেষণাটি কবে শুরু ও শেষ হয়।
৪. গবেষণাটির নমুনায়নের আকার ও নমুনায়ন পদ্ধতি।
৫. গবেষণা পরিচালক, সহকারী ও মাঠ কর্মীদের প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলি।
৬. উপাত্ত সংগ্রহের কলাকৌশল ও উপকরণাদি।
৭. গবেষণার ফলাফল।
৮. প্রকল্পের সাথে সংগতিপূর্ণ তল্যাবলি।
৯. প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে অনুরূপ অন্যান গবেষণার ফলাফলের সম্পর্ক ও
১০ গবেষণালব্ধ ফলাফলের তাত্ত্বিক ও প্রয়োগিক তাৎপর্য।
গবেষণা প্রতিবেদনের ধাপসমুহ: একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের ধাপ অতিক্রম করতে হয়। কেননা, গবেষণার কাজ শেষ করতে হয়। নিম্নে একটি গবেষণা প্রতিবেদন এর ধাপগুলো আলোচনা করা হলো।
একটি গবেষণা প্রতিবেদসের তিন অংশ রয়েছে (ক) প্রারম্ভিক অংশ। (খ) মূল অংশ ও (গ) নির্দেশিকা অংশ।
(ক) প্রারম্ভিক অংশ। প্রারম্ভিক আশকে ৪টি অংশে ভাগ
১. শিরোনাম: প্রতিবেদনের শিরোনাম, প্রতিবেদনের তারিখ শিরোনাম পৃষ্ঠায় সুন্দর করে সহজ সরল ভাষায় লিখতে হবে। প্রতিবেদনের নাম সংক্ষিপ্ত হবে এবং ইংরেজিতে লিখতে চাইলে বড় অক্ষরে লিখতে হবে।
২. গবেষণা ও প্রতিষ্ঠানের নাম: শিরোনামের নিচে গবেষকের নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা লিখতে হবে। কোন জার্নালে প্রকাশ করার সময় শুধু গবেষকের নাম উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু থিসিসের ক্ষেত্রে সে ডিগ্রির জন্য থিসিস লেখা হয়েছে সে ডিগ্রির নাম উল্লেখ করতে হবে এবং থিসিস জমা দেওয়ার সাল ও তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
৩. মুখবন্ধ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার: গবেষণাকার্য পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সহায়তা গ্রহণ করা হয়। থিসিকের জন্য মুখবন্ধ লিখতে হয় তবে ছোট আকারের কোন গবেষণার জন্য মুখ বন্ধ লিখাটা আবশ্যক নয়। গবেষক তার গবেষণা কার্য পরিচালনার জন্য এবং প্রতিবেদন লেখার জন্য যাদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার মুখবন্ধ ও কৃতজ্ঞতা অংশে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৪. সূচিপত্র: বড় আকারের গবেষণার প্রতিবেদন তৈরিতে সূচিপত্র লিখতে হয়। প্রতিবেদন কাজের কোন অংশে কোন বিষয় লিখতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূচিপত্রে লিখতে হয়।
(খ) মূল অংশ: এ অংশে ৫টি বিষয় থাকে।
১. ভূমিকা: ভূমিকাকে প্রতিবেদনের শুরুর অংশ বলা হয় প্রতিবেদনের ভূমিকাতে গবেষণা সমস্যা, প্রকল্প ও উদ্দেশ্যাবলি সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ থাকে। বর্তমান বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বে কোন গবেষণা হয়ে থাকলে তার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করা হয়।
২. গবেষণা পদ্ধতি: গবেষণার কাজ পরিকল্পনার জন্য পদ্ধতি নির্বাচন প্রয়োজন। গবেষণা কাজে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বর্ণণা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে থাকে:-
(i) নমুনা: যে কোন গবেষণার জন্য নমুনা একটি অপরিহার বিষয়। এখানে কোন পদ্ধতিতে নমুনায় করা হবে তা উল্লেখ থাকে।
(ii) উপাত্ত সংগ্রহের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি: কিভাবে উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে এবং এর জন্য কি কি বিষয় প্রয়োজন হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
(iii) গবেষণা নকশা ও প্রক্রিয়া: আলোচ্য অংশ গবেষণা পরবর্তী কয়েকটি ধাপ। যেমন: তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি, গবেষণার স্থান, সময় এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে নির্দেশনা থাকে।
৩. ফলাফল: গবেষণা প্রতিবেদনের একটি বিশেষ পর্যায় এটি। এখানে গবেষণার ফলাফল ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য উল্লেখ করা হয়। এখানে গবেষণার সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবরণ বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা মতামত প্রক্রিয়া, মন্তব্য ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হয়।
৪. আলোচনা ও সুপারিশ: এ পর্যায়ে উক্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। যাতে গবেষণার অন্যান্য বিষয়ের সায়ে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা সহজ হয় এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা হয়।
৫. সারাংশ: গবেষণার শেষ অংশে সারাংশ উল্লেখ করয়ে হয়। এখানে গবেষণার সংক্ষিপ্ত সারাংশ উল্লেখ থাকে। এটী প্রতিবেদনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে গবেষণার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হয়।
(গ) নির্দেশিকা অংশ: এ অংশে ২টি অংশ থাকে
১. প্রারম্ভিক গ্রন্থপঞ্জি: গবেষক গবেষণার জন্য যে ধরনের সহায়ক গ্রন্থ জার্নাল পুস্তক, প্রভৃতি অনুসরণ করেছেন এখানে এগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী গ্রন্থপঞ্জিগুলো উল্লেখ করা হয়।
২. পরিশিষ্ট: গবেষণা যেসব তথ্য প্রমাণ এবং উপকরণ প্রতিবেদনের মূল অংশে সংযোজন করা সম্ভব হয় না সেগুলো এখানে সংযোজন করা হয়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বল। যার যে, একটি গবেষণা প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে উল্লিখিত রীতিও কাঠামো গুলো অপরিহার্য। কেননা, গবেষণা প্রতিবেদন লিখন সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর অভিমত থেকে প্রতীয়মান হয় যে প্রতিবেদনে গবেষণার ফলাফলের সাথে সংগতিপূর্ণ এ সংগতিবিহীন তথ্যাবলি এবং গবেষণাটির ইতিবাচক ও নেতিবাচন বর্ণনা ও ব্যাখ্যা থাকা উচিত। সর্বোপরি বলাতে পারি যে, যে কোন গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে উল্লিখিত রীতি বা পদ্ধতি এবং কাঠামোগুলো অপরিহার্য এতে কোন সন্দেহ নেই।