উদারতাবাদের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ?
ভূমিকা:- উদারতাবাদকে প্রজ্ঞাবাদী আন্দোলনও বলা যেতে পারে। নৈরাজ্যবাদী সামন্তাবাদের বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাবাদীরা বা প্রজ্ঞাগোষ্ঠী যে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে তাকে উদারতাবাদ বলে।
উদারতাবাদের সংজ্ঞা
উদারতাবাদ বলতে বোঝায় এমন এক মতবাদ যে মতবাদে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও কল্যাণকে মহা মূল্যবান মনে করা হয়। ব্যক্তিগত মালিকানা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বিকাশের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ইংরেজি Liberty বা Liberalism থেকে Liberalism শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হলো উদারতাবাদ। উদারতাবাদ মূলত সামন্তপ্রথার বিরুদ্ধে ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অনুকূলে কাজ করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা
উদারতাবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো
জর্জ চেরি এর মতে- “উদারতাবাদে ব্যক্তি তার বুদ্ধি স্বাধীনতা ভোগ করে এবং যুক্তিবোধকে তার সকল সমস্যা সমাধানকে কাজে লাগিয়ে এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে যার মধ্যে ব্যক্তির আশা আকাঙ্ক্ষা অর্জিত হয়।
J.itallowell বলেন- “উদারতাবাদ নিছক তথা কোনো অর্থহীন চিন্তাভাবনা নয়। বরং এটি একটি জীবন দর্শন বটে। জীবনদর্শন হিসেবে এটি মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকে।”
উপরের আলোচনা হতে বলা যায় উদারতাবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যা ব্যক্তির কল্যাণে সর্বদা নিয়োজিত থাকে।
উদারতাবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ
উদারতাবাদের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ আলোচনা করা হলো-
১। ব্যক্তি স্বাধীনতা
উদারতাবাদ ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ব্যক্তি স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য ও ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্যই উদারতাবাদের উৎপত্তি ঘটে।
২। ব্যক্তির কল্যাণ
উদারতাবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তির কল্যাণ করা। উদারতাবাদ সবসময় ব্যক্তির কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত।
৩। মানবকল্যাণ
উদারতাবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবকল্যাণ সাধন করা। মানবকল্যাণের নিমিত্তে মানুষের ত্রুটিগুলোকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় হলো উদারতাবাদের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
৪। শাসন ব্যবস্থা
শাসন ব্যবস্থা যেন জনগণের অনুকূলে হয় অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থা দিয়ে জনগণ যেন অন্যায়ভাবে বঞ্চিত না হয় সে জন্য নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চায় উদারতাবাদ।
৫। করপ্রদান
কর প্রদানের দিকেও উদারতাবাদ আলোকপাত করেছে। কারণ কর প্রদানে যাতে শাসকের দ্বারা জনগণ উৎপীড়ন না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।
৬। শিক্ষা
শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকবে না। সবার সমান অধিকার থাকবে শিক্ষা গ্রহণ করার সময়।
৭। শৃঙ্খলা ব্যবস্থা
রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, সেজন্য সরকারের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮। নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা
রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা হবে নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা। বিচারে কোন পক্ষপাত করা যাবে না। সবার জন্য নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে।
৯। ধর্মীয় সহনশীলতা
ধর্মীয় সহনশীলতা হলো উদারতাবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উদারতাবাদ বলে যেকোনো ধর্মকে সহ্য করতে হবে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
১০। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
উদারতাবাদের মূলকথা হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে। মানুষ ইচ্ছেমত অর্থ উপার্জন করতে পারবে, অর্থ ব্যয় করতে পারবে, অর্থ বন্টন করতে পারবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদারতাবাদ হলো একটা মানবকল্যাণমূলক মতবাদ । এই মতবাদের গুরুত্ব মানবজীবনের উপর অপরিসীম।

ধন্যবাদ সুন্দর উত্তর প্দানের জন্য
ReplyDeleteThank you
Delete