ILO তে বর্ণিত সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা কর।

ILO তে বর্ণিত সংখ্যালঘুদের অধিকার,  গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা


ভূমিকা: আইএলও (International Labour Organization) বা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা, যা ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আইএলও মূলত শ্রমিকদের অধিকার, সামাজিক ন্যায়, এবং শ্রমশক্তির উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন শ্রমিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত আন্তর্জাতিক শ্রম চুক্তি তৈরি ও বাস্তবায়ন করে। ১৯৪৮ সালে আইএলও জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে এবং বর্তমানে ১৮৬টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত।

ILO তে বর্ণিত সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা কর।


সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে ILO-এর সংশ্লিষ্টতার কারণ: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে ILO-এর সংশ্লিষ্টতার কারণ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-


১। সংখ্যালঘুদের নিজ ভাষার কর্মপরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ।

২। সার্বিক পর্যায়ে অসমতায় নিরাসন।।

৩। সঠিক কর্মঘন্টার সমতাভিত্তিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা।

৪। মেধাভিত্তিক প্রকল্পে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির পরিবেশ নির্মাণ।

৫। অসমতামুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।

৬। জাতীয় অর্থনীতিতে সংখ্যালঘুর গোষ্ঠীয় সংযুক্ত করা।

৭। সামাজিক সুবিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্র প্রসার।

৮। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পেশার অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।

৯। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উৎপাদন ব্যবস্থায় আনুষ্ঠানিক স্বীকুরি।

১০। জাতিসংঘের বিভিন্ন মন্ত্রকের কার্যবিধিতে সংখ্যালঘুকে যুক্ত করা।

১১। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সচেতনতা তৈরি।


আইএলও (ILO)-এর গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা

আইএলও (ILO)-এর গঠন ও উদ্দেশ্য: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উদ্ভব ঘটে মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ সালের ১১ এপ্রিল ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে। এ সংস্থাটির উদ্ভব করার সহযোগিতায় ছিল League of Nations বা জাতিপুঞ্জ।

আইএলও-এর গঠন কাঠামো ত্রিপক্ষীয়, অর্থাৎ তিনটি পক্ষ সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ এই তিনটি পক্ষের প্রতিনিধিরা একত্রে সভায় অংশগ্রহণ করে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই সভাকে পার্লামেন্ট বলা হয়। পার্লামেন্টে আইএলও-এর সদস্য দেশগুলির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম আইন, শ্রমিকদের অধিকার, কাজের শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা করে এবং প্রয়োজনীয় নীতি ও চুক্তি প্রণয়ন ও সংশোধন করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লিগ অব নেশনস বিলুপ্ত হওয়ার পর, ১৯৪৮ সালে আইএলও জাতিসংঘের সাথে সংযুক্ত হয়ে তার বিশেষ সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে। বর্তমানে, আইএলও বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ, শ্রম উন্নয়ন, কাজের সুযোগ সৃষ্টি এবং শ্রমিকদের মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আইএলও, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন প্রণয়ন ও প্রস্তাবিত আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করে এবং সেগুলোর বিচার পরিচালনা করে। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অবস্থিত। সমাজের শ্রেণিগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা, শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ন্যায় বিচার প্রদান এবং উন্নয়নশীল দেশকে কারিগরি সাহায্য প্রদানের জন্য ১৯৬৯ সালে আইএলও নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছে।


আইএলও এর সদস্য: বর্তমানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্য হলো ১৮৬টি দেশ, যারা জাতিসংঘের ১৯৪টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশও এ সংস্থার ১২৩তম সদস্য।


ILO-এর কার্যাবলি: আইএলও কেবলমাত্র শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণে কাজ করে না, বরং এটি বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে। নিম্নে সংক্ষেপে সংস্থাটির কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-


১. সভা আয়োজন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ: আইএলও আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন আয়োজন করে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিক, মালিক এবং সরকারের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে। এখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং অন্যান্য শ্রম বিষয়ক নীতি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সংস্থাটি মূলত শ্রমিকদের কাজের শর্তাবলি, পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করে থাকে। যেখানে ত্রিপক্ষ (মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ ও ILO) মিলে সভার মাধ্যমে উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।


২. চুক্তি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন: আইএলও বিশ্বের শ্রমিক সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় আন্তর্জাতিক শ্রম চুক্তি প্রণয়ন করে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে। যা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা পালন করে ।এটি আইএলও-এর একটি প্রধান কাজ।


৩. গবেষণা কার্যক্রম: শ্রমিকদের শ্রম কল্যাণ সম্পর্কিত অনেক গবেষণা ও পর্যালোচনায় ব্যবস্থা করে থাকে সংস্থাটি। The International Centre for Advanced Technical and Vocational Training' নামে ইতালিতে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সবেষণাকর্ম পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


৪. শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন: আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটি কর্মসূচি হলো 'International programme fior the promotion of working condition and environment এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের শিল্পকারখানায় উন্নত, সুশৃঙ্খল এবং স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।


৫. মানবাধিকার সংরক্ষণ: শিশুশ্রম মানবাধিকার বিবর্জিত একটি কর্মকাণ্ড। কিন্তু সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ শিশু শ্রমিক কারখানায় কাজ করছে। এটি শিশুশ্রমের বিলুপ্তি এবং শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। শিশুশ্রম লাঘবের মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রণীত International Programmer on the Elimination of Child Labour-IPEC নামক কর্মসূচির মাধ্যমে সংস্থাটি কাজ করে চলেছে।


৬. শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ: আইএলও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কাজের ঘণ্টা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সমতা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। এটি শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কার্যভিত্তিক সাময়িকীকরণের মধ্যে রয়েছে International Labour Review The year book of labour statistics The Social and Labour in Bulletin যারা সাময়িকী প্রতিবেদন প্রকাশ ও সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শ্রমিকসের অধিকার সংরক্ষণের ভূমিকা রাখছে।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ও শ্রমের অবস্থা ও শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা অবিরত কাজ করে চলেছে। ১৯১৯ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই সংস্থাটি শ্রমের উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে তা বিশ্ব অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। তাই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) জাতিসংঘের একটি অপরিহার্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment