আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ কর

আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের বিবরণ দাও


ভূমিকা: বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে (১) পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী গোষ্ঠী এবং (২) দেশের উত্তর-পশ্চিম, মধ্য উত্তর, উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সমতল ভূমিতে বসবাসকারী আদিবাসী গোষ্ঠী। স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে কীভাবে চিহ্নিত করা হবে "আদিবাসী" না "উপজাতি" তা নিয়ে একটি সাংবিধানিক ও ব্যবহারিক বিতর্ক বিদ্যমান রয়েছে।

আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপগুলো উল্লেখ কর


আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

১৯৯২ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ হিসেবে জাতিসংঘ হতে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে পার্বত্য এবং সমতল সব উপজাতীয় অধিবাসীরা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচিত করতে উদ্‌বুদ্ধ হয়। এতে করে সমতল, পাহাড়ি নির্বিশেষে সকল ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক পরিচিতির মূল্যায়ন পেতে পারে। নিম্নে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো-


১. আদিবাসী না কি উপজাতি এ নিয়ে বিতর্ক:  সরকারি স্তর থেকে বারবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই; এখানে আছে 'উপজাতি'। এর ফলে এই পরিচয় ঘিরে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সরকারি বিভিন্ন নথিপত্রেও এই দ্বৈততা লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৫ সালে 'ভারতীয় অর্থনীতি' বইয়ে তাদের "Indigenous hillman" বলা হলেও, জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনপত্রে তাদেরকে “Indigeno” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আদিবাসী পরিচয়ের বিষয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা ও দ্বিধা পরিলক্ষিত হয়।


২. সংবিধানে আদিবাসী/উপজাতীয়তার উপস্থাপন: বাংলাদেশের সংবিধানে ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে উপজাতি কথা উল্লেখ আছে। এখানে উপজাতি বলতে মূলধারায় বাঙালি সমাজের তুলনায় বিচিত্র মানুষের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ২৫-এর অধিক ক্ষুদ্র উপজাতির বাস। আবার উপজাতিদের মধ্যে সমতলে বসবাসকারী এবং পাহাড়ি উপজাতিদের ভিন্নতাও লক্ষ করা যায়। আবার জীবনযাপন, ধর্মবিশ্বাসের অন্যান্য সব বিষয়ে উপজাতি হতে উপজাতিতে ভিন্নতা রয়েছে।


৩. সংবিধানের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ:  এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ হবে বাঙালি” এবং সব নাগরিক “বাংলাদেশি”। ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ অনুচ্ছেদে এই রূপ সংযোজন করা হয়। এর ফলে আদিবাসীরা নিজেদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে উপস্থাপন করার সাংবিধানিক সুযোগ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হন এবং ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসেবে অভিহিত হতে থাকেন।


৪. আদিবাসী সম্পর্কে অধ্যাদেশ জারি: বাংলাদেশে আদিবাসী বা Indigenous বলে কেউ নেই। তাই আদিবাসী বান Indigenious সম্প্রদায় সংক্রান্ত নীতিমালা এখানে প্রযোজ্য হতে পারে না। তারপর The Small Ethnic Group Cultural Institution Act-2010 নামে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে ২০১০ সালে, যাতে আদিবাসী বা Indigenous শব্দের পরিবর্তে 'ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী' শব্দ যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে অভিহিত করার সরকারি নির্দেশনামা প্রচার করা হয়।


৫. বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসী বা উপজাতির স্বীকৃতি: মূলত ২০১১ সালে জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ সংশোধনীয় মাধ্যমে এসব গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা এবং এখনিক জনগোষ্ঠী হিসেবেও অভিহিত করার আইন জারি হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর ১১তম অনুষদ হিসেবে একটি স্থায়ী বিল এনে এই সিদ্ধান্তকে স্থায়ী করা হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানে এরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত হতে থাকেন।


৬. আদিবাসীদের ভূসম্পত্তি ও অন্যান্য সম্পত্তি সংরক্ষণ বিষয়ে নির্দেশনা: সাধারণত আদিবাসীরা ভৌগোলিকভাবে মূলধারার সমাজের মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন অখালে বসবাস করে। অনেক সময় তাদের এই বসবাসস্থল খনিজ সমৃদ্ধ হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইনে তাসের মালিকানাধীন ভূমি এবং অন্যান্য সম্পত্তি রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের মধ্যে অগ্রাধিকার ব্যবস্থাপনা তৈরির জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষরা নিজেদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নয় বরং আদিবাসী বা Indigenous people হিসেবে আন্তর্জাতিক সুবিধা প্রাপ্তিতে বেশি অগ্রহী বিধায় এই নামকরণের সমস্যা একটি জটিল রাজনৈতিকতায় পর্যবসিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment