নেতৃত্ব কী? নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রভাব

নেতৃত্ব কাকে বলে? নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রভাব লিখ 

ভূমিকাঃ- মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ সমাজ গঠন করেছে নিজের চাহিদা পূরণের জন্য।আর মানুষ সমাজে বসবাসরত অবস্থায় যখন সমাজকে গঠন করার ইচ্ছা পোষণ করেছে তখন কেউ না কেউ এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। সমাজের সাথে নেতৃত্বের যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। কারণ সমাজ হলো মানুষ গঠনের কারিগর আর নেতা তৈরী হয় সমাজ থেকে।কোন দেশ, জাতি , সমাজ নেতৃত্ব ছাড়া চলতে পারে না কারণ নেতৃত্ব হলো দিকনির্দেশনা যা প্রদান করতে পারে একজন নেতা।

নেতৃত্ব কী? নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রভাব

নেতার নেতৃত্ব মেনে চললে সমাজের অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।কারণ সমাজে সব সময় সমস্যা থাকবে আর এ সমস্যা দূর করতে নেতার নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে।

নেতৃত্বঃ নেতৃত্ব হলো সাধারণ নেতার নির্দেশ। অর্থাৎ নেতৃত্ব হলো কোন কাজ করার আদেশ, নিশেধ বা পরামর্শ বিশেষ। নেতৃত্ব সাধারণত দিক নির্দেশনা অর্থে ব্যবহৃত হয় তা নয়। নতুন নতুন বিপ্লব ঘটানোর জন্য নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নেতৃত্ব সাধারণত নেতা কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এক কথায় বলা যায় দেশ বা সমাজকে পরিচালনার জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি হলো নেতৃত্ব।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে নেতৃত্বের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

ভ্যান ফ্লিট এর মতে নেতৃত্ব হলো একটি প্রভাব প্রক্রিয়া যা অন্যদের আচরণ পরিবর্তনে ব্যবহৃত হয়।

আর ডব্লিউ গ্রিফিন এর মতে অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাকে নেতৃত্ব বলে।

কিথ ডেভিস বলেন, গোষ্ঠীর সদস্যদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করার যোগ্যতাকে বলা হয় নেতৃত্ব।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জি. আর. টেরি এর মতে- “নেতৃত্ব হলো পারস্পরিক লক্ষ অর্জনের জন্য সেচ্ছায় সংগ্রাম করতে মানুষকে প্রভাবিতেএবং উৎসাহিত করাকে বোঝায়।”

হাডসন এর মতে-“নেতৃত্ব হলো এমন একটি বৃহদায়তন সংগঠন যেখানে প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম ও নীতিমালা মেনে চলার জন্য অনুপ্রেরণা প্রদান করা হয়।”

মোটকথা নেতৃত্ব বলতে বুঝায় এমন একটি বিষয়কে যার মাধ্যমে কোনো মানুষ, দল, গোত্র, সমাজ, রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়।

নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রভাব:

নেতৃত্ব ছাড়া কোনো সমাজ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। একটি ভালো নেতৃত্ব যেমন সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেয়, তেমনি খারাপ নেতৃত্ব একটি জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সমস্যা সমাধান হয়: নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান গুণ হলো সমস্যার সমাধান করা। একজন দক্ষ নেতা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করেন এবং তা সমাধানের জন্য বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

২। দল বা সমাজের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়: নেতৃত্ব এমন একটি শক্তি যা একটি দল বা সমাজকে একত্রিত রাখতে সাহায্য করে। একজন নেতা ভিন্ন মত, চিন্তাধারা ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষদের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করেন। তিনি সবাইকে একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করেন, যার ফলে সমাজে বিভেদ নয়, বরং ঐক্য গড়ে উঠে।

৩। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়:
একজন যোগ্য নেতা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরিকল্পনা করেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

৪। লক্ষ্য অর্জনে সহজতা আসে: নেতৃত্ব মানুষকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করে। সঠিক নেতৃত্ব থাকলে ব্যক্তিগত ও সামাজিক লক্ষ্য উভয়ই অর্জন করা সহজ হয়। কারণ নেতা দিকনির্দেশনা দিয়ে পথ দেখান, সমস্যা এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন এবং উৎসাহ প্রদান করেন।

৫। ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়: নেতৃত্ব ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন দূরদর্শী নেতা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি জনগণকে আগাম ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন

একজন যোগ্য নেতা কেবল নিজের আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করেন না; তিনি অন্যদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলিও বিকশিত করেন।

উপসংহারঃ সর্বশেষ উপরের আলোচনা হতে পরিশেষে বলা যায় যে, নেতৃত্ব হলো কোন দেশ পরিচালনার জন্য এক বিশেষ গৃহীত পদ্ধতি। কারণ নেতৃত্ব হলো এমন এক ধরনের গুণাবলী যা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কাজ করে। আমাদের দেশের যে ধরনের কায্যক্রম পরিচালিত হয় তার মূলে রয়েছে নেতৃত্ব।

No comments:

Post a Comment