পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ইতিবাচক ও নেকিবাচক প্রভাব লিখ

ভূমিকা: পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে প্রভাবিত না করে বিশ্লেষণ উদ্দেশ্য নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে অবলোকন করে সেগুলোর সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা। বর্তমানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন-ক্যামেরা, ভিডিও, টেপরেকর্ডার, দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রভৃতি ব্যবহার করেও পর্যবেক্ষণ করা যায়। মাঠকর্ম অনুশীলনে তথ্যসংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে পর্যবেক্ষণ। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার মূলভিত্তি। মনো-সামাজিক অনুধ্যানে বিশ্লেষণ করে সাহায্যার্থীর বক্তব্য ও তার আচরণের মিল খুঁজে বের করার জন্য পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ

তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা লক্ষ্য করা যায়। নিচে পর্যবেক্ষণের সুবিধা তুলে ধরা হলো:

১. ব্যক্তির আচরণ উপস্থাপন: পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হলো এর মাধ্যমে সাহায্যার্থীর আচরণ উপস্থাপন করা যায়। ফলে তথ্যসংগ্রহ করা সহজ হয়।

২. বাস্তব আচরণ সম্পর্কিত তথ্যপর্যবেক্ষণ পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো সাহায্যার্থীকে কোনো প্রশ্ন না করে বাস্তব আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যায় 

৩. শিশু ও প্রতিবন্ধীদের পর্যবেক্ষণ: পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিকট থেকে কোনো মৌখিক প্রশ্ন না করেও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

৪. গোপনীয়তা প্রকাশ না করাযদিও সাহায্যার্থী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রকাশ করতে পারেনা । কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার সম্পর্কে যথাসম্ভব অবগত হওয়া যায়। ফলে প্রকৃত তথ্য জানা যায়।

৫. মাঠ পর্যায়ের তথ্যসংগ্রহ: মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সহজ। এক্ষেত্রে গবেষক মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।

৬. মানবীয় আচরণ: পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সাহায্যার্থীর মানবীয় আচরণ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। এতে সমাজকর্মী বা গবেষকের পক্ষে তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হয়।

৭. সামাজিক রীতিনীতি: সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে আর সমাজের রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত হয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। 

৮. তথ্যদাতার ইচ্ছাধীন: তথ্যদাতা নিজের অনেক তথ্য মৌখিকভাবে বলার সময় গোপন করতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত অনেক গোপন তথ্যও বেরিয়ে আসে।

৯. তথ্যের নিরপেক্ষতা: তথ্য সংগ্রহের সময় পক্ষপাতদৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। এর ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব।

১০. অন্যান্য: এছাড়া পর্যবেক্ষণের অন্যান্য সুবিধাগুলো হলো আচরণীয় তথ্য সংগ্রহ সম্ভব অর্থপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, বিশ্লেষণ দল বা গোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের সঠিকতা ও যথাযথ। বৃদ্ধি, অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠন ও যাচাই প্রভৃতি।

পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ

তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের সুবিধার পাশাপাশি এর কতিপয় অসুবিধাও লক্ষ্য করা যায়। নিচে পর্যবেক্ষণের অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হলো:

১. সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ: পর্যবেক্ষণের একটি অসুবিধা হলো সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে কোনো গুণবাচক বিষয় পরিমাপ করা কঠিন। ফলে সঠিক তথ্য না পাওয়া যেতে পারে।

২. ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ: পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। ফলে সমস্যা সমাধানের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে।

৩. পর্যবেক্ষণের সুযোগ কম: তথ্য সংগ্রহের জন্য বার বার পর্যবেক্ষণ করা যায় না। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণীয় ঘটনা বা অবস্থা বার বার পর্যবেক্ষণ করা যায় না।

৪. অতীত ও ভবিষ্যৎ ঘটনা পর্যবেক্ষনপর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে কেবল বর্তমানকেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। অতীত, ভবিষ্যৎ ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এটি এর সীমাবদ্ধতা হিসাবে বিবেচিত হয়।

৫. মনোভাব জানা: পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মানুষের মনোভাবকে জানা যায় না। অর্থাৎ ব্যক্তির মানসিক অবস্থা সরাসরি জানা যায় না। এ কারণেই দাম্পত্য সম্পর্ক, অপরাধ, যৌন আচরণ প্রভৃতিকে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

৬. ইন্দ্রিয়জাত পর্যবেক্ষণ: ইন্দ্রিয়জাত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ সব সময় সঠিক হয় না। কেননা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য একেক সময় একেক রকম হয়। ফলে এ ধরনের সমস্যা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।

৭. বস্তুনিষ্ঠতা নষ্ট হয়: পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণের আগ্রহ, স্মৃতিশক্তি, পছন্দ, অপছন্দ প্রভৃতির বস্তুনিষ্ঠতা নষ্ট হয়ে থাকে। এর ফলে তথ্য সংগ্রহের এ পদ্ধতির উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

৮. অন্যান্য: এছাড়া পর্যবেক্ষণের অন্যান্য সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নেই, সকল তথ্য জানা যায় না, জনমত যাচাই ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিমাপযোগ্য নয়, সংবেদনশীল বিষয়ে তথ্য দিতে অপারাগত প্রভৃতি।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ করার সুবিধার পাশাপাশি ঋতিপয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কতিপয় অসুবিধা থাকলেও সাহায্যার্থী সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করতে পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব অতাধিক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post