পরিবার পরিকল্পনা কি? পরিবার পরিকল্পনার পাঁচটি উপকারিতা
ভূমিকাঃ বংলাদেশ জনবহুল দেশ। এদেশের আয়তনের তুলনায় লোকসংখ্যা অনেক বেশী। তথাপি জনবিস্ফোরণের দেশ হিসেবে এটাকে রক্ষা করা উচিত। নতুবা এমন এক পর্যায়ে যাবে যে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে কিন্তু আয়তন বাড়বে না । ফলে দারিদ্র্যতা, অনাহার, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। বিভিন্ন রোগ বেড়ে যাবে । অনেকেই স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগবে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা থাকবে না। একে অপরের সাথে যুদ্ধ করবে।
পরিবার পরিকল্পনা (Family planing): স্বাভাবিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা হলো মানুষের পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের সঠিক ব্যবস্থাকে বোঝায়। অর্থাৎ পরিবার কীভাবে সঠিক এবং সুষ্ঠুভববে চলবে তার ব্যবস্থা সমূহ । সংকীর্ণভাবে পরিবার পরিকল্পনা বলতে এমন সব ব্যবস্থাকে বুঝায় যার দ্বারা সন্তান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষ নিঃসন্তান দম্পত্তিকে সন্তান দেওয়া যায়। বিস্তারিতভাবে জম্মহার ও মৃত্যুহার কাম্য স্তরে আনার পাশাপাশি মাতৃ ও শিশু সদস্য পরিচর্যা, গর্ভপাত, বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে, বাচ্চা নেওয়ার পরামর্শ, শিক্ষা ইত্যাদি ব্যবস্থার চাহিত ব্যবস্থাকে পরিবার পরিকল্পনা বলা হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি পরিবার পরিকল্পনা হলো দম্পতির বৈবাহিক যৌন জীবন সুখময় করা ও সন্তান জম্মদানে নিয়ম নির্ধারণ করা ইত্যাদি। অন্যভাবে বলা যায় পরিবার পরিকল্পনা হলো জম্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোবা বাড়ানো, যার দ্বারা জনসংখ্যা কাম্য জনসংখ্যায় নিয়ে আসা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ নিম্নে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কয়েকটি সমাজবিজ্ঞানীর সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।
সমাজকর্ম অভিধানে বলা হয়- 'সন্তান প্রজনন সম্পর্কে বিবেচনাপ্রসূত স্বেচ্ছাপ্রণেদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলো পরিবার পরিকল্পনা।' (Family planing is making deliberate and voluntary decision about reproduction.
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) এর মতে ''পরিবার পরিকল্পনা যীবনযাপনের এমন একটি চিন্তাধারা ও পদ্ধতি যা কোনো ব্যক্তি বা দম্পত্তি স্বীয় জ্ঞান দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বেচ্চাপ্রণেদিত হয়ে গ্রহণ করে যাতে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের উন্নতি সাধিত হয় এবং তারা দেশের উন্নয়নে কবর্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হয়।''
রবার্ট ম্যাকনামারা এর মতে ''পরিবার পরিকল্পনা পরিবার ধ্বংসের নকশা নয়, বিপরীত পক্ষে এটি পরিবার ও এর সদস্যদের র্খার নকশা ও কৌশল।''
পরিবার পরিকল্পনার উপকারিতাসমূহ:-
১। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: এটি দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
২। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা: গর্ভকালীন সঠিক বিরতির মাধ্যমে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকে।
৩। অর্থনৈতিক ভারসাম্য: ছোট পরিবারে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা সহজ হয়।
৪। শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণ: পরিবারের সদস্যসংখ্যা কম হলে শিশুদের শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
৫। নারীর ক্ষমতায়ন: পরিবার পরিকল্পনা নারীদের নিজেদের জীবন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা হলো এমন এক কর্মসূচি যার মাধ্যমে পরিবার তার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম। পরিবার পরিকল্পনা একটি যুগোপযোগী, বাস্তবমুখী এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কর্মসূচি। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তির বা পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করে না, বরং সমগ্র জাতির উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। সঠিক পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি দেশ তার জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারে এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

No comments:
Post a Comment