রাষ্ট্র বলতে কী বুঝ? রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? (what is political science?)

রাষ্ট্র বলতে কী বুঝ? রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান

ভূমিকাঃরাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিজ্ঞান শাখা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠানেরসমূহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র। সমাজের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের উৎপত্তি। মানব সমাজের মানবিক চেতনাবোধ থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। মানুষ জম্মগতভাবে সামাজিক জীব।রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম বিষয়ই হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ছাড়া মানব সমাজ সুসংগঠিত ও নিরাপদভাবে চলতে পারে না

রাষ্ট্র বলতে কী বুঝ? রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী?


রাষ্ট্রের সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্র বলতে এমন কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে বুঝায় যা কোন একটি ভৌগলিক এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। এলাকার রাষ্ট্র বলতে সমাজের শক্তিশালী এক বৃহৎ সংঘকে বোঝায়। রাষ্ট্র হলো এমন একটি সংগঠন, যা বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র সম্পর্কিত একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংগঠন, শাসন প্রণালি ও সরকারের নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা করে।
শাব্দিক অর্থে রাষ্ট্রঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Political Science । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্র বুঝাতে State সর্বপ্রথম শব্দটি ব্যবহার করেন। রোমান দার্শনিকগণ রাষ্ট্র বুঝাতে Victs শব্দটি ব্যবহার করেন। অন্যদিকে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকগণ রাষ্ট্র বুঝাতে Polis শব্দটি ব্যবহার করেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো
  • প্রফেসর বার্জেসের মতে ‘‘কোন একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত জনসমষ্টি হলো রাষ্ট্র।’’
  • অধ্যাপক গার্নারের মতে ‘‘রাষ্ট্র বলতে বুঝায় এমন এক বৃহৎ জনসমাজকে যারা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে ও বহিঃ শক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত এবং একটি সুসংগঠিত সরকার রয়েছে।’’
  • ওপেনহাইপে বলেন ‘যখন কোন নির্দিষ্ট ভূখন্ডে কোন সংগঠিত জনসমষ্টি তাদের সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠা করে তখন রাষ্ট্রে সৃষ্টি হয়।’
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেন ‘কোন নিদিষ্ট ভূখন্ডে আইন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে’
  • অধ্যাপক হল এর মতে-“রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নির্দিষ্টভূখন্ডে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সর্বপ্রকার মুক্ত এমন সমাজকেই রাষ্ট্র বলে।”
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্যাটলিন এর মতে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের রাজনৈতিক কার্যকালাপের ব্যাখ্যা দান করে ও সমাজে বসবাসকারী মানুষের কথা আলোচনা করে।’
  • পল জানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলেন ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা যা রাষ্ট্রে মূলভিত্তি ও সরকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে।’
  • রবার্ট ডালের মতে ‘রাষ্ট্রজ্ঞিান হচ্ছে ক্ষমতা, শাসন, কর্তৃত্ব সংক্রান্ত আলোচনা’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা রাষ্ট্র, সরকার, ক্ষমতা, নীতি, আইন এবং রাজনৈতিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Political Science।

শাব্দিক অর্থ: গ্রিক শব্দ Polis থেকে Politics শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ নগররাষ্ট্র। রোমানরা "Victs" শব্দটি ব্যবহার করতেন। আধুনিক কালে "State" শব্দটি রাষ্ট্র বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান:
ক্যাটলিন: রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে এবং সমাজে বসবাসকারী মানুষের রাজনৈতিক আচরণ ব্যাখ্যা করে।

পল জানে: রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা, যা রাষ্ট্রের মূলনীতি ও সরকার পরিচালনার নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করে।

রবার্ট ডাল: রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো ক্ষমতা, শাসন এবং কর্তৃত্ব সংক্রান্ত গবেষণা।


পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্র।  সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার উদ্দেশ্য মানুষ রাষ্ট্র গঠন করে। রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ হলো মানব কল্যাণে সকল কার্যাবলি পরিচালনা করা।

রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান:

১. জনসাধারণ – নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগণ
২. ভূখণ্ড – একটি স্থায়ী সীমারেখা বিশিষ্ট ভূ-অঞ্চল
৩. সরকার – শাসন ও প্রশাসনের সংগঠন
৪. সার্বভৌমত্ব – দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের সব ধরনের ক্ষমতার অধিকার

No comments:

Post a Comment