রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত কার্ল মার্কসের তত্ত্ব আলোচনা কর।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত কার্ল মার্কসের তত্ত্ব

কার্ল মার্কস হলেন একজন প্রখ্যাত জার্মান দার্শনিক। অর্থনীতি ছিলো তার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার একমাত্র বিষয়। তিনি সমাজ বিবর্তনের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি সংগ্রাম ও দ্বন্দ্বকে দায়ী করেন। অর্থাৎ দ্বন্দ্বের জন্যই রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত কার্ল মার্কসের তত্ত্ব আলোচনা কর।


রাষ্ট্রে উৎপত্তি সংক্রান্ত মার্কসের তত্ত্বঃ কার্ল মার্কসের তত্ত্বে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যেসব স্তর পাওয়া যায় তা নিম্নরুপ আলোচনা করা হলো
১। আদিম সাম্যবাদী সমাজঃ আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা হলো এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা যেখানে সম্পদের ক্ষেত্রে যৌথ অধিকার, বংশানুক্রমিক পদমর্যাদা ও কর্তৃত্বমূলক শাসনের অনুপস্থিতি এবং সমতাভিত্ত্কি সমাজের সমতাভিত্তিক সম্পর্ক। মার্কসের মতে মানব ইতিহাসে শোষণ প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক কার্যাবলির স্তরবিন্যাস প্রবর্তিত হওয়ায় বহু পূর্বে আদিম আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিলো। আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থায় ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহযোগিতা ছিলো অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তখন সম্পত্তির ও কোন ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না।ছিল না শোষণের অন্যতম হাতিয়ার নামক রাষ্ট্র।
২। দাসভিত্তিক সমাজঃ আদিম সাম্যবাদী ব্যবস্থার পরেই আসে দাসভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। যখন থেকে ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পত্তির সৃষ্টি হয়েছিল আর তখন থেকে সম্পদের অসমবন্টন বিন্যাস শুরু হয়। শোষক শ্রেণির শোষণের ফলে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যেত। ফলে তারা অন্যদের দাসে পরিণত হত। এই দাস ব্যবস্থা প্রচীন গ্রীক রাষ্ট্রে সূত্রপাত ঘটেছিল। মার্ক্সের মতে প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে পশু ও কিছু বিলাসদ্রব্যর ব্যক্তিগত মালিকানার আবির্ভাব ঘটার সাথে সাথে। এই সময় উৎপাদিত দ্রব্য ভোগের চাহিদা মিটিয়েও বাজারে পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হতো। ফলে বণিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। যারা প্রচুর সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হতে থাকে। তাদের কাছে ভূমি ও ভূমিদাস উভয়েই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হতে থাকে।
৩। সামন্ত সমাজঃ মার্কসের সমাজ ব্যবস্থার তৃতীয় স্তরের নাম হলো সামন্তব্যবস্থা বা সামন্ত সমাজ। সামন্ত সমাজ ব্যবস্থা বলতে বোঝায় যা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিকভাবে সরকারের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ সমস্ত বড় বড় প্রভুগুলো হবে স্বশাসিত এবং তারা নিজেদের এলাকায় শাসন করবে। সামন্ত প্রথায় যদিও ভূস্বামীরা ছিলো জমির মালিক তবুও উৎপাদনের দিক থেকে মালিক ছিলো কৃষকরা। কারিগরি শ্রেণি ছিলো যন্ত্রপাতির মালিক। উৎপাদন ছিলো মূলত ভোগের উদ্দেশ্য। ভূস্বামীরা ভূমিদাসকে তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে বাধ্য করতো। তবে দাসরা ভূমিদাসের তুলনায় বেশি অত্যাচরিত ছিল। ভূমিদাসরা একটু হলেও স্বাধীন ছিল যেটা দাসদের ভাগ্যে জোটেনি।
৪। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থাঃ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মূলমন্ত্র হলো সকল দক্ষতা ও সব সম্পদ রাষ্ট্রে কতিপয় কিছু ব্যক্তির কাছে পুঞ্জিভূত থাকবে। এই সময়ে মজুরির বিনিময়ে শ্রমিক নিযুক্ত। ভৌগলিক আবিষ্কার, নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার, নতুন ভূমি আবিষ্কার।এক্ষেত্রে সবকিছু থাকতো গুটিকতক ব্যক্তির ক্ষেত্রে মালিকানা। সমাজে আর একটি শ্রেণি হলো শাাসত ও শোষিত সরবহারা শ্রেণি।
৫। সামন্তবাদঃ সামন্তবাদের মূলকথা হলো কেই খাবে কেউ খাবেনা তা হবেনা, তা হবেনা। এই সমাজ ব্যবস্থায় কোন শ্রেণি বৈষম্য থাকবে না। শ্রেণি সংঘাত থাকবে না, কোন ভেদাভেদ থাকবে না। কোনো প্রকার শোষণ, অত্যাচার, দাস, পরাধীন অবস্থা থাকবে না।পুঁজিবাদী অবস্থা ভেঙে যখন একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে ঠিক তখনই সমাজতন্ত্র ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে। সাম্যবাদ অনুযায়ী একটা নীতি থাকবে সেই নীতি হলো সবাই তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে ও প্রয়োজন অনুযায়ী বোগ করবে।
কার্ল মার্কসের এই তত্ত্ব ছিলো মূলত শাসন, শোষণ দূর করে শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে মানুষ অত্যাচারিত হবে না নায্য অধিকার ফিরে পাবে ও অনাবিল সুখ শান্তিতে বসবাস করবে এটাই ছিলো মার্কসীয় মতবাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 
Previous Post Next Post