মার্কসবাদের বৈশিষ্ট্য লিখ

মার্কসবাদের বৈশিষ্ট্য লিখ

প্রশ্নঃ মার্কসবাদের বৈশিষ্ট্য লিখ

ভূমিকাঃ বৈপ্লবিক সমাজচিন্তার ধারক জার্মান দার্শনিক কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স । বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সাথে জড়িত সর্বাধিক জনপ্রিয় নাম হলো কার্ল মার্কস।তিনি তারঁ চিন্তাধারা মননশীলতা এর মাধ্যমে এতই প্রভাবিত হন যে কার্ল মার্ক্সকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মার্কসবাদের বৈশিষ্ট্য লিখ

মার্কবাদের বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে মার্ক্সবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।

১। শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব (Theory of class struggle): মার্কসবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্ব। দ্বান্দ্বিকতা এর পাশাপাশি মার্ক্স সামাজিক ক্রমবিকাশে অবদান রাখে। সব সমাজই মূলত শ্রেণী সংগ্রামেরই ইতিহাস।শোষক এবং শোষিত শ্রেণি । প্রভূত্বকারী ও বশ্যতা স্বীকার শ্রেণি, যাদের আছে ও যাদের নেই এ বিপরীত ধর্মী দু শ্রেণীর মধ্যকার বৈষম্য এবং তা থেকে উদ্ভূত শ্রেণি সংগ্রাম সব সমাজেই বিদ্যমান।

২। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ (Dialectic materalism): দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ মার্কসবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কার্ল মার্কস তাঁর দ্বান্দ্বিকতার ধারণা জার্মান দার্শনিক হেগেলের ভাববাদ থেকে লাভ করে। কার্ল মার্কস হেগেলের ভাববাদকে অস্বীকার করে বলেছেন ''হেগেল একদিকে দ্বান্দ্বিক গতিকে অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে চরম সত্তাকে ভাবরুপে ব্যাখ্যা করেছেন।'' মার্কসের মতে চরম সত্তা হলো বস্তু ভাব নয়।

৩। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ (Historical materalism): মার্কসবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ঐতিহাসিক বস্তউবাদ। তারঁ মতে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের প্রধান সূত্রসমূহের প্রয়োগই হচ্ছে ঐতিহাসিক বস্তুবাদ।

৪। রবষ্ট্রতত্ত্ব (Theory of state): কার্ল মার্ক্স রাষ্ট্র সম্পর্কে বলেছেন রাষ্ট্র মানবকল্যাণ ও মঙ্গল সাধনের কোন সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান নয় বরং রাষ্ট্র হচ্ছে কোনো সমাজের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এক সংগঠন। যা সমাজের আকার শ্রেণির উপর প্রভাবশালী শ্রেণির শাসন ও শোষণকে মজবুত করাই এর মূল লক্ষ্য।

৫। বিপ্লব তত্ত্ব (Theory of revolution): মার্কবাদের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হলো বিপ্লব তত্ত্ব। মার্কসীয় তত্ত্ব বস্তুবাদের প্রতিফলন হিসেবে গণ্য হয়। বিপ্লব এমন এক হাতিয়ার যার সাহায্য সামাজিক আন্দোলন দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়ে পুরাতন ধ্যানধারণাকে ধ্বংস করে দেই।

৬। উদ্বৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্ব (theory of surplus value): উদ্বৃত্ত্ব মূল্য তত্ত্ব মার্কসবাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মার্কসবাদীরা মনে করেন পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজির মালিকগণই মুনাফার বৃহত্তর অংশ ভোগ করে থাকেন। সংগত কারণেই এ ব্যবস্থাধীনে শ্রমিক তথা বৃত্তহীন শ্রেণিই শোষিত হয় অধিক পরিমাণে। তিনি আরো বলেছেন কোনো দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য নির্ভর করে উক্ত দ্রব্য বা সামগ্রী উৎপাদন করতে অধিক শ্রম ব্যয় হয় তার উৎপাদন খরচও অধিক। ফলে এর বিনিময় মূল্য ও হয় অধিক। পক্ষান্তরে স্বল্প শ্রম দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময় মূল্য হয় কম। সুতরাং মার্কসের মতে ''দ্রব্যর মূল্য স্থিরীকরণের একমাত্র নির্ধারক হচ্ছে সমগ্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমের পরিমাণ।''

পরিশেষে বলা যায় যে কার্ল মার্কস এর মার্কসবাদী তত্ত্ব তাকে অমর করে রেখেছে। সাম্যবাদীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন মহাপুরুষ ও পুঁজিবাদীদের কাছে ছিরেন একজন অনিষ্ঠকারী।

Previous Post Next Post