দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি সম্পর্কে ফয়েরবাখের ধারণা। থিসিস, এন্টিথিসি ও সিনথিসিস কি?

দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি সম্পর্কে ফয়েরবাখের ধারণা। থিসিস, এন্টিথিসি ও সিনথিসিস কি?

দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি সম্পর্কে ফয়েরবাখের ধারণা। 

ভূমিকাঃ দ্বান্দ্বিকতার প্রথম ধারণা দেন জার্মান দার্শনিক হেগেল। পরবর্তীতে কার্ল মার্কস ও ফয়েরবাখ হেগেল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নতুনভাবে দ্বান্দ্বিকতার ব্যাখ্যা দেন। তবে মজার ব্যাপার হলো দ্বান্দ্বিকতা নিয়ে আলোচনা সবাই করলেও দান্দ্বিকতা সম্পর্কে সবার ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ সতন্ত্র।


ফয়েরবাখের ধারণা: দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি সম্পর্কে ফয়েরবাখের ধারণা হেগেলের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। হেগেল যেখানে ভাববাদ দ্বারা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন সেখানে ফয়েরবাখ যান্ত্রিকভাবে, মার্কস এর ভাষায়, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে ব্যাখ্যা দেন। হেগেলের চিন্তা আত্মার উপর নির্ভরশীল। ফলে মার্কস তার প্রতি মোহমুক্ত হয়ে সেই সময় জার্মানির অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ফয়েরবাখের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বলেন হেগেল যখন মানুষের কর্মগত জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তখন তিনি (ফয়েরবাখ) এই বিষয়টি সঠিকভাবে আয়ত্ত করেছেন। এই অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে মার্কস ফয়েরবাখের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করেন। কিন্তু সেই আনুগত্যও ছিল ক্ষণস্থায়ী। তবে অল্পকিছুকালের মধ্যেই মার্কস। অনুভব করেন যে হেগেলের চিন্তা যদি ভাববাদ সর্বস্ব হয় তাহলে ফয়েরবাখ এমন যান্ত্রিকভাবে বস্তুবাদের কথা তুলে ধরেছেন যাতে মনে হয় যে মানুষ তার কর্মগত জীবন পরিচালনা করতে নিজের চিন্তাচেতনার কাছে যেন সামান্যতমও নির্ভরশীল নয়। তাই মার্কস ফয়েরবাখের চিন্তাকে যান্ত্রিক বস্তুবাদ বলে আখ্যায়িত করেন।

উপসংহার: উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়

সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম এবং মার্কসীয় চিন্তাধারায় দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক ধারা হিসেবে বিবেচিত। জার্মান দার্শনিক হেগেল সর্বপ্রথম দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির ধারণা দেন এবং পরবর্তীকালে অনেক সমাজবিজ্ঞানী বিশেষ করে মার্কসবাদীরা এ সম্পর্কে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। তবে সকলের মধ্যে মার্কস এর স্থান সর্বাগ্রে। অন্যদিকে, জার্মান দার্শনিক ফয়েরবাখ দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদকে, মার্কস এর ভাষায়, যান্ত্রিকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বলে মনে করেন।


থিসিস, এন্টি-থিসিস ও সিনথিসিস কী?

ভূমিকাঃ প্রকৃতপক্ষে Karl Marx

সমাজবিজ্ঞানী নন, তারপরও তার ধারণা, তত্ত্ব এবং বিশ্লেষণ বিশেষ করে তাঁর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ধারণা এবং সমাজ ও ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণা মার্কসকে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। সমাজবিজ্ঞানে মার্কসের চিন্তাধারা ও দর্শন বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মার্কসবাদ তথা মার্কসীয় সমাজতত্ত্বের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে বিবেচনা করা হয়। মার্কসের সমাজ ও ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা সমাজবিজ্ঞানকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। তবে মার্কস তার বস্তুবাদী ব্যাখ্যার ধারণা লাভ করেছেন বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক হেগেলের কাছ থেকে। আর হেগেলের ভাববাদী বস্তুবাদের আলোচনায় উঠে এসেছে থিসিস, এন্টি-থিসিস ও সিনথিসিস প্রত্যয়গুলো।


থিসিস, এন্টি-থিসিস ও সিনথিসিস :

সমাজবিজ্ঞানে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার কথা সর্বপ্রথম অবতারণা করেন দার্শনিক হেগেল এবং পরবর্তীকালে মার্কসসহ অন্যান্য সমাজ চিন্তাবিদগণ তাঁকে অনুসরণ করেন। হেগেল তাঁর দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেন প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের মধ্যেই রয়েছে বৈপরীত্য। তাই প্রকৃতির রাজ্যে যেমন eসাদৃশ্য বিদ্যমান তেমনি রয়েছে বৈসাদৃশ্য। হেগেল মনে করেন প্রতিটি জিনিসের সত্য উদঘাটন করার জন্য ভাবের মধ্যে দুটি শক্তি থাকা

১. থিসিস (Thesis): কোন বস্তু বা কোনো জিনিসের বিষয়ে কোনো ব্যক্তি প্রথমে যে ধারণা বা মতামত ব্যক্ত করেন সেটা হলো থিসিস। অর্থাৎ কোনো বস্তু সম্পর্কে প্রথম যে ধারণা করা হয় সেটাকে হেগেল Thesis বলে অভিহিত করেছেন।


২. এন্টি-থিসিস (Anti-Thesis): কোন বিষয় নিয়ে বা কোনো বস্তু সম্পর্কে প্রথম ব্যক্তির ধারণার (Thesis) বিপরীত ধারণার অবতারণা হলে সেটা হেগেলীয় ভাষায় Thesis। অর্থাৎ, বস্তুর সম্পর্কে প্রথম ধারণার বিপরীত ধারণাকে হেগেল Anti Thesis বলে অভিহিত করেন।


৩. সিনথিসিস (Synthesis): Thesis এবং Anti-thesis এর মাধ্যমে নতুন যে ধারণা বা মত গড়ে উঠে তাকে Synthesis বলে। অর্থাৎ বস্তু বা কোনো বিষয় সম্পর্কে প্রথম মত Thesis এবং বিপরীত মত Anti-thesis ক্রিয়ার ফলে নতুন যে মত এর সৃষ্টি হয় সেটাই Synthesis। তবে হেগেল অভিমত ব্যক্ত করেন যে Synthesis-ও স্থায়ীভাবে Synthesis থাকে না।


এই Synthesis- ও কালক্রমে Thesis এবং Anti-thesis এর উদ্ভব ঘটায়।

উপসংহার: উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, হেগেল সৃষ্টি তত্ত্বের মধ্যে দ্বান্দ্বিকতা বা দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে - অভিমত দেন। আর এ দ্বান্দ্বিকতাকে ব্যাখ্যা করতে সে Thesis, Anti-thesis এবং Synthesis প্রত্যয়গুলো ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, Karl Marx বৈপরীত্যের ধারণাটি গ্রহণ করেন যা থেকে Synthesis এর উদ্ভব ঘটে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post