উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদের সুদূরপ্রসারী প্রভাব আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ অতীতে বিশ্বের বহু উন্নত দেশে সাম্রাজ্যবাদকে জাতীয় নীতি রুপায়নের একটি মাধ্যম হিসেবে প্রয়োগ করেছে। আধুনিক কালে সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। বহুবার সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা বিশ্ব শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং উপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। ক্রমশ সাম্রাজ্যবাদ শব্দটি ঔপনিবেশিক শাসনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।
সম্রাজ্যবাদের ফলাফল: নিচে সাম্রাজ্যবাদের ফলাফল তুলে ধরা হলো:
১. বাজার ব্যবস্থা (Market system): তৃতীয় বিশ্বের বাজার ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ করে নব্য সাম্রাজ্যবাদ। তৃতীয় বিশ্বের উপর বর্তমানে যে সাম্রাজ্যবাদ চলছে তা মূলত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপর। রপ্তানি ক্ষেত্রে বাজারের প্রভুত্ব বজায় রাখে উন্নত বিশ্ব। একটি দরিদ্র দেশ শিল্পোন্নত দেশগুলোর বাজারে প্রবেশ করার জন্য অন্যান্য গরিব দেশের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় হয়। ধনী দেশগুলো এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের নিজেদের জন্য সুবিধাজনক সব বাণিজ্য শর্ত আরোপ করে এবং দরিদ্র দেশগুলোতে একের বিরুদ্ধে অপরকে লাগিয়ে দেয়। নব্য সাম্রাজ্যবাদের শিকার এ দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো সবসময়ই তাদের রপ্তানি পণ্যের জন্য কম মূল্য পায়। অথচ শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির জন্য এসব দরিদ্র দেশকে দিতে হয় অনেক বেশি দাম। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আর্থিক অবস্থা ভালো করার জন্য বাণিজ্য জোট গঠনের উদ্যোগ নিলেও তারা তেমন সফল আ হয় না। যেমন: সার্ক এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। রাজনৈতিক মত পার্থক্য, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা এবং বিকল্প বাজারের অভাব এ দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত করতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল চিন্তাবিদ মাইকেল প্যারেন্টির মতে, "তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো শিল্পপণ্য তৈরির সাহস দেখালে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রযুক্তি ও ঋণ প্রদান বন্ধ করাসহ নে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেয়। বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো বিপুল বিনিয়োগ, বিপননের উন্নত কৌশল, একচেটিয়া পেটেন্ট ও উন্নত ব্যবস্থাপনা দিয়ে স্থায়ী বাণিজ্য উদ্যোগগুলোকে বাজারে প্রবেশে বাধা দান করে। ভেনিজুয়েলার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কার্গোজ আন্দ্রেজ পেরেজের মতে, "এর ফলে অবিরাম ও বর্ধিত হারে পুঁজির নির্গমন ঘটছে এবং আমাদের দেশগুলো দরিদ্র হয়ে পড়ছে।"
২. ঋণের আধিপত্য (Debt supremacy): তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ঋণের আধিপত্য বড় রকমের একটি কৌশল। দরিদ্র দেশগুলোতে অধিকাংশ শিল্পকারখানার মালিকানা অথবা নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানীগুলোর হাতে থাকে। যেখানে বহুজাতিক যা কোম্পানিগুলোর মালিকানা কম সেখানে থাকে তাদের ভেটো ক্ষমতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীতে যখন সরাসরি ঔপনিবেশিক সে শাসন থেকে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র মুক্ত হতে শুরু করল এবং ভৌগোলিক স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করল তখন উন্নত রাষ্ট্রসমূহ যারা এতদিন ঔপনিবেশিক শাসন উন্নত রাষ্ট্রসমূহ তারা এতদিন ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়ে আসছে, তারা নিজেদের বাজার ধরে রাখা এবং অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বিশ্ব্যাংকের এ আইন মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে। এসব প্রতিষ্ঠান অনুন্নত দেশগুলোতে ঋণ দেওয়া শুরু করে চড়া সুদ ও শর্তের মাধ্যমে আবার কোনো শিল্প উদ্যোগের সম্পূর্ণ মালিকানা কোনো একটি দেশের হওয়ার পর প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বাজারের উপর প্রায় একচেটিয়া অধিকার থাকার বহুজাতিক কোম্পানীগুলো সুবিধা ভোগ করে থাকে। যেমন- বড় কোম্পানিগুলো অশোধিত তেল উৎপাদনের মাত্র ৩৮ শতাংশের মালিক হলেও পরিশোধ ও সরবরাতের প্রায় পরোটাই তাদের বাজার।
