সামাজিক বিচ্যুতির কারণসমূহ কী কী লেখ

সামাজিক বিচ্যুতির কারণসমূহ কী কী লেখ

ভূমিকাঃ- অধুনিক সমাজতত্ত্বে সামাজিক বিচ্যুতির কারণ সম্পর্কিত আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সমাজজীবনে স্বৃকীত নিয়ামাবলি কেন লঙ্ঘন করা হয়। সমাজস্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কেউ কেউ কেন সামাজিক আচরণ বিধিকে অমান্য করেন। এ সমস্ত বিষয় সমাজত্ত্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। সামাজিক বিচ্যুতির তেমন কোন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয় না। কোনো একক কারণে বিচ্যুতি হয় না। বিচ্যুত ব্যবহার সমাজজীবনে প্রতিকুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে থাকে। সামজিক বিচ্যুতির পিছনে বহু ও বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান।

সামাজিক বিচ্যুতির কারণসমূহ লেখ

সামাজিক বিচ্যুতির কারণঃ  সামাজিক বিচ্যুতির পিছনে বিশেষ কিছু  কারণ বিদ্যমান। নিম্নে বিদ্যমান কারণসমুহগুলো উল্লেখ করা হলো।

১। সামাজিক পরিবেশঃ ব্যক্তি মানুষের মধ্যে সামাজিক বিধি লঙ্গন করার প্রবণতার কারণ হিসেবে অনেকে প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশকে দায়ী করেন।মানুষ স্বভাবতই আদের মধ্যে সামাজিক দুষ্ক্রিয়তার প্রবণতা দেখা যায়।

২। প্রতিকুল পরিবেশঃ শিশুর মানুষ হবার সময় স্নেহ, ভালবাসা, সহানুভূতি প্রভৃতির প্রয়োজন অত্যান্ত বেশী। শিশুর বেড়ে উঠার পরিবেশে যদি  এসবের অভাব ঘটে তাহলে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে সামাজিক দুষ্ক্রিয়তার সৃষ্টি হতে পারে। যা সামাজিক বিচ্যুতির অংশ।

৩। মানসিক অসামর্থ্যঃ বিচ্যুত ব্যবহারের অন্যতম কারণ হিসেবে প্রচরিত সামাজিক নিয়মনীতির অনুসরণের ক্ষেত্রে অক্ষমতা বা অসাফল্যের কথাও বলা হয়ে থাকে। এই ধরনের মানসিক বৈকল্যের কারণ শারীরিক বা সামাজিক বা উভয়বিধ হতে পারে।

৪। কুসংস্কারঃ অনেক সময় কুসংস্কারের তাড়নায় বা উপকথাগত বিশ্বাসের ভিত্তিতে বিচ্যুত ব্যবহাররের সৃষ্টি হতে পারে এবং হয়। বিশেষত আদিবাসী সমাজে ডাইনি হত্যার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।

৫। ব্যক্তিগত বিষয়ঃ অনেক সময় ব্যক্তিগত বিষয় বিচ্যুত ব্যবহারের কারণ হিসেবে  কাজ করতে পারে। কোন ব্যক্তির ব্যবহারের ইন্ধন তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসতে পারে।

৬। শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ অনেকে আবার সামাজিক দুষ্ক্রিয়তার কারণ শারিরীক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে খোজার চেষ্টা করেন। এই শ্রেণির চিন্তাবিদের অভিমত অনুসারে শরীরবৃত্তে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বিচ্যুত ব্যবহারের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।

৭। অর্থনৈতিক অসাম্যঃ সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে চরম বৈষম্য বিরাজ করলে গরিব ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষ অসন্তোষে ভোগে এবং কখনো কখনো তারা সামাজিক বিধি লঙ্ঘন করে। দরিদ্রতা অনেক সময় অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়, যা সামাজিক বিচ্যুতি সৃষ্টি করে।

৮। শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবঃ সঠিক শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতার অভাবে অনেকেই সামাজিক আচরণবিধি বুঝতে পারে না বা তা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞতাবশত সামাজিকভাবে বিচ্যুত আচরণ করে।

৯। সহচর বা বন্ধুপ্রভাবঃ কিশোর-কিশোরী বা যুবকরা অনেক সময় ভুল সহচরের প্রভাবে মাদক, চুরি, ছিনতাই বা গ্যাং সংস্কৃতির মতো বিচ্যুত কাজে জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে বন্ধু বা সহচরদের আচরণ তাদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

১০। গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবঃ আজকের ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া বা টেলিভিশনের মাধ্যমে নেতিবাচক বিষয় উপস্থাপন অনেক সময় তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে এবং বিচ্যুত আচরণে উৎসাহিত করে।

১১। রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতিঃ রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় অনেক সময় অপরাধীদের রক্ষা করে এবং তাদের বিচ্যুত কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে। এর ফলে সমাজে অন্যরাও নিয়ম ভঙ্গ করতে উৎসাহিত হয়, যা সামাজিক বিচ্যুতির পরিবেশ তৈরি করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধ ও বিচ্যুতির ধরণ কিছুটা একই। বিচ্যুত ব্যবহারের অন্যতম কারণ হিসেবে প্রচলিত সামাজিক নিয়মনীতি অনুসরণের ক্ষেত্রে অক্ষমতা বা অসাফল্যের কথাও বলা হয়। এ ধরনের মানুসিক বৈকল্যের কারণ শারীরিক বা সামাজিক উভয়বিধ হতে পারে। এটি একক কোনো কারণে ঘটে না বরং বহু সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত কারণে সংঘটিত হয়। বিচ্যুত আচরণ শুধু ব্যক্তিকেই নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এর প্রতিকার খুঁজে বের করা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজ

No comments:

Post a Comment