উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞান কি?
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে উন্নয়ন সমাজবিজ্ঞানের আর্বিভাব অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞান অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়ন সমস্যা অর্থাৎ অনুন্নত দেশসমূহ কেন অনুন্নত, উন্নয়নের পথে কি বাধা রয়েছে এবং কীভাবে সেসকল সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞানঃ সাধারণ অর্থে আর্থসামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে সমাজবিজ্ঞানের যে বিষয় বা শাখায় উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকেই উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞান বলে।
Jary and Jary তাদের Collins Dictionary of Sociology গ্রন্থে উন্নয়নের সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন উন্নয়নের সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা যা কৃষিমূলক সমাজ থেকে শিল্পভিত্তিক সমাজে উত্তরণের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে।
Andrew Webster's তার Introduction t the Sociology of Development গ্রন্থে উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে একই সাথে উন্নয়নের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বিদ্যমান সামাজিক বাস্তবতা এবং আধুনিকায়ন তথা শিল্পায়ন, নগরায়ন ও অন্যান্য সামাজিক পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে উন্নয়নমূলক সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা যা সমাজের উন্নয়নকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্লেষণ করে।
উন্নয়নের সূচকসমূহ লিখ
কোন দেশ কতটা উন্নত তা নির্ধারনের জন্য যে মানদন্ড ব্যবহার করা হয় তাই উন্নয়নের সূচক হিসেবে পরিচিত। যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহায়ন ইত্যাদি।
উন্নয়নের সূচকসমূহ: নিম্নে উন্নয়নের সূচকসমূহ উল্লেখ করা হলো।
১। শিক্ষাঃ শিক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হয়। সুতরাং শিক্ষার হার, শিক্ষার মান, জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয় ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়।
২। মৌলিক প্রয়োজনঃ উন্নয়ন পরিমাপের ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
৩। আধুনিকীকরণঃ আধুনিকায়ন বলতে বস্তুগত ও অবস্তুগত দিক বিবেচনায় প্রাক শিল্প সমাজ থেকে শিল্প সমাজে রুপান্তর প্রক্রিয়া।
৪। অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্য অন্তর্ভূক্ত রয়েছে মাথাপিছু আয়, বার্ষিক জি.এন.পি প্রবৃদ্ধি হার, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা, বেকার্ত্বের হার, জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পের ভূমিকা ইত্যাদি।
৫। বস্তুগত জীবনমান সূচকঃ বস্তুগত জীবনমান সূচক মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণের উপর ভিত্তি করে পরিমাপ করা হয়। মরিস ডি মরিস জিবনমান সূচক হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা, জীবন প্রত্যাশা, শিশু মৃত্যুহারকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন।
৬। সাংস্কৃতিকসূচকঃ সম্প্রতি ২০০৪ সালে UNDP এর মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে সাংস্কৃতিক সূচককে উন্নয়নের প্রধান নির্দেশক হিসেবে ধরা হয়েছে। যার মধ্য রয়েছে বহুত্ববাদ ও উদারতাবাদ।
৭। মাব উন্নয়নঃ গড় আয়ুষ্কাল, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জীবনযাত্রার মান সূচক হিসাব করে যে সার্বিক উন্নয়ন সূচক গঠন করা হয় তাকে মানব উন্নয়ন সূচক বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে সময়ের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের সূচকসমূহে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন এসেছে।