প্যারান্টি বলেন, আশির দশকের শেষভাগে প্যারাগুয়ের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই চলে গেছে বৈদেশিক ঋণের সুদ এ পরিশোধ করতে। ১৯৮০ সালের দিকে বিদেশী ব্যাংকগুলো তৃতীয় বিশ্বের প্রদত্ত ঋণ থেকে যে পরিমাণ সুদ পেয়েছে, তা সেখানে তাদের সরাসরি বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার চেয়ে নিজ ক্ষেত্রে বেশি। তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পাশ্চাত্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (IMF) থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয় তা শোধ করতে - পারে না। ফলে যে দেশে ঋণের পরিমাণ বেশি সে দেশের ঘাটতি মিটাতে আরো ঋণ দেয়ার চাপও বেশি এবং এ বাড়তি ঋণ নিতে হয় চড়া সুদ ও করা শর্তে। যে দেশগুলো ঋণগ্রস্থ তাদের আয়ের বড় একটি অংশ চলে যায় ঋণ পরিশোধে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটাতে সামান্য অবশিষ্ট থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) প্রদত্ত কাঠামো পুনর্বিন্যাসের শর্তে মত দিতে হয় ঋণগ্রহীতা দেশকে নতুন ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য। ঋণগ্রহীতা দেশকে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাতে থাকে। ফলে দেশগুলোতে খাদ্যে ভর্তুকি ও - গৃহায়ন ও অন্যান্য মানবসেবা খাতের বরাদ্দ কমে যায়। ফলে বঞ্চিত হয় সাধারণ জনগণ। কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখতে হয়। দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি করতে হয়। সুতরাং সাম্প্রদায়িক কালে সাম্রাজ্যবাদের মাধ্যমে যে ঋণের জালে আমরা আবদ্ধ হচ্ছি - সে ঋণ পরিশোধের অর্থ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সম্পদের একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক লগ্নিপুজির মালিকদের হাতে জমা।
৩. বৈদেশিক সাহায্য (Foreign aid): দরিদ্র দেশগুলো নিজেরা নিজেদের সম্পদ ও বণ্টনব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে চাইলে এ সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হয়। যেমন- চিলিতে ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আলেন্দের সরকার যখন সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমজীবী শ্রেণির স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় তখন সেখানে মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যও বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার হয়। যেমন- ওয়াশিংটন সোমালিয়াতে তাদের স্বনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি পঙ্গু করে ফেলা ও স্থানীয় উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সেখানে ভুট্টা পাঠায়। বৈদেশিক সাহায্যের পাশে বিস্ময়চক চিহ্ন দেয়ার অর্থ হচ্ছে আদৌ একে কোনো সাহায্য বলা যায়, নাকি সাম্রাজ্যবাদের একটি হাতিয়ার হচ্ছে এ সাহায্য। আমরা জানি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সাহায্য গ্রহীতা দেশগুলোকে ওয়াদা করতে হয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত দামে মার্কিন পণ্য কিনবে এবং এবং মার্কিন জাহাজে পণ্য বহন করবে। তাছাড়া - তারা যে সাহায্য দেয় তার একটি ছোট অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে। সাহায্যের বড় অংশ চলে যায় মার্কিন বাণিজ্যিক বা যায় বিনিয়োগির জন্য ভর্তুকি হিসেবে।
বৈদেশিক সাহায্যের একটি অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক। এরা এমন সব প্রকল্পে ঋণ দেয় যেগুলো অত্যাচারী শাসক শ্রেণিকে জোরদার করে কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও পরিবেশের বিপক্ষে যায়। বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে জিম হাইউত্তরায় মন্তব্য করেন, "বিশ্বব্যাংক মাত্র ৫০ বছরে যা করেছে পৃথিবীর সব ব্যাংক ডাকাতরা মিলে এ পর্যন্ত তার এক শতাংশের এক দশমাংশও করতে পারেনি।" এছাড়া প্যারান্টি বলেন, "আশির দশকে বিশ্বব্যাংক উত্তর পশ্চিম, ব্রাজিলে বনভূমি ধ্বংস করে একটি মহাসড়ক নির্মাণ করে। এরপর কয়েক লক্ষ একর বনভূমি সাফ করে দেয়া হয়, যা মূলত করা হয় ধনী ব্রাজিলিয়ান পশুখামার মালিকদের ব্যবসায় স্বার্থে। ১০ বছরের মধ্যে পুরো এলাকা দারিদ্র্য ও ব্যাধিতে ভরে যায়।"
৪. নিচু মাত্রার যুদ্ধ (Low duration war): সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যখন কোনো রাষ্ট্রে সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যে সে দেশের উপর নিম্ন জোরপূর্বক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় তখন তার নিজ দেশের বহু সৈন্য জা নিহত হয়। এতে সে দেশের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় ও বা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সাম্রাজ্য স্থাপনের জন্য প্রচুর অর্থব্যয় করে। যা বহন করে সে দেশের চা জনগণ। ফলে সে দেশের জনগণ এ ব্যয় বহন করতে করতে সা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। ওয়াশিংটনের নীতি নির্ধারকেরা নিচু মানের যুদ্ধ কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এ যুদ্ধ জনগণের চোখে পড়ে না। ফিলিপাইনে ২০ বছরের বেশি, কলম্বিয়ায় ৩০ বছরের বেশি যুদ্ধ চালানো হয়। এ যুদ্ধে তেমনভাবে বড় হত্যাযজ্ঞ লড়াই বা নাটকীয় কোন বিজয় বা বিপর্যয় না থাকায় তেমনভাবে তা নজর করে না। নিকারাগুয়ায় বিরুদ্ধে রিগ্যান ও সিনিয়র বুশ প্রশানন এক দশক ধরে যুদ্ধ চালিয়েছে।
