CEDAW কী? সিডও সনদে নারী-পুরুষ সমতাসম্পর্কিত ধারণা

CEDAW কী? সিডও সনদে নারী-পুরুষ সমতাসম্পর্কিত ধারণা

CEDAW কী? সিডও সনদে আলোচিত নারী-পুরুষের সমতাসম্পর্কিত ধারণা

ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার রক্ষা ও বৈষম্য দূর করা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার ইস্যু। লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য রোধে এবং নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয় CEDAW সনদ, যা নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

CEDAW কী?

CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) বা “নারীদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলুপ্তি সনদ” হলো একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে গৃহীত হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ থেকে কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ এই সনদে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষর করে

CEDAW সনদের ধারাসমূহ:

CEDAW সনদে মোট ৩০টি ধারা রয়েছে।এই ধারা গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

ক) ১-১৬ নং ধারা নারী পুরুষ সমতা সম্পর্কিত

খ) ১৭-২২ নং ধারা CEDAW কর্মপন্থা ও দায়িত্ব বিষয়ক

গ) ২৩-৩০ নং ধারা CEDAW প্রশাসন সম্পর্কিত

CEDAW সনদে নারী পুরুষ সম্পর্কিত ধারণাসমূহ-

১। নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ

 ‍সিডও সনদ অনুযায়ী রাষ্ট্রসমূহকে ক্ষমতারর ভিত্তিতে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নারী যেন পুরুষের মতোই শিক্ষা, কাজ, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি, ভোটাধিকারসহ সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার পায়।

২। নারী পাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ

নারী পাচার, পতিতাবৃত্তি ও যৌন শোষণ প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার

CEDAW সনদ অনুযায়ী শিক্ষাক্ষেরে ন্যয় কর্মক্ষেত্রে সকল প্রকার  চাকরি, বেতন, ছুটি ও মাতৃত্বকালীন সুবিধায় নারী ও পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

৪। নারীর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টির অধিকার

পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে নারীর মতামতের গুরুত্ব নিশ্চিতের পাশাপাশি নারী যেন প্রজনন স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থায় যত্ন ও পুষ্টি সেবা পায় — সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সিডও সনদে।

৫। নারী ও তার সন্তানের জাতীয়তা

সিডও সনদ রাষ্ট্রসমূহের জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন বজায় রাখার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অধিকার নিশ্চিতকরণ একটি প্রতিফলন। নারী যেন তার জাতীয়তা বজায় রাখতে পারে এবং তার সন্তানকে জাতীয়তা দিতে পারে — এ অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।

৬। রাষ্ট্রসমূহের সংবিধান ও আইনসমূহে সমতার নীতি

যেসব রাষ্ট্র এই সনদে স্বাক্ষর করবে, তাদের সংবিধান ও আইন সমতার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য দূর করার পামাপাশি নারী পুরুষের সমতা অনুসরণে বদ্ধপরিকর থাকবে।

৭। সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে নারীর অংশগ্রহণ ব্যবস্থা

রাষ্ট্রের সব ধরনের নির্বাচনে নারী যেন নির্বাচন করতে ও ভোট দিতে পারে, সরকারি পদে নিয়োগ পায় — তা নিশ্চিত করতে হবে।

৮। নারীর নাগরিক ও আইনগত অধিকার

CEDAW সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসমূহ আইনের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের অধিকারের পাশাপাশি নারীর চলাফেরা, বসবাস, সম্পত্তি, মামলা পরিচালনার অধিকারসহ আইনগত অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে।

৯। বিবাহ অথবা মাতৃজনিত নারীর প্রতি বৈষম্য দূর

বিবাহ বা মাতৃত্ব কারণে নারীর প্রতি হওয়া বৈষম্য দূর করা সহ বৈবাহিক কারণে চাকরী হতে বরখাস্ত বিয়ে, সন্তান গ্রহণ, বিবাহ বিচ্ছেদসহ পারিবারিক বিষয়ে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

১০। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রথার ইতিবাচক পরিবর্তন

সিডও সনদ অনুসারে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যমূলক কুসংস্কার, লিঙ্গভিত্তিক শ্রবিভাজন প্রথা ও সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।

১১। শিক্ষাক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার

রাষ্ট্রসমূহ গ্রাম হতে শহর সর্বত্র শিক্ষায় প্রবেশ, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, বৃত্তি প্রাপ্তি — সব ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

CEDAW সনদ অনুযায়ী, নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা মানে কেবল সমান সুযোগ নয়, বরং সমান মর্যাদা, দায়িত্ব ও সুবিধা নিশ্চিত করা।
এটি নিশ্চিত করে যে, নারী কোনোভাবেই সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে না পড়ে।
সমতা অর্জনের জন্য রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার, নীতি গ্রহণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

উপসংহার:

CEDAW সনদ নারীর সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি বৈশ্বিকভাবে একটি শক্তিশালী দলিল। এ সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব।এখন সময়, রাষ্ট্র ও সমাজ সবাই মিলে CEDAW-এর আদর্শ বাস্তবে কার্যকর করার।

১. CEDAW কী?
CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) হলো জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত একটি আন্তর্জাতিক সনদ যা নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরনের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে।
২. CEDAW কবে গৃহীত হয়?
CEDAW সনদটি জাতিসংঘে গৃহীত হয় ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে এবং কার্যকর হয় ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সালে।
৩. বাংলাদেশ কবে CEDAW স্বাক্ষর করে?
বাংলাদেশ ৬ নভেম্বর ১৯৮৪ সালে CEDAW সনদে স্বাক্ষর করে এবং এটি কার্যকর করে।
৪. CEDAW সনদের মূল উদ্দেশ্য কী?
নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর করা, এবং নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৫. CEDAW-এর কতটি ধারা রয়েছে?
CEDAW সনদে মোট ৩০টি ধারা রয়েছে, যা নারীর বিভিন্ন অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করে।
৬. CEDAW-এর কোন ধারায় বাংলাদেশ সংরক্ষণ রেখেছে?
বাংলাদেশ ধারা ২ (আইনগত সংস্কার) ও ধারা ১৬ (পারিবারিক অধিকার) আংশিকভাবে সংরক্ষণ করেছে।
৭. CEDAW নারীর কোন অধিকার নিশ্চিত করে?
CEDAW সনদ নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, পরিবার, সম্পত্তি, এবং নাগরিক অধিকারসহ সবক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করে।
৮. CEDAW বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কী?
রাষ্ট্রকে আইন সংস্কার, নীতি প্রণয়ন, বৈষম্য রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চার বছর অন্তর জাতিসংঘে রিপোর্ট জমা দিতে হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post