সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।

সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও কর্তব্য আলোচনা কর।

ভূমিকা: পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রে একই সাথে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করে থাকে। এ সবল সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা কম থাকে আবার কোনো সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকে। একটি দেশের অভ্যন্তরে তুলনামূলক কম লোকসংখ্যা, সম্প্রদায়কে Minority বা সংখ্যালঘু হিসেবে অভিহিত করা হয়। এখানে সম্প্রদায় বলতে বিভিন্ন পেশা, ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বয়স প্রভৃতিভিত্তিক সম্প্রদায় হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গীয় সম্প্রদায় বেশ আলোচিত বিষয়।

সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালাগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।

সংখ্যালঘুদের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালা: সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। আর এসব পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটেই প্রণয়ন করতে হয় সংখ্যালঘুদের জন্য বিভিন্ন নীতি। এ নীতিগুলো হলো-

১. সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা: মূলত একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে একে অপরের সান্নিধ্যে আসা বাঞ্ছনীয়। কেউ ক্ষমতাশালী আবার কেউ ক্ষমতাহীন এ মানসিকতা দূর করতে হবে। সংখ্যায় কম হওয়ায় সংখ্যালঘুকে কোনোক্রমেই অবহেলা করা চলবে না। বাস্তবতার নিরিখে সংখ্যালঘুকেও সামনে আসার সুযোগ দিতে হবে। হেয়প্রতিপন্ন সমতা আনলো করার মনোভাব দূর করায় গোষ্ঠীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

২. কর্মক্ষেত্রে সুযোগ দান: প্রায় সব মানুষই চায় তার যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত পেশায় কাজ করতে। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদে বহাল কনরা হয় না * একটাই মাত্র কারণে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। এ সকল হীনম্মন্যতার হাত থেকে এ সম্প্রদায়কে বাঁচাতে হবে।

৩. শিক্ষার সুযোগ: শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জাতিকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্র শিক্ষাবিস্তার সংক্রান্ত বহুবিধ কাজ করে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনোক্রমেই শিক্ষালাভথেকে বঞ্চিত করা যাবে না। শিক্ষাসংক্রান্ত সকল কাজে সংখ্যালঘুদের সমানাধিকার দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।

৪. জীবনযাপনের নিরাপত্তা দান: কেবল সংখ্যালঘু হবার কারণেই জীবনে চলার পথে পদে পদে উপেক্ষিত হতে হয়। দুর্বলের প্রতি সবলের হামলা কখনো থেমে থাকে নি। ক্ষমতাধরদের হামলায় অনেক সময় জীবন নিতে হচ্ছে নিরীহ সংখ্যালঘুদেরকে। রাষ্ট্রের সহযোগিতায় সংখ্যালঘুদের জীবনযাপনে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব।

৫. সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা: বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও নিপীড়ন চলমান অবস্থায় আছে। গণতন্ত্রের জন্য, যারা ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেদেরকে প্রকাশ করে তারা জোনো না কোনোভাবে সংখ্যালঘুদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠের সন্ত্রাসী হামলা কোনো দিন থেমে থাকে নি। তাই প্রয়োজন সন্ত্রাসীদের কবলে থেকে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা।

৬. সম্পদের সংরক্ষণ: আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্র সকলের সম্পদ রক্ষা করে। সংখ্যালঘুরা যেহেতু কম ক্ষমতার অধিকারী তাই দেখা যায় ক্ষমতাধরদের আগমনে তাদের ভিটেমাটি সব হারিয়ে ফেলে। আবার অনেক সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষমতাধররা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে থাকে। সংখ্যালঘুরা যাতে তাদের সম্পদ নিয়ে শাড়িতে বাস করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৭. জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ: মূলত জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য রাষ্ট্র হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে। অন্যান্য নাগরিকের মতো সংখ্যালঘুরাও যেন স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সজাগ সৃষ্টি রাখতে হবে।

৮. বৈষম্যমূলক আচরণ ত্যাগ করা: ক্ষমতায় দুর্বলতার কারণে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীরা চায় সংখ্যালঘুদেরকে পশ্চাতে ফেলে রাখতে। ক্ষমতার বৈষম্যই উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। একদিকে ক্ষমতার বাহাদুরি, অপরদিকে ক্ষমতাহীনদের মাথানত করে রাখার প্রবণতা পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি করে। ক্ষমতাবানরা দুর্বলের প্রতি সহনশীল না হলে বৈষম্যের দূরত্ব বাড়তেই থাকবে। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এ বৈষমোর দূতত্ব কআনো সম্ভব নয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠের দল সবসময়ই চায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংখ্যালঘুদেরকে সুযোগ। সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখতে। প্রভাবশালী গোষ্ঠী সবসময়ই সংখ্যালঘুদেরকে আলাদা করে রাখতে চায়।


No comments:

Post a Comment