Class for itself এবং Class in itself কী? শ্রেণী সচেতনতা কি? কিভাবে একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পণ্য সমাজ ও নিজ সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়

Class for itself এবং Class in itself কী? শ্রেণী সচেতনতা কি? কিভাবে একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পণ্য সমাজ ও নিজ সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়

মার্কসীয় সমাজ দর্শনের Class for itself এবং Class in itself বলতে কী বুঝ?

শ্রেণি সচেতনতা বলতে কি বুঝায়? 

ভূমিকা : কার্ল মার্কস সমাজকে পরিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য কতকগুলো প্রত্যয় ব্যবহার করেছেন। এগুলোর মধ্যে আত্মসচেতন শ্রেণি এবং অনাত্মসচেতন শ্রেণি প্রত্যয় দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি প্রত্যয় মার্কসের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে। মূলত কাল মার্কস সর্বহারাদের বৈশিষ্ট্য বিবৃত করার জন্যই এ প্রত্যয় দুটির ব্যবহার করেছেন।

শ্রেণী সচেতনতা কি? কিভাবে একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পণ্য সমাজ ও নিজ সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়

 

আত্মসচেতন (Class for itself) ও অনাত্মসচেতন শ্রেণি (Class in itself):

আত্মসচেতন ও অনাত্মসচেতন আলোচনার ক্ষেত্রে মার্কস এ দুটি প্রত্যয় এর মধ্যে পার্থক্য দাঁড় করিয়েছেন এভাবে তাদের অধিকারও দৃঢ়ভাবে আদায় করার পরিকল্পনা হয়। বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে সংগঠিত করে তোলে। এভাবে সর্বহারা একটি আত্মসচেতন শ্রেণিতে পরিণত হয়। কোনো সমাজের জনগণ নিজেদের অবস্থা এবং পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হতে এবং তার আলোকে সুসংঘবদ্ধ হতে না পারলে শ্রেণিতে পরিণত হতে পারে না। বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে মূল্যায়িত হবে একদিন। তারা অভিন্ন আর্থিক অবস্থার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমাহার। একই গুণ সম্পন্ন এই শ্রেণি হলো অনাত্মসচেতন শ্রেণি। পরবর্তীতে সময়ের স্রোতে সর্বহারা শ্রেণি তাদের স্বার্থ রক্ষায় ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেদেরকে বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করে। এভাবে সর্বহারা আত্মসচেতন মানুষ proletaria. মজুরি থেকে শুরু করে কর্মঘণ্টা এমন কি উৎসব ভাতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কার্ল মার্কস-এর সর্বহারা শ্রেণি প্রথমে আত্মসচেতন ছিলো না।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সর্বহারা শ্রেণি প্রথমে অনাত্মসচেতন ছিল। তারা স্বার্থের ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের স্বার্থ সচেতন হয়ে ওঠে। এভাবে তারা 'Class for itself' গড়ে তোলে।


কীভাবে একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পণ্য সমাজ ও নিজ সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে আলোচনা কর।

ভূমিকা: মার্কস পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শ্রমিকদের মধ্যেই বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রত্যক্ষ করেন। তার বিচ্ছিন্নতার ধারণা অক্ষমতার ধারণার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শ্রমিকদের মনে করেন যে, এ সমাজব্যবস্থায় শ্রমিক তার জৈবিক ক্রিয়া ব্যতীত আর কোনোভাবেই নিজেকে স্বাধীন মনে করে না। তিনি বিচ্ছিন্নতাবোধ প্রত্যয়টিকে সামাজিক বিষয় হিসেবে দেখেন। তিনি মনে করেন পুঁজিবাদী সমাজের বৈষম্য ও শোষণের ফলশ্রুতি হিসেবে বিচ্ছিন্নতাবোধ দেখা যায়। পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে সাথে বিচ্ছিন্নতাবোধের ব্যাপ্তিও বেড়ে যায় এবং একজন শ্রমিক তার উৎপাদিত পণ্য সমাজ ও নিজ সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

শ্রমিকের বিচ্ছিন্নতার ব্যাখ্যা কার্ল মার্কস

বিচ্ছিন্নতাবোধের সাথে আবশ্যিকভাবে শ্রমিক শ্রেণির সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই তার এই তত্ত্বকে Theory of Alienated labour বলা হয়। মার্কস দেখিয়েছেন একজন শ্রমিক কোন কোন ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতাবোধ করে থাকে। তিনি উলেখ করেন একজন শ্রমিক তিনভাবে বিচ্ছিন্নতাবোধের শিকার হয়। এগুলো হলো-

