আদিবাসী কাকে বলে? নরগোষ্ঠী বলতে কি বুঝায়?

আদিবাসী ও নরগোষ্ঠী কি?

ভূমিকাঃ- বাংলাদেশ আয়তনে ছোট একটি দেশ। কিন্তু ছোট হওয়া সত্ত্বেও এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। বাংলাদেশের মোট আধিবাসী হলো আদিকাল থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী। যাদের স্বকীয় ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি ও পোশাক পরিচ্ছদ সব কিছুকে আঁকড়ে ধরে আধুনিকতার স্পর্শ ব্যতীত আনাগোনা করে থাকে তাদেরকেই আদিবাসী বলে।

আদিবাসী কাকে বলে? নরগোষ্ঠী বলতে কি বুঝায়?

আদিবাসী সংজ্ঞাঃ আদিবাসী হলো সেই জনগোষ্ঠী যারা কোন অঞ্চলে আদিকাল থেকে বসবাস করে আসছে এবং যারা মূলধারার সমাজ থেকে ভিন্ন একটি সাংস্কৃতিক ও জীবনধারায় নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, পোশাক, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক আচার ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখে। তারা সাধারণত পাহাড়ি বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে এবং কৃষিনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত থাকে।

আদিবাসী শব্দের আক্ষরিক অর্থ “আদিতে বসবাসকারী”। এরা বহিরাগত নয়, বরং কোনো অঞ্চলের প্রাচীনতম অধিবাসী। তাদের জীবনধারা প্রকৃতিনির্ভর এবং তাদের আচার-আচরণ, ধর্মবিশ্বাস, শিল্প-সংস্কৃতি ও ভাষা সাধারণত মূলধারার থেকে পৃথক।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন চিন্তাবিদ আদিবাসী সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে ‍তাদের কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হলো-

জাতিসংঘ বলেন আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে এমন এক গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে, যারা ঐতিহাসিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত এবং যাদের রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ।

রামকান্ত সিংহ বলেন আদিবাসী অর্থে তাদেরকে আখ্যায়িত করা হয় যারা সমাজ অভ্যন্তরে ও বাহিরে চলাফেরায় স্বকীয় অতিত, ঐতিহ্য, পোশাক, ভাষা ও সাংস্কৃতি সবকিছু আকড়ে ধরে আনাগোনা করে।

পরিশেষে বলা যায়, আদিকাল থেকে কোনো অঞ্চলে বসবাসকারী প্রথম জনগোষ্ঠীই হলো আদিবাসী। আদিবাসীরা নিজেদের অতীত ঐতিহ্য, ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুকে আকড়ে ধরে রাখে। তারা তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রাখে।বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রর্তি আদিবাসীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

নরগোষ্ঠী বলতে কি বুঝায়?

নৃবিজ্ঞানীর অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো নরগোষ্ঠী। নরগোষ্ঠী হলো এমন একটি মানবগোষ্ঠী যা দৈহিক বৈশিষ্ট্যর দিক থেকে অন্য গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করে আর এর জন্যই নরগোষ্ঠীর দ্বারা বিভিন্ন জাতি সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ও মানসিক সভ্যতাকেন্দ্রিক বিচিত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

নরগোষ্ঠীঃ নরগোষ্ঠী মানব প্রজাতির এমন একটি উপরিভাগকে নির্দেশ করে যার প্রত্যেক সদস্য দৈহিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। তারা স্বল্প গতিসম্পন্ন ও নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতে খুবই তৎপর।নরগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলোই অন্য উপজাতিদের থেকে ভিন্নতা প্রকাশ করে।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে নরগোষ্ঠী এমন একটা মানবগোষ্ঠী যার প্রত্যেক সদস্যদের উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু দৈহিক বৈশিষ্ট্য থাকে আর সেগুলোর দ্বারা তারা অন্য উপজাতি থেকে তাদের ভিন্নতা প্রকাশ পায়্র।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ ম্যাকাইবার এর মতে জাতিসত্তা আদিম সমাজে গোষ্ঠী চেতনারই যেন একটা বিবর্তিত রুপ।

অধ্যাপক জন সেপার্ড এর মতে “নরগোষ্ঠী হচ্ছে মানব সমাজের এমন একটা বিশেষ অংশ যারা জৈবিক উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কতকগুলো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।”

উপসংহারঃ সর্বশেষ আমরা বলতে পারি নরগোষ্ঠী হলো বিশেষ এক গোষ্ঠী যারা জম্মগতভাবে কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যর অধিকারী। এই গোষ্ঠীগুলোর ভেতরে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রোথিত থাকে। তাই প্রতিটি নরগোষ্ঠীই বিশ্ব মানব সমাজের একটি স্বতন্ত্র রূপ এবং তা আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির পরিচায়ক

No comments:

Post a Comment