শ্রম বিভাজন ও জেন্ডার বৈষম্যকরণের সম্পর্ক
ভূমিকাঃ মানবজাতি দুটি ভাগে বিভক্ত। তার এক অংশ হচ্ছে পুরুষ ও অপর অংশ হচ্ছে নারী।জেন্ডার ভূমিকা নারী-পুরুষের প্রতি সামাজিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। যেটা সাপেক্ষ, যেটা যথোপযুক্ত ভাবে নারী পুরুষের আচরণ কার্যাবলী কে তুলে ধরে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আমরা কঠোরতা বলতে ম্যাসকুলিন বা পুরুষকে বুঝি আবার কোমলতা বলতে নারীর ভূমিকা কি বুঝি। অর্থাৎ জেন্ডার ভুমিকা হল নারীত্ব ও পুরুষত্বের সামাজিক প্রকাশ।
শ্রমবিভাজন ও জেন্ডার বৈষম্যকরণ- নিম্ন শ্রম বিভাজনের সাথে জেন্ডার বৈষম্যকরণের কিছু উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক তুলে ধরা হলো।
১। শ্রম ও কর্মকর্তাঃ আধুনিককালে বিভিন্ন দেশের নারীগণ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ও কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে গার্মেন্টস শিল্পে নারীদের একাধিপত্য রয়েছে। এ শিল্পে তারা শ্রমিক হিসেবে ব্যাপকভাবে কাজ করে। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় তারা অনেক কম বেতন পায় এমনকি অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীকে পদন্নোতি দেওয়া হয় এটা জেন্ডার বৈষম্যর ফল।
২। বিমানের পাইলটঃ আধুনিক কলেজ জেন্ডার বৈষম্য বাঁধা থাকলেও অনেক নারী বিমানের পাইলট হিসেবে কাজ করে। তবে সেখানে তাদের উপস্থিতি অত্যন্ত সীমিত। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের এ সংখ্যা বেশি সংখ্যক দেখা যায়। অনেক দেশে এ পেশায় নারীর উপস্থিতি সরব নয়। এটা জেন্ডারের বাধা অতিক্রমণের দৃষ্টান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের সংখ্যা ২০০৩ সালে ছিল ৫% এবং তাদের সম্মানও কম ছিল।
৩। আর্কিটেক্টঃ আধুনিক রাষ্ট্রে অনেক নারী এখন আর্কিটেক্ট পেশা গ্রহণ করছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদের সংখ্যা বেশি। ইউরোপেও অনেকে এ পেশা গ্রহণ করছে। তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে তাদের সংখ্যা কম এবং তাদের সুনামও কম। এর কারণ দেশের জনগণ সনাতন বিশ্বাস ও পুরাতন ধ্যান-ধারণা আকড়ে আছে। ফলে নারী এসব দেশে জেন্ডার বৈষম্যর শিকার হচ্ছে।
৪। ডেনটিস্টঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী ডেন্টিস্ট বা দাঁতের ডাক্তারের সংখ্যা কম নয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সংখ্যা গড়ে ২৪ জন। তবে বাংলাদেশের বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ স্থাপনের জন্য ডেন্টিষ্ট এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তাদের বেতন, প্রসার, সুনাম যথেষ্ট নয়। নারীর dentist হওয়ায় বাধা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। দিন দিন তাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে বলে আশা করা যায়।
৫। আইনজীবীঃ আইনজীবী পেশা অনেক নারীকে আকৃষ্ট করছে। ফলে তারা বিভিন্ন দেশে আইনজীবী, অ্যার্টনি বা ব্যরিস্টার হিসেবে কাজ করছে। এ পেশাকে এখন আর কেবল পুরুষের পেশ হিসেবে গণ্য করা হয় না। নারীরা ব্যপকহারে নিজেদের এ পেশায় যুক্ত করছে। তবে বাংলাদেশে এখনও পেশা কিছুটা পুরুষের দখলে।
৬। চিকিৎসকঃ আধুনিক বিশ্বে নারীগণের অনেকেই চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যয়ন করে চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। পৃথিবীর সব দেশের নারী চিকিৎসক রয়েছে এর মাধ্যমে তারা জেন্ডারের বাধা অতিক্রম করে সনাতন সমাজ হতে আধুনিক সমাজে প্রবেশ করছে। ফলে নারীবাদ বা নারীমুক্তি ত্বরান্বিত হচ্ছে অবসান ঘটছে পুরুষতন্ত্রের।
৭। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকঃ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেধাবী নারীদের অনেকে এ পেশায় যোগদান করছেন। এ পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অনেক দেশে পুরুষদের থেকে নারীর বেতন অপেক্ষাকৃত অনেক কম জেন্ডার বৈষম্য রয়ে গেছে।
৮। বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিঃ অনেক নারী বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করে। তবে জেন্ডার বৈষম্যের কারণে অনেক নারী লেখাপড়া জানা সত্ত্বেও উচ্চতার পেশায় ঢুকতে পারে না । তারা জেন্ডার সমস্যার শিকার হয়। আমাদের দেশের পরিবার নারীদের চাকরি করাকে ভালো চোখে দেখে না এবং এসকল প্রতিষ্ঠানে নারীরা পুরুষ সহকর্মী থেকে জেন্ডার বৈষম্যের কারনে অনেক সময় প্রমোশন কম পায়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন কর্মে অবাধে প্রবেশ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় প্রোমোশন কম পায়।