লেখ ও নকশা কী? গণসংখ্যা নিবেশনের লৈখিক উপস্থাপন ও লেখচিত্র অঙ্কন এবং প্রয়োজনীয়তা

লেখ ও নকশা কী? গণসংখ্যা নিবেশনের লৈখিক উপস্থাপন ও লেখচিত্র অঙ্কন এবং প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা:- পরিসংখ্যানে রাশি তথ্যের সংক্ষিপ্তকরণ করার জন্য শ্রেণি বা ছকের প্রয়োজন হয় কিন্তু ছকের ক্ষেত্রে লেখ ও নকশা তার মধ্যে অন্যতম। কারণ যেসব তথ্য শ্রেণি বা হাতের মধ্যে পাওয়া যায় না সেগুলো দেখা যায় লেখ ও নকশার মধ্যে। তাই একে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলা যায়।

লেখ ও নকশা কী গণসংখ্যা নিবেশনের লৈখিক উপস্থাপন ও লেখচিত্র অঙ্কন এবং প্রয়োজনীয়তা

লেখ ও নকশা সংজ্ঞা:

পরিসংখ্যানে রাশি তথ্যের সংক্ষিপ্তকরণ ও সহজে বোধগম্য করার জন্য শ্রেণি ও ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু যেসব শ্রেণি ও ছকের মাধ্যমে রাশি তথ্যের সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না সেসব রাশি তথ্যের লেখ ও নকশার বা চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। লেখ ও নকশাকে সাধারণত ছক বা কাগজে বা গ্রাফ পেপারে উপস্থাপন করা হয়। ফলে রাশি। তথ্যের সম্বন্ধে সহজে চিত্র ধারণা পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, রাশি তথ্যের জটিলতা এড়িয়ে ছক কাগজে বা সাদা কাগজে বিভিন্ন রেখা বা চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করাকে লেখ ও নকশা বলে।

গণসংখ্যা নিবেশনের লৈখিক উপস্থাপন:

গণসংখ্যা নিবেশনকে বিভিন্ন লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।

১. আয়তলেখ, ২. গণসংখ্যা বহুভুজ, ৩. গণসংখ্যা রেখা, ৪. ক্রমযোজিত বা ক্রমযোথিক গণসংখ্যা রেখা, ৫.  দন্তচিত্র, ৬.বৃত্তচিত্র এগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

১. আয়তলেখ:

গণসংখ্যা নিবেশনকে যে লৈখিক চিত্র দ্বারা সমান্তরাল রেখার উপর লম্বালবি অঙ্কন করা হয় এবং পরস্পর সংযুক্ত আয়তক্ষেত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাকে আয়তলেখ বলে।

২. গণসংখ্যা বহুভূজ:

আয়তলেখের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন আয়তক্ষেত্রসমূহের বাহুগুলোর মধ্যবিন্দুসমূহে সরলরেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে লেখচিত্র পাওয়া যায় তাকে গণসংখ্যাবহুভুজ বলে।

৩. গণসংখ্যা রেখা:

শ্রেণির মধ্যমান অনুযায়ী গণসংখ্যাসমূহ সংস্থাপন করে সংস্থাপিত বিন্দুগুলোকে যুক্ত রেখা ঘরা যুক্ত করলে একটি মসৃণ লেখচিত্র অঙ্কন করা যায়। একে গণসংখ্যা রেখা বলে।

৪. ক্রমযোজিত গণসংখ্যা রেখা:

যে লেখচিত্রের সাহায্যে ক্রমযোজিত গণসংখ্যা বিভাজন প্রকাশ করা হয় তাকে ক্রমযোজিত গণসংখ্যা রেখা অজিভ বলে।

৫. দণ্ডচিত্র:

পরিসংখানিক উপাত্তসমূহকে চিত্র উপস্থাপনের একটি বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো দওচিত্র।

৬. বৃত্তচিত্র:

যে চিত্রের সাহায্যে রাশি তথ্যমালাকে একটি বৃত্তের বিভিন্ন অংশে উপস্থাপন করা হয় তাকে বৃত্তচিত্র বলে। এর কোণের পরিমাপ ৩৬০° ।

গণসংখ্যা নিবেশন প্রস্তুত এবং লেখচিত্র অঙ্কন

তথ্য বিশ্বের কোনো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে ঐ তথ্য বিশ্বের যতগুলো মান থাকবে তার ঐ সংখ্যাকে হলসংখ্যা বলা হয়। পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে এ গণসংখ্যা নিবেশনের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। এ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত তথ্যমালাকে সাজানো গোছানো হয় এবং একটি সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

গণসংখ্যা নিবেশন:

গণসংখ্যা নিবেশন- যথা: ১. পরিসর নির্ণয়। ২. শ্রেণি সংখ্যা নির্ণয়। ৩. শ্রেণিব্যবধান।৪. শ্রেণিসীমা নির্ধারণ। ৫. ট্যালিচিহ্ন। ৬. গণসংখ্যানির্ণয়।

পরিসংখ্যানে গণসংখ্যা নিবেশন উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

লেখচিত্র অঙ্কন:

শ্রেণির মধ্যমান অনুযায়ী গণসংখ্যাসমূহ সংস্থান করে সংস্থাপিত বিন্দুগুলোকে মুক্ত রেখা দ্বারা যুক্ত করলে একটি হলণ লেখচিত্র অঙ্কন করা যায়।


পরিসংখ্যানে লেখচিত্রের প্রয়োজনীয়তা 

পরিসংখ্যানে তথ্য উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সারণি ও লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপনের ফলে তথ্য আরও স্পষ্ট ও বোধগম্য হয়।

লেখচিত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা: পরিসংখ্যানে লেখচিত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ লেখচিত্রের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য স্পষ্ট ও সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়। শিক্ষিত অশিক্ষিত সর্বস্তরের মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে এ লেখচিত্রের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারে। কথায় বলে একটি লেখচিত্র, দশ হাজার অক্ষর অপেক্ষা সহজ বর্ণনা। নিম্নে সংক্ষেপে লেখচিত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো।

১. সহজ, সরল, অকর্ষণীয়:

কোনো ব্যক্তির পরিসংখ্যানে জ্ঞান না থাকলে সে সারণি হতে তত্ত্ব সংগ্রহ করতে পারবে না। কিন্তু লেখচিত্র থেকে তা খুব সহজে সম্ভবপর হয়। কারণ লেখচিত্র তথ্যকে সংক্ষেপে সহজবোধ্য, আকর্ষণীয় আকারে উপস্থাপন করে এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দর্শনীয় হয়ে ওঠে।

২. সরল উপস্থাপন:

লেখচিত্র সরলভাবে উপস্থাপিত হয়। এজন্য এর মাধ্যমে যেকোনো তত্ত্বের বিষয়সন্ত্রস্ত বোঝা সহজ হয় এব এ থেকে এক নজরে পুরো তথ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

৩. তুলনামূলক ক্ষেত্রে:

দুটি তথ্যসারির মধ্যে তুলনা লেখচিত্রের মাধ্যমে খুব সহজে ফুটিয়ে তোলা যায়। যেটি অন কোনো উপায়ে সম্ভব নয়।

৪. গতিধারা ও তথ্যের ক্ষেত্র:

লেখচিত্র তথ্যমালার গতিধারা বা তথ্যের প্রকৃতি অনুধাবন ও বিশ্লেষণে সহায়তা করে।

৫. অন্তর্বর্তী মান নির্ণয়:

লেখচিত্রের মাধ্যমে খুব সহজে তথ্যসারির অন্তর্বর্তী মান নির্ণয় করা যায় এবং খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।

৬. সময় ও পরিশ্রম কম:

কোনো তথ্য সারিবদ্ধ অবস্থার চেয়ে লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করলে তথ্য উদঘাটনের সময় ও পরিশ্রম কম লাগে এবং কাজটি দ্রুত হয়ে যায়।

৭. মধ্যমা ও প্রচুরক নির্ণয়:

কোনো কোনো তথ্যসারির মাধ্যমে মধ্যম, প্রচুরক, চতুর্থক, প্রভৃতি নির্ণয় করা যায়।

৮. কৌতূহলের বহিঃপ্রকাশ:

লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন এর অপেক্ষাকৃত বেশি কৌতূহল বেশি হয়। বিজ্ঞাপনের জন্য তাই লেখচিত্রের ব্যবহার সুবিধাজনক।

৯. নির্ভুল প্রকৃতির:

তথ্যমালার কোনো বিশেষ গতিশীলতা বা প্রবণতা থাকলে তা লেখ থেকে সহজে বুঝা যায় এবং তথ্যের কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তাও চিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন এর সময় ধরা পড়ে। এজন্য বলা যায় যে, লেখচিত্রে কোনো তথ্যমালা উপস্থাপন করলে তা নির্ভুল হয় এবং সুসংঘবদ্ধ হয়ে ওঠে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানিক তথ্য বা উপাত্তকে লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বা সুস্পষ্ট ও সহজভাবে বুঝা যায়। তাছাড়া লেখচিত্র উপস্থাপন চিত্র সংকলিত হওয়ায় এটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং দীর্ঘদিন মনে হয়। বস্তুত এ কারণে লেখচিত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। লৈখিক উপস্থাপন বা লেখচিত্র অঙ্কন গণসংখ্যা নিবেশনে প্রস্তুতকালে একটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গণসংখ্যা নিবেশনের প্রস্তুত বা লেখচিত্র দ্বারা কোনো রেখাকে লম্বালম্বি বিদ্যমান বা রাশি তথ্যকে জটিলতা বর্জন করে উপাত্তসমূহকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করে এবং লেখচিত্র যা গণসংখ্যা নিবেশন পরিসংখ্যানের উপাত্তসমূহকে সহয়া ও বোধগম্য করে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে তথ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

No comments:

Post a Comment