৫. প্যাট (GATT): GATT (General Ayreement f on Tarifts and trade) সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নতুন ক কৌশল। গ্যাট বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) নামে যে আস্ত র্জাতিক সংগঠন তৈরি করেছে যার আইনগত অবস্থা জাতিসংঘের মত। যে কোনো দেশের সামাজিক, পরিবেশগত, ক্রেতার এ স্বার্থরক্ষার এবং শ্রম বিষয়ক আইন খারিজ বা স্থগিত করার কর্তৃত্ব WTO (World Trade Organization) এর রয়েছে। গ্যাট দিয়ে শুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করা, বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি বিশ্বব্যবস্থার সাথে সমন্বিত করা ও বর্ধিত বাণিজ্যের ফলে সবদেশের উপকৃত হওয়ার কথা বললেও আসলে তা তৃতীয় বিশ্বের জন্য কোনো সুবিধাই বয়ে আসছে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশ মোতাবেক কোনো রাষ্ট্র যার আইন পরিবর্তন করতে অস্বীকার করলে WTO সে দেশের উপর আন্ত র্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারে। দুর্বল দেশগুলোকে বঞ্চিত করে WTO শক্তিশালী দেশগুলোকে উপকৃত করবে এবং গরিবদের সমবায় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে রক্ষা করবে ধনীদের স্বার্থ। এজন্য কোরীয় কৃষক আত্মাহুতি দেয় যখন তাদের ভূতর্কি কমানোর কথা বলা হয়।
৬. ইচ্ছাকৃত সহিংসতা (Willingly violent): মাইকেল প্যারেন্টি বলেন, "সাম্রাজ্যবাদী আধিক পণ্যের জন্য সন্ত্রাস এক নৈমিত্তিক অস্ত্র।" পূর্বে যেমন লক্ষ্য লক্ষ্য নিরাপরাধ মানুষকে দাসে পরিণত করা হয়েছে ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে ঠিক তেমনি সাম্প্রতিক কালের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দরিদ্র মানুষ নব্য উপনিবেশবাদের শিকার হচ্ছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CIA এবং এ ধরনের সংগঠনের আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য বিভিন্ন বশংবদ রাষ্ট্রের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে নজরদারি, গোয়েন্দাগিরি, জেরা, অত্যাচার, ভীতি প্রদর্শন ও খুন করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গুয়েতেমালায় CIA সৃষ্ট ২৫ বছরের যুদ্ধে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ। নিখোঁজ হয় ৬০ হাজার মানুষ। গেরিলাদের প্রতি সহানুভূতি আছে এ সন্দেহে প্রায় ৪৪০টি গ্রাম ধ্বংস করা হয়, প্রায় ১০ লাখ লোক অন্য দেশে পালিয়ে যায় এবং ১০ লাখ মানুষ নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পোট বেনিংয়ে অবস্থিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্কুল অব আমেরিকান (SDA) এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মার্কিন বংশোদ্ভূত রাষ্ট্রগুলোর সামরিক অফিসারদের অত্যাচার চালানোর সর্বাধুনিক কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে সারা লাতিন আমেরিকার জনসাধারণ এর নাম দিয়েছে 'খুনীদের পাঠশালা'। এলসালভেদরের গ্রামগুলোতে হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত অধিকাংশ সামরিক বাহিনী এখানে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় মার্কিন মদদপুষ্ট সেনাবাহিনী ১৯৬৫ সাল থেকে ৫-১০ লাখের মত নিরীহ জনগণকে হত্যা করে। নিউইয়র্ক টাইমস ১২ মার্চ ১৯৬৬ সালে একে আধুনিককালের রাজনৈতিক ইতিহাসে বর্বর গণহত্যা নামে আখ্যায়িত করে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমানে নিজেদের স্বার্থে গণতন্ত্রের দাবিদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পুঁজিবাদী শিল্পোন্নত রাষ্ট্র এভাবেই বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালায় এবং ধ্বংস করে দেয় তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সার্বিক অবস্থা।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, এখনও তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো উপনিবেশ থেকে মুক্তি পায়নি। নামে কেবল স্বাধীন রাষ্ট্র কিন্তু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে লড়াই করার বিকল্প নেই। চুপচাপ বসে থাকলে সাম্রাজ্যবাদ কিছুদিন পর আমাদের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীকে নিঃস্ব করে দিবে। নিম্ন শ্রেণি আরো নিঃস্ব হবে এবং কিছু লোকের হাতে অঢেল অর্থের সমাগম হবে। সাম্রাজ্যবাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে হলে এদের কৌশলগুলো বুঝতে হবে। চালানোর বৈধ কর্তৃত্ব কার এ নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে বিতর্ক আছে। এসব দেশে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেরও বিরুদ্ধে জনমতের প্রবল কোনো বাধা নেই।