বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ কি, বৈশিষ্ট্য ও নীতিসমূহ

বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ কি, বৈশিষ্ট্য ও নীতিসমূহ

আধেয় বিশ্লেষণ বা বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ পদ্ধতি কী? বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ বৈশিষ্ট্য ও নীতিসমূহ

ভূমিকা : সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতির মধ্যে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ একটি অন্যতম পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে দলিল নির্ভর পদ্ধতিও বলা হয়। কারণ, এ পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় যে গবেষণা করার জন্য যে সকল লিখিত পদ্ধতি আছে এ ধরনের সব কিছুকে বিশ্লেষণ করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে যে কোন ধরনের গবেষণার কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়।

বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ কি, বৈশিষ্ট্য ও নীতিসমূহ


বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের সংজ্ঞা: বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানীরা তাদের সুবিধা গবেষণার মাধ্যমে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ মতামত প্রদান করেছেন। নিম্নে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো- সাধারণভাবে বলা যায় যে সমাজ জীবনের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে গণযোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু সংখ্যাত্মকভাবে প্রকাশ করে তথ্যের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে যে পদ্ধতি পরিচালিত হয় তাকে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ বলে।

P. V. Young-এর মতে, বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ হচ্ছে সাক্ষাৎকার প্রশ্নমালা অনুসূচি এবং অন্যান্য ভাষাগত অভিব্যক্তির মাধ্যমে সংগৃহীত গবেষণা তথ্যের বিষয়বস্তু প্রণালিবদ্ধ বস্তুনিষ্ঠ ও সংগঠনের বর্ণনার গবেষণা কৌশল। According to Hans Raj Theory and practice in Social Research Content analysis is a method of analysis with which an attempt is made to convert the symbolic behaviour into scientific data. অথাৎ, অধেয় বিশ্লেষণ হলো বিশ্লেষণের এমন একটি পদ্ধতি যা প্রতীকী আচরণকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্তে রূপান্তরিত করে।

Fred N. Kerlinger (1981:361)-এর মতে, বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ গণযোগাযোগ ও উহার চলক পরিমাপ করার জন্য নিয়মতান্ত্রিক সংখ্যাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ একটি পদ্ধতি বিশেষ।

আধেয় বিশ্লেষণ বা বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ

আধেয় বিশ্লেষণের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো: 

১. আধেয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য বেছে নিতে মৌখিক বা লিখিতভাবে তুলে ধরা যায়।

২. এর মাধ্যমে কোন বিষয়ের প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও বিষয়বস্তু প্রমাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

৩. এটি প্রয়োগ করা হয় মূলত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৌশল প্রয়োগ করা হয়।

৪. এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ঘটনাকে বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে থাকে।

৫. এ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রমাণের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে।

৬. এ পদ্ধতি অন্য কোনো পদ্ধতির সাহায্য ছাড়া কিভাবে নতুন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

৭. এ পদ্ধতির এমন কিছু বিষয়কে তুলে ধরা সম্ভব হয় তা মূলত আপেক্ষিক বিষয় কিন্তু যে বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে তা পরিমাপ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ এর নীতিসমূহ/পদক্ষেপসমূহ

সমাজ গবেষণায় অনুসন্ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সামাজিক গবেষণা করার জন্য একটি কৌশল বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের যথাযথ নকশা প্রণয়ন করে নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করার পর প্রত্যাশিত কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এখানে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাথে মিল পাওয়া যায়। বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের কিছু পদক্ষেপ বা ধাপ রয়েছে যেসব ধাপের মাধ্যমে এর কাজ করা হয়। নিম্নে এ ধাপগুলো আলোচনা করা হলো।

১. উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন: বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের জন্য যে কাজটি করতে হবে তা হলো উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন করা। বিষয় নির্বাচন করার পর তা নিয়ে সঠিকভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে হবে।

