মরণশীলতা কি?
ভূমিকাঃ জনোবিজ্ঞানের কতিপয় মৌলিক ধারণার মধ্যে মরণশীলতা অন্যতম।মরণশীলতা কে মৃত্যুহার বা মৃত্যু সংখ্যা নামে অভিহিত করা হয়। মরণশীলতা জনসংখ্যার আকার আকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত। মরণশীলতা জনসংখ্যার কাঠামোর পরিবর্তন ও সামাজিক পরিবর্তনের অপ্রতিরোধানীয় শক্তি। এটি জৈবিক প্রক্রিয়া সমতার ঋণাত্মক নিয়ামক যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মরণশীলতাঃ সাধারণভাবে বলা যায় যে জীবিত মানুষের মৃত্যুর হারই মরণশীলতা।বিশেষভাবে বলা যায় যে মৃত্যু বলতে জীবন নিঃশেষ হওয়াকেই বোঝায় আর জীবনের নিঃশেষ হওয়ার হারকেই মরণশীলতা বলা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন লেখক ও চিন্তাবিদ মৃত্যুহারের ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা প্রদান করেছেন নিম্নে তাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো।
ডি এম হেয়ার বলেন মৃত্যুহার হলো নির্দিষ্ট বছরের মধ্যে কোন জনসমষ্টির সাথে প্রতি হাজার মৃত্যুর সংখ্যার অনুপাত।
মনোবিজ্ঞানী থমসন ও লুইস এর মতে স্থান মৃত্যুহার প্রকৃতপক্ষে স্থুল জন্মহার এর মতই গণনা করা হয়। কোন জনসমষ্টিতে প্রতি বছর প্রতি হাজারে মোট যত লোক মৃত্যুবরণ করে তাকে স্থুল মৃত্যুহার বলে।
অধ্যাপক পিটার এর মতে মরণশীলতা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছাশক্তির শেষ নিয়ামক বা ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য ব্যবস্থা।
অবস্থা সমাজ বিজ্ঞানী ডেভিড বলেছেন মরণশীলতা হচ্ছে অসুস্থতার পরিণতি বা শেষ অবস্থা এবং এর চরম বিপর্যয় বা মরণশীলতা মৃত্যুমুখে পতিত অবস্থায় শেষ পরিণতির সাথে সম্পৃক্ত।
মওদুদ এলাহী ও কামরুজ্জামান মরণশীলতা সম্পর্কে বলেছেন জনসংখ্যা পরিবর্তনের একটি উপাদান হিসেবে মৃত্যুকে মরণশীলতা বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে মরণশীলতা বলতে জীবনের এমন এক পর্যায়ে বুঝাই যা মানুষের জীবনই শক্তি ও চেতনাকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। তবে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে জনসংখ্যা জন্মরের সাথে মৃত্যুহার বাড়ছে না।
মরণশীলতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
মৃত্যুহার হলো জনসংখ্যার পর্যায়ক্রমিক ও ধারাবাহিক ক্ষয়শক্তি। মৃত্যুহার জনসংখ্যা কে হ্রাস করে। স্বাভাবিক মৃত্যুহার অধিকাংশ সময় সমাজে সম্পদ ও মোট জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করে। বিশ্বের সকল দেশের মৃত্যুর সমান নয়। উন্নত দেশগুলো তাদের জনগণের জীবনমানের অভূতপূর্ব উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জন্ম মৃত্যুহার উভয়ই অধিক পরিলক্ষিত হয়।
মরণশীলতা বা মৃত্যুহারের বৈশিষ্ট্যঃ মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাকে মরতে হবে। নিম্নে মরণশীলতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো।
১। মানুষের স্থায়ী প্রতি সমাপ্তিঃ মানুষের স্থায়ী পরিসমাপ্তি হল মরণশীলতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের স্থায়ী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। পৃথিবীর সকল মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে সে চলে যায় অজানা অসীম শূন্যতায়।
২। মৃত্যুর অর্থ জীবনের অবসানঃ মরণশীলতা বলতে জীবিত জন্ম গ্রহণের পরে মৃত্যুবরণ করাকে বোঝায়। অর্থাৎ যে জিনিসে একবার প্রাণের স্পন্দন অনুভূত হয় সে জিনিসের ওই স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়াকে মরণশীলতা বলে।
৩। জন্ম নিলে মরতে হবেঃ পৃথিবীতে জন্ম নিলে মরিতে হবে। যেকোনো ধরনের প্রাণীই হোক না কেন যার জন্ম আছে তাকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যু এক চিরন্তন সত্য।
৪। মৃত্যু জনসংখ্যার পরিবর্তন ঘটায়ঃ মৃত্যুহার এর মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যার পরিবর্তন সাধিত হয়। যদি জন্ম হরের তুলনায় বেশি হয় তাহলে জনসংখ্যা কমে আর যদি জন্ম হলে তুলনায় মৃত্যু হয় কম হয় তাহলে জনসংখ্যা বাড়ে।
৫। মরণশীলতার সাথে বিভিন্ন বিষয়ক সংশ্লিষ্টতাঃ বয়স, সময়, স্থান, জীবন, মৃত্যুর কারণ প্রভৃতি বিষয় মরণশীলতার সাথে সম্পর্কিত। মৃত্যুর মাধ্যমে প্রাণী এ সকল বিষয়কে অতিক্রম করে যেখানে এগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
৬। জীবনে শক্তি ও চেতনা নিষ্ক্রিয়তাঃ মৃত্যু মানুষের শরীরের জীবনীশক্তি ও চেতনাকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। মৃত্যুর মাধ্যমে যেকোন প্রাণীর প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল হয়ে যায়। তার শরীরে একটি নিশার জড়ো পিন্ড পরিণত হয়।
৭। প্রকৃত মৃত্যুঃ গর্ভপাত বা জীবিত জন্মের পূর্বের মৃত্যুকে প্রকৃত মৃত্যু বলা যায় না কেননা শুধু যার জীবন আছে বরণ করবে গ্রহনের পূর্বে যেহেতু জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত হই না সুতরাং শুধুমাত্র জন্মের পরের মৃত্যুকে আমরা প্রকৃত মৃত্যু বলতে পারি।
৮। মরণশীলতার জীবতাত্ত্বিক দিকঃ মরণশীলতার ব্যাখায় দুটি জীবতাত্ত্বিক দিক রয়েছে। যার একটি হল জীবনের পরিসর আর অন্যটি হলো আয়ুষ্কাল। জীবনে পরিসরের পরিসমাপ্তির মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু হয় এবং তার জীবের কোন মূল্য থাকে না।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন সমাজে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় যতজন মৃত্যুবরণ করে তার হারকে মৃত্যুহার বলে, আর মরণশীলতা ধারণার মধ্যে উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর উপস্থিত থাকে।