সামাজিক জরিপের বিভিন্ন ধাপসমূহ আলোচনা
সামাজিক জরিপের বিভিন্ন স্তর বর্ণনা কর
ভূমিকা: জরিপ করতে হয় মূলত বিভিন্ন উৎস থেকে। বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। জরিপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন ভূমি জরিপ, বাজার জরিপ, মতামত জবিপ ইত্যাদি। তবে একেক জরিপ একেকভাবে করতে হয়। সব জরিপের কাজ একই ধরনের হতে পারে না। তবে সামাজিক জরিপ হয় মূলত কোন একটি জায়গায় বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে।
সামাজিক জরিপের ধাপসমূহ: সাধারণত সামাজিক জরিপ কতগুলো ধাপ/পর্যায়ে হয়ে থাকে। নিম্নে সামাজিক জরিপের বিভিন্ন ধরনের ধাপ আলোচনা করা হলো।
১. সমস্যা/বিষয়বস্তু: কোন জরিপ কাজ করতে হলে কোন একটি বিষয় নিয়ে জরিপ করতে হবে। যে বিষয় নিয়ে জরিপ করতে হবে তা স্থির করা। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি নিয়ে জরিপ। কাজ করতে হবে সে বিষয়ের সাথে অন্যান্য যেসকল বিষয় অনুসন্ধান করা দরকার এবং এসকল বিষয় এখানে কেন আছে তা দেখতে হবে। তাই জরিপ কাজ করার জন্য প্রথমে সমস্য। নির্ধারণ করতে হবে।
২. সমস্যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা: গবেষণায় সমস্যার ধাপটি করার পর আসে এ সমস্যার পিছনে বিস্তারিত কারণ। কিন্তু গবেষণার সমস্যাটি কোন ধরনের তা বিষয়ের সাথে জড়িত তা উল্লেখ করতে হবে। এ ধরনের গবেষণা পূর্বে হয়েছে কিনা, যদি হয়ে থাকে তাহলে তা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যারা এ ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছে তাদের সাথে কথা বলে জানা যেতে পারে সমস্যাটির জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩. জরিপ প্রশ্নাবলি প্রণয়ন: জরিপ কাজ করার জরিপ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এমন ধরনের কিছু সাধারণ প্রশ্নাবলি প্রণয়ন করতে হবে। কোন জরিপ কাজ করার সময় ঐ জরিপের সাথে জানতে হবে আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যসমূহ, আয়ের সাথে বসবাস ইত্যাদি বিষয় জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তৈরি করতে হবে।
৪. জরিপ প্রশ্নাবলির কার্যকারিতা যাচাই: জরিপ কাজ করার সময় জরিপের জন্য যে সব প্রশ্ন পত্র তৈরি করা হয় তা সরাসরি জরিপে ব্যবহার না করে কৌশলে ব্যবহার করতে হবে। এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এভাবে এদের রূপান্তর পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু চিহ্নিত করে তা তথ্যের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতে হবে। প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশ্নমালা যাচাইয়ের জন্য প্রশ্নমালার কার্যকারিতা জানার জন্য জরিপ কাজ চালাতে হবে।
৫. প্রাপ্ত সম্পদের সহজ ব্যবহার: জরিপ কার্য চালানোর জন্য জরিপের যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো, যেমন- জরিপের নকশা, সময়, জনশক্তি ও প্রয়োজনীয় অর্থ দ্বারা যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রভাবিত হয়। জরিপের সময় অর্থ ও সহকর্মীবৃন্দ অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাই জরিপ কাজ করার জন্য জরিপের নকশা, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, প্রাপ্ত অর্থ সময়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রাখা উচিত। তা না হলে জরিপ কার্য চালানো কষ্ট হয়ে যাবে
৬. তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ধারণ: সামাজিক জরিণ পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য নীতিমালা অনেক সময় দীর্ঘ করতে হয়। কোন একটি প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের জন্য পদ্ধতি কি ধরনের হতে হবে তার জন্য কিছু বিষয় আছে সেগুলো হলো- (ক) পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য জরিপের উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনুসন্ধানমূলক হলে একরকম হবে আর বর্ণনামূলক হলে আর এক ধরনের হবে। (খ) তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা নির্ধারণ করতে হবে। (গ) তথ্য সংগ্রহ করার সময় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় ঠিক অন্য সব তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিতে যে ধরনের ব্যয় হয় তার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
৭. গবেষণা পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন: জরিপ কাজ পরিচালনা করার জন্য একটি পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা না করলে জরিপ কাজ করা যাবে না এবং এর জন্য একটি নকশা প্রণয়ন করতে হবে। কি কাজ করতে হবে এর জন্য কি ধরনের অর্থে বাজেট করতে হবে তার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে গবেষণা নকশা করতে হবে।
৮. তথ্য সংগ্রহ: এটি সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। কোন তথ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে সুশৃঙ্খলভাবে জ্ঞান চর্চা করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। একটি সামাজিক জরিপে তিন ধরনের পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। যথা: (ক) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি, (খ) সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ও (গ) প্রশ্নমালা পদ্ধতি।
৯. তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ: তথ্য সংগ্রহ করার পর যে কাজটি প্রথমে করতে হবে তা হরো তথ্যকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ। তথ্য সংগ্রহ করতে হরে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় তথ্য আসতে পারে এর জন্য জরিপে ব্যবহারযোগ্য করতে চাইলে তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে।
১০. তথ্যের বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা: তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করার পর যে বিষয়টি আসে তা হলো তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করতে পারলে জরিপের প্রকৃত ফলাফল মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।
১১. ফলাফল উপস্থাপন: এটি সামাজিক জরিপ গবেষণার শেষ ধাপ। এখানে জরিপের প্রতিবেদনের সূচিপত্র নির্ধারণ করতে হয়। প্রতিবেদন গঠন কাঠামো উপস্থাপন লেখার ভঙ্গি নির্ভর করে একধরনের লোকের উপর যাদের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে জরিপ হলো সামাজিক গবেষণার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি। বাংলাদেশে এ ধরনের জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করা খুবই কষ্ট হলেও আধুনিক সমাজে এ ধরনের সামাজিক জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার খুবই ফলপ্রসূ। আধুনিক সমাজের অধিকাংশ লোকজন খুবই সচেতন। তারা সমাজের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে ভাবে। সমাজের জন্য কি ধরনের পরিবর্তন ও সংশোধন ও উন্নয়ন আনলে তা সমাজের জন্য কার্যকরী হবে, তা কেবল এই সামাজিক জরিপ পদ্ধতির মাধ্যমে জামা যাবে। সুতরাং, সামাজিক জরিপে যে ধাপ আছে তা ব্যবহার করে করতে পারলে সমাজের জন্য খুবই কার্যকরী হবে।