২. উৎস নির্ধারণ: উপযুক্ত বিষয় বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্যাবলির প্রাসাঙ্গিক উৎস হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। এখানে যে প্রাসঙ্গিক উৎস হিসেবে যে বিষয়টি আমরা নির্বাচন করেছি সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় সম্পর্কিত সেসব বিষয়কে ধরা যেতে পারে। যেমন হতে পারে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম, যার মধ্যে সংবাদপত্র, রেডিও, জার্নাল, টেলিভিশন, ব্যক্তিগত লেখা, রচনা, প্রচারণা, প্রতিবেদন, শিল্পকলা ও বক্তৃতা ইত্যাদি বিষয় বিষয়বত্র বিশ্লেষণের উৎস হিসেবে বলা যেতে পারে।

৩. নমুনা নির্বাচন: নমুনা নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নমুনায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব প্রত্যাশিত ডকুমেন্ট আছে তা নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা। এখানে যে বিষয়টিতে একজন গবেষক কাজ করতে চান সেসব বিষয়ের জন্য নির্ধারিত ডকুমেন্ট নিয়ে একটা নমুনা কাঠামো তৈরি করার পর তা উপযুক্ত নমুনায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা নির্বাচন করতে হবে।

৪. শ্রেণিকরণ: আমরা বিষয়বস্তু নির্বাচন করার পর বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টগুলোকে সংকেতবদ্ধভাবে শ্রেণিকরণ করতে হবে। এখানে শ্রেণিকরণ করতে হবে মূলত অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য ভিত্তির উপর এবং ঐ বিষয়ের যেসব বৈশিষ্ট্য আছে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিকরণ করতে হবে।

৫. একক নির্ধারণ: বিশ্লেষণের একক নির্ধারণ করার জন্য বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে Holsti এর মধ্যে দুই ধরনের একক আছে। যথা: (ক) রেকর্ডিং একক ও (খ) প্রসঙ্গ একক।

(ক) রেকর্ডিং একক আবার পাঁচ প্রকারে হতে পারে। নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো।

(i) একটি নির্দিষ্ট শব্দ, (ii) নির্দিষ্ট ভাব, (ii) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, (iv) নির্দিষ্ট দফা এবং (v) নির্দিষ্ট প্রতীক।

 ৬. গণনার পদ্ধতি: বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করার জন্য গণনা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে মূলত গুণশত কথা সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য এসব তথ্যাবলিকে বিভিন্ন ধাঁচের সংখ্যায় রূপান্তরিত করা প্রক্রিয়া এ পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয়। এ সম্পর্কে Kenneth D. Baily সংখ্যাতাত্ত্বিক রূপান্তর ও গণনার ক্ষেত্রে কয়েক ধরনের উপায়ের কথা বলেছেন। এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

(i) দুটি শ্রেণির মাধ্যমে। যথা। হ্যাঁ ও না, পক্ষে ও বিপক্ষে।

(ii) ঘটন সংখ্যা নিবেশনের মাধ্যমে;

(iii) বিস্তৃত পরিমাপ

(iv) গভীরতা যা দৃঢ়তা প্রকাশের মাধ্যমে।

(v) প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বোডারণের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করে,

(vi) তথা কে বিশ্লেষণ করা ও

(vii) শ্রেণিকরণে নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নির্ধারণ করা।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের এসব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সমাজের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটছে। যোগাযোগের জন্য সমাজ জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব জানার জন্য সমাজ গবেষকগণ এদিকে বেশি ঝুঁকে আছে। বর্তমান আধুনিক সমাজ গবেষণায় বিষয়বস্তু বিশ্লেষণকে আধুনিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানের বিভিন্ন ধরনের উৎস, যেমন: গণমাধ্যম, সাহিত্য প্রতিবেদন, ব্যক্তিগত লেখা ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের লক্ষ্য হলো সামাজিক অবস্থাকে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করা। এই পদ্ধতিটি মূলত অনুকল্প গঠন, তৈরি ও তথ্য যাচাইয়ে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ সমাজ গবেষণায় যে পদক্ষেপগুলো ব্যবহার করা হয় তা যে কোন সমাজ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post