১. উৎপাদিত পণ্য হতে

২. উৎপাদন কর্মকাণ্ড থেকে (নিজ সত্তা)

৩. অন্যান্য মানুষের থেকে (সমাজ)

নিচে এগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. উৎপাদিত পণ্য হতে: শ্রমিক মজুরির বিনিময়ে উৎপাদন করে। আর পুঁজিপতি শ্রমিকের উৎপাদন থেকেই মুনাফা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে। তাই শ্রমিক যত বেশি উৎপাদন করে বেশি পুঁজি বাড়তে থাকে। আর সাথে সাথে শ্রমিক নিজে পুঁজির শক্তির কাছে অক্ষম হয়ে পড়ে। পুঁজিপতি যত ধনী হবে শ্রমিক ততই গরিব হতে থাকবে। এ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায় যে, শ্রমিক যা উৎপাদন করে তা তার কাছে একটি অপরিচিত বস্তু হিসেবে দেখা দেয়। এই শ্রম ফসল তার কাছে একটি ভিন্ন সত্তা অর্থাৎ অপরিচিত বস্তু। এই পণ্য একটি সার্বভৌম শক্তি। এর সাথে যেন শ্রমিকের কোনো যোগ নেই। সে তার উৎপাদিত বস্তু হতে বিচ্ছিন্ন।

২. উৎপাদন কর্মকাণ্ড থেকে (নিজ সত্তা):  উৎপাদিত বস্তু হতে বিচ্ছিন্নতাবোধের ফলে শ্রমিক উৎপাদন কার্য থেকেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে। কেননা উৎপাদিত বস্তু হচ্ছে উৎপাদন কার্যেরই ফসল। শ্রমিক তখন নিজেকে তাঁর উৎপাদনের সাথে পরিচিত মনে করতে পারে না। স্বভাবতই উৎপাদনকার্যের সাথেও শ্রমিক তার একাত্মতা অনুভব করে না। কারণ-

প্রথমত, শ্রম শ্রমিকের কাছে একটা বাইরের জিনিস অর্থাৎ শ্রমের মধ্যে শ্রমিক কখনো আপন সত্তাকে অনুভব করতে পারে না। তাই তাঁর কাছে শ্রমটা বাইরের জিনিস বলেই মনে হয়।

দ্বিতীয়ত, মার্কসের মতে এ ধরনের অনুভূতির মূল কারণ হলো পুঁজিপতির জন্য শ্রমিকের বাধ্যতামূলক শ্রম। শ্রমিকরা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে এবং কাজ করতে বাধ্য হয়। কেননা এছাড়া শ্রমিকের আর কোনো উপায় নেই। পুঁজিবাদী সমাজে উৎপাদনের উৎসসমূহের মালিক হলো পুঁজিপতি। আর তাই শ্রমিক সে সমাজে কেবল শ্রম বিক্রি করে প্রাণ বাঁচাতে পারে। মার্কস এজন্যই এদেরকে সর্বহারা বলেছেন।

তৃতীয়ত, শ্রমকে শ্রমিকের কাজে বাহ্যিক মনে হবার কারণ, শ্রম তার নিজস্ব কিছু নয়।

গ. অন্যান্য মানুষের থেকে (সমাজ): এ ধরনের বিচ্ছিন্নতার সূত্রপাত হয় উৎপাদিত বস্তুর ভোগ এবং মালিকানা হতে। এই ভোগ এবং মালিকানার ফলে পুঁজিপতি শ্রমিককে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভোগ এবং শোষণ থেকেই এ ধরনের বিচ্ছিন্নতার সূত্রপাত ঘটে।

মার্কসীয়দের মতে এই বিচ্ছিন্ন শ্রমের সামাজিক প্রকাশ ঘটে তিনভাবে। যথা:

ক. পুঁজিশক্তির উৎপাদন এবং উৎপাদিত পণ্যের উপর রাজত্বে।

খ. সামাজিক শ্রম বিভক্তির দুইটি বিরোধীরূপে।

গ. শ্রমিকের উপর বাধ্যতামূলক এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত শ্রমের আধিপত্যে।

উপসংহার: উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে মার্কস এর বিচ্ছিন্নতাবোধের ধারণাটি অক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত। তিনি মনে করেন বিশেষায়িত কাজের কারণে এবই কাজ বার বার করার ফলে শ্রমিকের দক্ষতা কমে যাবে এবং এক সময় সে কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলবে। এ কারণে তিনি দেখিয়েছেন একজন শ্রমিক কোন কোন ক্ষেত্র থেকে এবং কীভাবে এ বিচ্ছিন্নতাবোধ করে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post