সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধরনসমূহ আলোচনা কর
ভূমিকা: নৃবিজ্ঞানের আলোচনার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। একটি দেশের মূল ভূখণ্ডে বসাবসকারী মানুষের চেয়ে কিছুটা অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষেরা নেশন বা জাতির বিপরীতে ব্যবহৃত হয়।
Minority সম্পর্কে Encyclopedis at Britannica এ বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুর ধরন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মূলত মানদণ্ডের ভিত্তিতে চার ধরনের হয়ে থাকে। যথা- নৃগোষ্ঠী, ধর্ম, জেন্ডার, এথনিসিটি।
জেন্ডার ও সেক্সভিত্তিক সংখ্যালঘু: বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সমীরে অমর সংখ্যা প্রায় সমান হলেও নারীরা পিতৃতান্ত্রিক মর্যাদা বনে জন মর্যাদা লাভ করে, যাতে নারীরানীগণ সংখ্যালপুর আখ্যায়িত করেছেন। পশ্চিমা বিশ্বে উনিশ শতক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। এই সম্প্রদায়সমূহ সেজুয়াল বহুমাত্রিকতার প্রতীক।
ধর্মীয় সংখ্যালঘু: সমাজের বেশিরভাগ বিশ্বাসের চেয়ে ভিন্ন কোনো সময়ত ভাগ মানুষের ধর্মীয় পৃথিবীর সকল দেশেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু রয়েছে। আধুনিক বিশ্বে এটা মনে করা হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। এমনকি কোনো ধর্মে বিশ্বাস না করারও অধিকার রয়েছে।
বয়সভেদে সংখ্যালঘু: বয়োবৃদ্ধাগণ অর্থনৈতিকভাবে অনুৎপাদনশীল বলে বর্তমানে ক্ষমতার অভাবে সংখ্যালঘু। যদিও পূর্বে সমাজে তারাই নেতৃত্ব দিত। শিশুরাও সমাজে প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা নির্যাতিত হয় বলে তারাও সংখ্যালঘু। বয়সভেদে এই বৈষম্যকে এজিসম ও বলা হয়।
প্রতিবন্ধী সংখ্যালঘু: প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলন অক্ষম জনসমাজকে ক্ষমতার দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যালঘু বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে, মূলত সুযোগের অভাবে তারা বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তাদের মতে, স্বাভাবিক মানুষের সাথে প্রতিবন্ধীদের পার্থক্য মূলত দৈহিক ও মানসিক, উর্ধ্বতন অধস্তনতার নয়।
রাজনৈতিক সংখ্যালঘু: রাজনৈতিক সংখ্যালঘু হলো কোনো সমাজের বিদ্যমান রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের আলোকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিস্ট পার্টি। যদিও অনেকের মকে তুলনামুলকভাবে কর জনসমর্থন প্রাপ্ত হাজনৈতিক দল বা মতাদর্শ। কমিউনিস্ট পার্টি শোষণ বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে তৎপর।
এথনিক গ্রুপ: এথনিক গ্রুপ হচ্ছে এমন কিছু জনসংখ্যার সমষ্টি যার সদস্যরা একে অপরের সাথে অভিন্ন কোন কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের কারনে পরিচিত।এই ঐতিহ্য হতে পারে আন্তরিক বা কাল্পনিক। তবে যাই হোক না কেন এথনিক গ্রুপের মূল বৈশিষ্ট্য সংস্কৃতি। Ethnicity ও ethnic group এই দুটি পরিভাষা এসেছে মূলত গ্রিক শব্দ ethnos হতে। এখনিক গ্রপের থাকতে পারে অভিন্ন নৃগোষ্ঠী ধর্মীয় এবং আধাগত বৈশিষ্ট্য। সাধারণত বৃহত্তর সামাজিক কিংবা জাতীয় ব্যবস্থার আওতায় ভিন্ন কোনো দল কিংবা নৃগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত এথেনিক গ্রুপকে ঐ এলাকার সংখালঘু বলা হতো।
বহুত্ববাদী সংখ্যালঘু: যখন কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৃহত্তর সমাজে অভিবাসন গড়ে তোলে তখন যদি নিজেদের সাংস্কৃতিক ধারাকে রক্ষা করে নতুন সাংস্কৃতিক পরিবেশে আপ খাওয়াতে চেষ্টা করে তখন তাকে রজতবাদী বোঝানো হয়। যখন কোনো চেষ্টা করে তার মাধ্যে বসবাসরত ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বা দল নিজেদের বাড়তি ও মূল্যবোধকে ধারণ করার পাশাপাশি বৃহত্তর সমাজের আইন ও মূল্যবোধকে গ্রহণ করার প্রয়াস থাকে, তখন তাকে বহুত্ববাদী বলে। বহুত্ববাদী ধারণাটি বহু সাংস্কৃতিকতাবাদ থেকে ভিন্ন। কারণ বহ সাংস্কৃতিকতাবাসে এ সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃতির ধারণাটি অনুপস্থিত। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃতি দুর্বল হয়ে পড়লে বহুত্ববাদী খুব সহজেই বহু সাংস্কৃতিকতাবাদের রূপান্তরিত হতে পারে।
স্বেচ্ছায় পৃথক সংখ্যালঘু: Secession শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Secessio থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বৃহত্তর কোনো সম্প্রদায় থেকে প্রত্যাহার। বিশেষ করে কোনো গোষ্ঠী যখন রাজনৈতিক সত্তা অথবা সংগঠন অথবা ইউনিয়ন অথবা সামরিক জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে। মূলত সীমিত কোনো উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হয়। সাধারণত কোনো কারণে অপসারণ বা প্রত্যাহারকে কোনো কোনো তাত্ত্বিক জোর দিলেও, কারো কারো মতে, অন্যায়ের প্রতিকারের জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। যখন কোনো সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্তৃক সংখ্যালঘু নির্যাতন, দমন কিংবা বন্ধঞ্চনার ঘটনা ঘটে তখন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ঐ সমাজ থেকে নিজেদের অপসরণ বা প্রত্যাহার করে থাকে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিশ্বাস, আচরণ, শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পৃথক হলেও এক সময় তারা মূলধারার সমাজে ধাবিত হয়। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়।

No comments:
Post a Comment