সাক্ষাৎকার কাকে বলে? সাক্ষাৎকারের বৈশিষ্ট্য ও ধরন আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ মাঠকর্ম অনুশীলনে সাহায্যর্থীর তথ্যসংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে সাক্ষাৎকার। সমাজকর্মী বা উত্তরদাতার নিকট থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এর মাধ্যমে ব্যাক্তির সাথে কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে বাক্তির ব্যাক্তিত্ব, চিন্তাধারা, আশা আকাঙ্খা প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করা যায়। এ পদ্ধতি অত্যন্ত যৌক্তিক ও ফলদায়ক। সাক্ষাৎকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা নিরসন করা। তবে সফল সাক্ষাৎকারের জন্য প্রথমেই দরকার সমাজকর্মীর সাথে সাহয্যোর্থীর কার্যকারী পেশাগত সম্পর্ক (Rappon) প্রতিষ্ঠা করা।
সাক্ষাৎকারের সংজ্ঞা
সাধারণত দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষাৎকারের মানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে এক বিশ্লেষণ ধরনের কথোপকথন যার ভিত্তিতে মানুষ অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যানধারণার বিনিময় ঘটায়। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যক্তি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যক্তি সমাজকর্মী ও মক্কেলের মধ্যে অনুষ্ঠিত পেশাদারি কথোপকথনকে সাক্ষাৎকার বলা হয়।
পি. ডি. ইয়ং (P.V. Young)-এর মতে, "Interview may be seen as an effective, informal, verbal, non-verhal cor venation between the researcher & respondent either by slephone or in a fou to fall situation."
নোয়া ওয়েবস্টার-এর মতে, 'সাক্ষাৎকার হলো পারস্পরিক বা মুখোমুখি দেখা সাক্ষাৎ। সাধারণভাবে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক যায় উদ্দেশ্য হলো পরামর্শ দান, প্রশ্নের সাহায্যে তথ্যসংগ্রহ, কারো মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কিছু জানা।"
মনীষী অ্যানেট গ্যারেট-এর মতে, "leterview is an art. Allied anchnique that can be improved & eventually perfected peunarily through continued practice."
M.N. Huwain & M. Alauddin-এর মতে, সাক্ষাৎকার বলাতে দুই বা অতবিক ব্যক্তির মধ্যে মুখোমুখি সম্পর্কের একটি সুন্যবস্থিত বৈঠককে বোঝায়। যেখানে সমস্যা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ এবং সাহায্যার্থীর সমস্যা নির্ণয় ও সমাধানে পেশাগত কথোপকথন সংগঠিত হয়।
সাক্ষাৎকারের বৈশিষ্ট্য
সাক্ষাৎকারের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট স্পষ্ট হয়ে উঠে। সাক্ষাৎকারের বৈশিষ্ঠগুলো নিচে দেওয়া হলো।
১. সাক্ষাৎকার দুই বা ততোধিক লোকের মধ্যে কথোপকথন এবং এটি ব্যাপক ও বিস্তৃত।
২. সাক্ষাৎকার সাক্ষ্যগ্রহীতা ও উত্তরদাতার মধ্যে অনিচ্ছায়া, দৃষ্টিভঙ্গি ও ধ্যান ধারণার বিনিময় ঘটে।
৩. এটি এমন একটি কৌশল যেকানে উদ্দেশ্যমূলক ভাবের আদান-প্রদান ঘটে।
৪. সাক্ষাৎকার একটি তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি এবং এখানে মৌখিক কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা, প্রশ্ন- উত্তর পর্ব প্রভৃতি রয়েছে।
৫. সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৬. এটি একটি পেশাগত সংলাপ এবং তথ্য সংগ্রহ এর পাশপাশি তথ্য সংরক্ষণ করা।
৭. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী পেশা হিসাবে সাক্ষাৎকার এর উপর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
৮. সাক্ষাৎকারের মূল লক্ষ্য হলো তথ্য সংগ্রহের সাথে সাথে সেবা প্রদান করা।
৯. সাক্ষাৎকার গ্রাহণের মধ্যে দাতা ও গ্রহিতার মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
১০. এটি একটি সচেতন পর্যবেক্ষণ। এর মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সাথে অপ্রকাশিত অনুসন্ধাদের সুযোগ তৈরি হয়।
১১. সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ ঘটে এবং এ প্রক্রিয়া সমস্যা নির্বাচন করে দেই।
১২. এর মাধ্যমে সমাজকর্মে সাহায্যার্থী ও কর্মীর মধ্যে র্যাপো প্রতিরিত হয়।
১৩. তথ্য সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশলের শক্তি সামর্থ্যের উন্নয়ন ও বিকাশ সাধিত হয়।
১৪. এটি সমাজ অনুসন্ধানে উপাত্ত সংগ্রহের এক বৈজ্ঞানিক কৌশল।
১৫. সাক্ষাৎকার একটি কলা, দক্ষভাপূর্ণ কৌশল যা যায় বার অনুশীলনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
সাক্ষাৎকারের প্রকারভেদ
প্রথমত সাক্ষাৎকার দুই প্রকার। যথা: ১. আনুষ্ঠানিক (Formal) ২. অনানুষ্ঠানিক (Informal)
১. আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার: যদি কোন সাক্ষাৎকারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নকে কেন্দ্র করে উত্তরমালা লিপিবদ্ধ করা হয় তবে তাকে Formal Interview অথবা আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বলে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধ করে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী প্রশ্ন সংযোজন কিংবা তার বিশ্লেষণ করতে পারেন।
২. অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার: সাধারণত যে সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে না অথবা যে সাক্ষাৎকারে পূর্ব নির্ধারিত কোন প্রশ্নমালা থাকে না তাকেই অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বলে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার জন্য যে সকল তথ্য প্রয়োজন তার সাথে মিল রেখেই প্রশ্ন করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সমাজকর্মে সাক্ষাৎকার এমন একটি কৌশল যায় মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্যার প্রকৃত সমাধান খোঁজা। এর উদ্দেশ্য সমস্যা সম্পর্কে জ্ঞান, আবেগ, অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণ উপলব্ধি অর্জন একান্ত জরুরি যাতে কোনো সমস্যা কার্যকরভাবে সমাধান করা যায়। যিনি সাক্ষাৎকার করেন তাকে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এবং যিনি সাক্ষাৎকার প্রাদান করেন তাকে সাক্ষাৎকার প্রদানকারী বা উত্তরদাতা বলা হয়। সাধারণভাবে সাক্ষাৎকার হলো কোন বিশেষ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দুজন ব্যক্তির মধ্যে যে আলাপ-আলোচনা হয়। সাক্ষাৎকারের দুপ্রকার একটি আনুষ্ঠানিক অন্যটি অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক হলো যে সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন নির্ধারিত লিপি অনুযায়ী থাকে অন্যটি হলো অনানুষ্ঠানিক যে সাক্ষাৎকারে পূর্ব নির্ধারিত কোন প্রশ্ন থাকে না। সুতরাং আমরা সাক্ষাৎকার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারলাম।