দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ লিখ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ লিখ

ভূমিকাঃপ্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এখানে মানুষের কোন হাত নেই। সুতরাং মানুষ ইচ্ছে করলেই তা প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্কতা এবং দুর্যোগ পরবর্তী সম্মিলিত কর্মতৎপরতা দ্বারা দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যা নূন্যতম পরিমাণে হলেও হ্রাস করা যায়। এ দুর্যোগ পূর্ববর্তী সতর্কতা এবং দুর্যোগ পরবর্তী সম্মিলিত কর্মতৎপরতা পরিচালনার পরিকল্পনা থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্ভব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ লিখ


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ সাধারণভাবে প্রাকৃতির দুর্যোগের ঝুকি হ্রাস ও দুর্যোগজনিত সকল প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার উদ্দেশ্য দুর্যোগ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমূহের বাস্তবায়নের সামগ্রিক কার্যক্রমকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ:-

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দুর্যোগের পূর্বে, দুর্যোগ চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার তিনটি ধাপ রয়েছে। (ক) দুর্যোগপূর্ব পর্যায় (খ) দুর্যোগকালীন পর্যায় ও (গ) দুর্যোগ পরবর্তী পর্যায়।

(ক) দুর্যোগপূর্ব পর্যায়ঃ দুর্যোগপূর্ব পর্যায়ে যেসব প্রস্তুতি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তা হলো- দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জনগণ, প্রশাসন, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও জনগণের করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও জনপ্রতিনিধিদের দুর্যোগ মোকাবেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন। সেচ্ছাসেবক ও জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ । দুর্যোগকালে উদ্ধার, অপসারণ ও ত্রাণ পরিচালনার জন্য জরুরি ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, এবং তা অতিদ্রুত জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও কেন্দ্র গুলোর সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদান করা।

(খ) দুর্যোগকালীন পর্যায়ঃ এ পর্যায়ে দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করার জন্য অপসারণ, তল্লাশি, উদ্ধার, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ এবং ত্রাণ ও পুনঃবাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্য কর্মসূচি পরিচালনার প্রস্তুতি ও আশ্রয়কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়।

(গ) দুর্যোগ পরবর্তী পর্যায়ঃ এ পরযায়ে দুর্যোগের পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ইত্যাদির যে ক্ষতি হয় তা পুনঃনির্ম্নের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন- কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি, কৃষি ঋণের চাহিদা নিরুপণ ও প্রদান, বাসস্থান, রাস্তা সংস্কার, বাঁধ নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার,দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি।

উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগ পুর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী বিষয়গুলো সমন্বয় করে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিকে প্রশমন করা। অর্থাৎ দুর্যোগের ঝুকি হ্রাস ও দুর্যোগজনিত সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা। একটি কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপনায় জনগণ, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন। তাই প্রত্যেক নাগরিকের উচিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রতি সচেতন হওয়া এবং কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।



No comments:

Post a Comment