সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কারা? সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কারা? সংখ্যালঘু শ্রেণীর বৈশিষ্ট্য লিখ

ভূমিকা: নৃবিজ্ঞানের আলোচনার মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। একটি দেশের মূল ভূখন্ডে বসবাসকারী মানুষের চেয়ে কিছুটা অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কারা? সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য


সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: একটি বৃহত্তর সমাজে যখন কোনো অন্য বৈশিষ্ট্যের বা অন্য সংস্কৃতিমনা লোকেরা বসবাস শুরু করে তখন তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলা হয়ে থাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা Minority group কে Ethnic Minonty group হিসেবেও দেখা হয়।

Oxford English Dictionary অনুযায়ী "এখনিক মাইনোরিটি বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলতে সাধারণত ঐ জনগোষ্ঠীকেই বোঝানো হয়, যারা সংস্কৃতিক পরিচয় এবং নৃগোষ্ঠীগত উৎসের কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে ভিন্ন। তারা সরকারিভাবে নিজেদের দলীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে।"

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী এফ, জে. ব্রাউন বলেন, "কোনো বৃহৎ সমাজ বা দেশে বসবাসরত এমন জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলা হয়, যারা দেশের আর্থসামাজিক দিক থেকে প্রভাবশালী বৃহৎ জনগোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শাসিত।"

Minority সম্পর্কে Encyclopedia at Britannica-তে বলা হয়েছে, "Minority, a culturally, ethnically, or racially distinct poup that coexists with but is subordinate of a more dominant group"


সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৃহত্তর সমাজের একটি অংশ। মূল জনগোষ্ঠী থেকে এরা আলাদা। এদের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্টা, স্বতন্ত্র দৈহিক গঠন ও সংস্কৃতি। এসের নির্ধারণ করা হয় মূলত সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টোর আলোকে। পূর্বপুরুষ ও সাংস্কৃতিকভাবেই এরা পরিচিত বেশি।

সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ


পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই কমবেশি সংখ্যালঘুর বসবাস রয়েছে। সংখ্যালঘু গোষ্ঠীয় কোনো সর্বজনীন স্বীকৃতি, নেই। অর্থাৎ, একদেশে যারা সংখ্যালঘু অন্যদেশে তারাই আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায়
সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অবস্থান বিশ্লেষণ করে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

১। জনসংখ্যা স্বল্পতা: সাধারণত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ সংখ্যায় কম। কারণ সংখ্যালঘুকে জনসংখ্যার অনুপাতে বিবেচনা কর। এরা বৃহৎ বা প্রভাবশালী জনগোষ্ঠীর হারা সংখ্যালঘু বলে বিবেচিত হয়।

২। সামাজিক দুরত্ব: সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সাথে সামাজিক সুরত্ব বজায় রাখে। ফলে একে অপরের প্রতি অনেক সময় অবিশ্বাস মনোভাব পোষণ করে।

৩। স্বার্থ উপেক্ষিত: সংখ্যলঘু গোষ্ঠীর স্বার্থ সবসময় রক্ষিত হয় না।

৪।  সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মনে করা: সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সকল সুবিধা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ন্যায় পেয়ে থাকলেও নিজেদের অবহেলিত, নিকৃষ্ট বা হেয়প্রতিপন্ন মনে করে।

৫।  আর্থসামাজিক মর্যাদা: সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠীর অনেকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর তুলনায় নিজেদের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে উৎকৃষ্ট মনে করে। আর এর বিপরীত অর্থাৎ সংখ্যালঘুরাও নিজেদের অন্যদের তুলনায় উৎকৃষ্ট মনে  করতে পারে।

৬. ভৌগোলিক অবস্থান: সংখ্যালঘুর ধারণাটি কোনো একটি নিদিষ্ট দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, একদেশে যারা সংখ্যালঘু অন্যদেশে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইউরোপের শ্বেতকায় নরগোষ্ঠীর লোক কৃষ্ণকায় ও মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠীর দেশে সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করে। এসব দেশে শ্বেতকায় সংখ্যালঘুরা নিজেদেরকে উৎকৃষ্ট নরগোষ্ঠী ও উৎকৃষ্ট সংস্কৃতির অধিকারী বলে দাবি করে।

৭। সংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য: সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, পোশাক, ভাষা, আচার-অনুষ্ঠান ও জীবনধারা, যা মূলধারার সংস্কৃতি থেকে আলাদা।

৮। আইনি স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দাবি: অনেক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের কাছে আইনি স্বীকৃতি দাবি করে এবং সংরক্ষিত অধিকার চায়।

৯। অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা: সংখ্যালঘু গোষ্ঠী চায় তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হোক, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুক এবং সমান মর্যাদা পায়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিজেদের উৎকৃষ্ট ভাবার বা সংখ্যালঘিষ্ঠদের করুণা সেখ্যবার কোনো কারণ সেই। অপরপক্ষে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর নিজেদের হেয় বা নিকৃষ্ট ভাবার কোনো যুক্তি নেই। রাষ্ট্রীয় ঐক্যের স্বার্থে সব গোষ্ঠীর জন্য। সমান সুযোগ-সুবিধার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই সংখ্যালঘু ধারণা লোপ পাবে।

No comments:

Post a Comment