মরণশীলতা কি? সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
মরণশীলতা বলতে কী বোঝায়?
মরণশীলতা (Mortality) হল জীবনের স্বাভাবিক পরিসমাপ্তি বা জীবনের চূড়ান্ত অবসান। প্রতিটি প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। বিশেষভাবে বলতে গেলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি হাজার জনসংখ্যার মধ্যে যতজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তাকে মৃত্যুহার (Death Rate) বলা হয়।
বিভিন্ন গবেষক ও চিন্তাবিদ মরণশীলতা সম্পর্কে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেনঃ
ডি. এম. হেয়ার বলেন, “মৃত্যুহার হলো নির্দিষ্ট বছরের মধ্যে কোন জনসমষ্টির প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যার অনুপাত।”
থমসন ও লুইস মতে, “যে হারে একটি জনসমষ্টিতে প্রতি বছর লোক মৃত্যুবরণ করে, তাকেই স্থুল মৃত্যুহার বলা হয়।”
অধ্যাপক পিটার বলেন, “মরণশীলতা হলো মানুষের ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে এক চূড়ান্ত শক্তি।”
সমাজবিজ্ঞানী ডেভিড মনে করেন, “মরণশীলতা অসুস্থতার পরিণতি ও জীবনের চূড়ান্ত বিপর্যয়।”
#মরণশীলতার বৈশিষ্ট্যসমূহ
মরণশীলতা একটি স্বাভাবিক ও বৈশ্বিক প্রক্রিয়া। এর কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১.স্থায়ী পরিসমাপ্তি: মানুষের জীবনের একটি নির্দিষ্ট ও অবশ্যম্ভাবী শেষ ধাপ হল মৃত্যু।
২.জীবনের অবসান: প্রাণস্পন্দনের স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই মৃত্যু।
৩.জন্মের পর মৃত্যু অনিবার্য: “যার জন্ম আছে তার মৃত্যু অবধারিত।”
৪.জনসংখ্যার হ্রাস ঘটায়: মৃত্যুহার একটি দেশের জনসংখ্যার কাঠামোকে প্রভাবিত করে।
৫.বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত: বয়স, স্থান, সময়, মৃত্যু কারণ ইত্যাদি মরণশীলতার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
৬.জীবনীশক্তির স্থায়ী নিষ্ক্রিয়তা: মৃত্যুর ফলে মানুষের সমস্ত চেতনা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
৭.প্রকৃত মৃত্যু: জন্মের পূর্বে গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসব প্রকৃত মৃত্যু নয়; জন্মের পর মৃত্যুই প্রকৃত মরণশীলতা।
৮.জীবতাত্ত্বিক দিক: মরণশীলতা ব্যাখ্যায় দুটি দিক রয়েছে—জীবনের পরিসর ও আয়ুষ্কাল।
মরণশীলতার গুরুত্ব
* মরণশীলতা জনসংখ্যার কাঠামো ও স্বাস্থ্যগত অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
* এটি সমাজের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জীবনের গড় আয়ু সম্পর্কে ধারণা দেয়।
* মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে পারে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা।
* উন্নত দেশে এই হার তুলনামূলকভাবে কম, যা উন্নত জীবনযাত্রার প্রতিফলন।
উপসংহার:
সারসংক্ষেপে বলা যায়, মরণশীলতা বা মৃত্যুহার হলো মানুষের জীবনের একটি অবধারিত ও প্রাকৃতিক পরিণতি, যা জনসংখ্যার কাঠামো এবং সামাজিক উন্নয়নকে সরাসরি প্রভাবিত করে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন অনেক দেশেই মৃত্যুহার কমে এসেছে, তবে এটি এখনো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। মরণশীলতা নিয়ে যথাযথ গবেষণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজে সুস্থ, সচেতন ও টেকসই জনসংখ্যা গঠনের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।