আইনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। আইনের মানদন্ডসমূহ লিখ।

আইনের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ড লিখ

ভূমিকাঃ- মানব জীবনে আইনের গুরুত্ব অনেক। আইন হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারনা।আইন হলো সর্বভৌম কর্তৃত্বের আদর্শ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলিক প্রত্যয়ের মধ্যে আইন একটি। প্রত্যক নাগরিক এই আইন শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বিদ্যমান। মানব জীবনের প্রত্যক ক্ষেত্রে আইনের ভূমিকা অপরিসীম।

আইনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর


আইনের বৈশিষ্ট্যঃ আইন মানব সমাজের দর্পণস্বরুপ। বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের  জীবনে আইনের প্রভাব অপরিসীম। নিম্নে আইনের বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ডসমূহ উল্লেখ করা হলো-

১। বিধিবদ্ধ নিয়ামাবলিঃ আইনের প্রথম দিক এটি বিধিবিধানের সমষ্টি। আইন বিশেষজ্ঞদের  মতে আইন হলো কতিপয় বিধিবদ্ধ আচার আচরণ। কোনো বিধানকে আইন হতে হলে তাকে অবশ্যই প্রথা, রীতিনীতি নিয়মকানুনের সমষ্টি হতে হবে।

২। সুস্পষ্টতাঃ সুস্পষ্টতা আইনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। আইনের বিধিবিধান সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ না থাকলে আইনের ধারা উপধারা সাধারণের কাছে সহজবোধ্য নয়। তাই আইনের ধারা ও বিধিবিধান সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে।

৩। সর্বজনীনতাঃ আইন হলো সর্বজনীন ধারণা। আইনের ব্যাপকতা, সর্বভৌমতা আইনের  অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আইন সমভাবে প্রযোজ্য।

৪। অনুমোদনঃ আইনের পিছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও স্বীকৃতি রয়েছে। স্বীকৃতি ও অনুমোদন ছাড়া কোন রীতিনীতি আইনে পরিণত হতে পারে না। আইন হতে হলে কোনো বিধিবিধানকে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রচিত, অনুমোদিত ও স্বীকৃ হতে হবে।

৫। সমর্থনযোগ্যতাঃ আইনের পিছনে সমাজের সমর্থন রয়েছে। আইনের প্রতি সমাজের প্রত্যেক নাগরিক শ্রদ্ধাশীল। শ্রদ্ধার সাথে সমাজের মানুষ আইনকে সমর্থন করে থাকে। আইনের পিছনে সমাজের অধিকাংশের সমর্থন রয়েছে।

৬। যুক্তিসঙ্গতঃ আইন হলো কতিপয় যুক্তিযুক্ত বিধিবিধান।আইন বিশারদদের মতে আইন হলো কতিপয় যুক্তিযুক্ত বিধিবিধান। প্রথা ও বিধিবিধানকে আইন হতে হলে তার পিছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা প্রয়োজন।

৭। প্রয়োগযোগ্যতা (Enforceability): আইন শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। একটি আইন যতই যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায়সঙ্গত হোক না কেন, যদি তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না করা যায়, তবে তার কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। রাষ্ট্র আইন প্রয়োগের জন্য বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে।

৮। মানব আচরণের নিয়ন্ত্রক (Regulator of Human Conduct): আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি মানুষের বাহ্যিক আচরণ বা কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ কী করতে পারবে এবং কী পারবে না আইন সেই নির্দেশনা দেয়। এভাবে আইন সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হয়।

৯। বাধ্যতামূলকতা (Compulsoriness): আইন সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ চাইলেই আইন অমান্য করতে পারে না। আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই বাধ্যতামূলক বৈশিষ্ট্য আইনের কার্যকারিতা ও গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠা করে।

১০। পরিবর্তনশীলতা (Flexibility): সময়ের পরিবর্তনের সাথে সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের চাহিদা ও চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটে। সেই অনুযায়ী আইনও পরিবর্তন হতে পারে। আইন কখনো স্থির নয়।এটি সমাজ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত হয় এবং নতুন নতুন আইন প্রণয়ন হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, আইন হলো কতিপয় যুক্তি ও বিধিবদ্ধ এমন নিয়ামাবলি যার পেছনে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে এবং যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আইন মানব সমাজকে সঠিকপথে পরিচালিত করে থাকে। মানব জীবনে প্রত্যেক নাগরিকের উপর আইনের প্রভাব রয়েছে কারণ মানব সমাজে বসবাসরত সকল নাগরিকদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব সংসারে সর্বস্তুরে আইনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। 

No comments:

Post a Comment