পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে কার্ল মার্কস এর বিচ্ছিন্নতাবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর

পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে কার্ল মার্কস এর বিচ্ছিন্নতাবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর

কার্ল মার্কসের আলোকে বিচ্ছিন্নতাবোধের ভিত্তিতে পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো বিশ্লেষণ কর।

অথবা, মার্কসের বিচ্ছিন্নতাবোধের তত্ত্বটি পুঁজিবাদী কাঠামো বিশ্লেষণে কতটা কার্যকর? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ ভূমিকা: মার্কস বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনি একদিকে যেমন পুঁজিবাদকে নিয়ে আলোচনা করেছেন, অপরদিকে মানুষের প্রকৃতি, সমাজের ইতিহাস, দ্বন্দ্ব, সংগ্রাম প্রভৃতি বিষয়ও তার আলোচনায় স্থান পেয়েছে। তিনি তার জীবনের শেষদিকে কতকগুলো দার্শনিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আলোচনা করেছেন। দার্শনিক চিন্তার ফলশ্রুতিতে তিনি পুঁজিবাদী সমাজের বিচ্ছিন্নতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।

পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে কার্ল মার্কস এর বিচ্ছিন্নতাবাদ তত্ত্ব


বিচ্ছিন্নতা (Alienation):

Marx পুঁজিবাদী সমাজকাঠামো থেকে উদ্ভূত একটি ফলশ্রুতি হিসেবে বিচ্ছিন্নতা (Alienation) কে ব্যাখ্যা করেছেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি খুব কম ব্যবহার করেছেন বিচ্ছিন্নতাকে। অনেক সমাজবিজ্ঞানী Marx এর বিচ্ছিন্নতাকে একটি সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে আলোচনা করেছেন। এখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, একজন ব্যক্তি তার সামাজিক অস্তিত্বের কতিপয় দিক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বা আলোচ্য মনে করেন। Barbalet এর মতে, "In capital Marx seldom uses the term although he employs the concept alienation." (Ritzer, p- 157) Marx তাঁর 'Microscopie Level' আলোচনায় বিভিন্ন বিষয় যেমন- Power, human political, potential, neof self consiousness, activity work socialibity প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মূলত এসং ধারণা থেকেই alienation এর উদ্ভব ঘটে।

সমসাময়িক সমাজ ও বিচ্ছিন্নতা: পুঁজিতা সমাজের বিচ্ছিন্নতাই মার্কসের আলোচনার বিষয়বস্তু। নিয় সমসাময়িক সমাজে বিচ্ছিন্নতার প্রকৃতি ও ধারা আলোচনা বা হলো।

১. Production for co-operation: পুঁজিই সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল সহযোগিতামূলক। এ সমায়ে উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে পুঁজির ব্যাপকতা খুব বেশি ছিল না মালিক শ্রেণি থেকে শুরু করে এ সহযোগিতা কলকারখানার সর্বত্র বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদন বৃদ্ধির সায়ে পুঁজিরও বৃদ্ধি ঘটে। শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সহযোগিতার সম্পর বিনষ্ট হয় এবং এভাবে তারা শ্রেণি বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হয়।

২. Unlimited production: যখন শ্রমিকরা যন্ত্র য পণ্যে রূপান্তরিত হয় তখন তারা বিশ্রামহীনভাবে কাজ করছে থাকে। উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি করে। শ্রমিক শোষণ তীব্রয়া হয়। এর ফলে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়।

৩. Dehumanization of labors যখন একট Factory এর শ্রমিকরা instrument এ পরিণত হয় তখন তাত মনুষ্যত্বহীন থাকে বা যন্ত্র হিসেবেই কাজ করে। কাজের শেষে তার আবার চলে যায়। মূলত এটি একটি মনুষ্যত্বহীন করার প্রক্রিয় যেখানে শ্রমিকরা তাদের মালিক কর্তৃক পুরোপুরি শোষিত হয়।

৪. Labor makes specific relations of production and it's lost: শ্রমশক্তি বা উৎপাদন শক্তি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট উৎপাদন সম্পর্ক সৃষ্টি করে যা সমাজের অভ্যন্তরেও এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এই নির্দিষ্ট সম্পর্কই এক পর্যায়ে শ্রমকে ব উৎপাদনকে শোষণ করে। যার ফলে বিচ্ছিন্নতার শুরু হয়।

৫. Early Phase of compitalism and exploitation of productive force মার্কস বলেছেন, মূলত পুঁজিবাদের আবির্ভাব এবং নির্দিষ্ট সম্পর্ক থেকে শ্রমকে শোষণের প্রক্রিয়া উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন শক্তির মধ্যে চরম মানসিক এবং দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।

৬. Transformation of works into detailed labor and change their character and personality শ্রমিকরা একটি বিস্মৃত শ্রমের মধ্যে জটিল শ্রম বিভাজন এবং বিদেশি বয়নের ফলে স্থানান্তরিত হয় এবং ব্যক্তিত্ব, চরিত্র এবং মানসিকতার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। এই পরিবর্তনো সাথে উৎপাদনের শক্তিরও পরিবর্তন হয়। Marx এ উৎপাদন শক্তির পরিবর্তনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যথা: 

a. Expansion of capital with simultaneous concentration: এটি মূলত শ্রমের ভিত্তিতে পুঁজির বিকাশ। 'Labor theory of value' অর্থাৎ শ্রমের দ্বারা মূল্য সংযোজিত হচ্ছে। ফলে পুঁজির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, বিকাশ হচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে যা পূর্বের কল্পনাকে হার মানাচ্ছে।

b. Detail labor becomes the property and instrument: পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শ্রম একটি পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। যার মালিক অন্যরা হয়ে যাচ্ছে।

c. Fragmentation of old crafts into numerous parts and parts and there by creating detailed labors: Fragmentation হলো অংশবিশেষ ভাগ করে দেয়া। পুরনো manufacturing crafts কে বিভাজন করে দেয়া হচ্ছে।

৭. Development of capitalism and complex division of labor: উৎপাদন ব্যবস্থা জটিল হওয়ায় এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা উন্নততর হওয়ায় শ্রম বিভাজিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে মূলধন যত বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রম বিস্তৃত হয় এবং এভাবে বিভাজনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্র ব্যক্তিসত্তাহীন হয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে Marx বলেন, "Workers are non-alienated from his creative production." অর্থাৎ, Complex division of labor এবং Specialization এর ফলে শ্রমিকরা সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলে। মূলত এ সময়ে শ্রমিকরা একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে চললেও শ্রমিদের ভূমিকা যন্ত্রের মতোই থাকে, যা থেকে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়।

৮. Preserving of working class: Marx এর মতানুসারে, উপর্যুক্ত এসব ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে মালিক শ্রেণি শ্রমিক শ্রেণির ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। মূলত এসব ঘটনার মধ্যদিয়েই বিচ্ছিন্নতা প্রত্যয়টি প্রকৃত রূপ লাভ করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, Marx এর বিচ্ছিন্নতা স্তরের মূল বক্তব্য হলো পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে এবং এর ফলেই বিচ্ছিন্নতার উদ্ভব ঘটে। Marx তার মতবাদে দেখিয়েছেন যে, বিচ্ছিন্নতার মধ্যে বসবাস করতে করতে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে এক সময় সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং এর পরিণতিতে তারা পুঁজিপতি তথা তাদের মালিক শ্রেণির সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে। এভাবে বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী চূড়ান্তভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post