বাংলা শব্দের উৎপত্তি কিভাবে? বাংলাদেশের অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে বর্ণণা কর।
👉বাংলা শব্দের উৎপত্তি কিভাবে বা কোথা থেকে?
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেই।
বাংলা শব্দের উৎপত্তিঃ “বাংলা” বা ‘বংগালা’ শব্দটির সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক তথ্য অজানা। তবে ধারণা করা হয় সম্ভবত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবীড় গোষ্ঠী ‘বঙ’ শব্দের ব্যবহার করেন তার থেকেই ‘বঙ্গ’ শব্দটির উদ্ভব। এছাড়া বাংলা ভাষার উৎপত্তিগত দিক হতে ধারনা করা হয় চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। সপ্তম-অষ্টম শতক থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভান্ডারের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা বিকশিত হয়। বাংলা ভাষার লিপি হলো বাংলা লিপি। এছাড়া ভাষা গবেষকদের মতে, তাদের ধারণা আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বা ১ লক্ষ বছর আগে মানুষ তাদের প্রথম ভাষা ব্যবহার করেন। প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন থেকে জানা যায় আফ্রিকার মানুষেরাই সর্বপ্রথম ভাষার ব্যবহার করেছিল। বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে উন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রে। সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তির কিংবদন্তি থাকলেও বাংলা ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন, বাংলা মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে। ইন্দো-আর্য হলো ইন্দো-ইরানীয় ভাষা উপবিভাগের একটি প্রধান শাখা যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রের পূর্বাঞ্চলীয় ধরন।
বাংলাদেশের অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে বর্ণণা কর?
বাংলাদেশের অবস্থানঃ বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও সবুজের সমারোহ পূর্ণ একটি দেশ।এদেশের প্রায় চারপাশে রয়েছে সৌন্দার্য ঘেরা। ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। প্রায় ১৭ কোটিরও অধিক জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনবহুল দেশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের একদিকে সাগর অন্যদিকে ভারত ও মায়ানমার রাষ্ট্র। বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারত এর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্য, বাংলাদেশের পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণ উপকুলে বঙ্গোপসাগর এছাড়া উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ- পূর্ব দিকে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় এবং বিশ্বের বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন প্রাকৃতির সুন্দার্য ভরা সুন্দরবন অবস্থিত । বাংলাদেশ প্রকৃতির সুন্দর গুনের অধিকারী সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার অবস্থিত এছাড়া নদীমার্তৃক এদেশের ভূখেন্ডের উপর চলমান আর্ন্তজাতিক ৫৭ টা নদী বয়ে গেছে। বাংলাদেশ নদীমার্তৃক দেশ । নদী এদেশের এক অপরুপ সুন্দার্য।
বাংলাদেশের জনসংখ্যাঃ বাংলাদেশের আদমশুমারী জুন, ২০২২ পর্যন্ত ১৬,৫১,৫৮,৬১৬ (১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬) জন। যা বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। বর্তমানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,১১৯ জন । যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.৩ঃ১০০। শিশু ও তরুণ বয়সী (০-২৫ বছর) বয়সসীমা মোট জনসংখ্যার ৬০% ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মাত্র ৬%। বর্তমানে বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি। বাকি ২% মানুষ বিহারি বংশোদ্ভূত অথবা বিভিন্ন উপজাতির সদস্য।পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩ উজাতি রয়েছে। এদের মধ্য চাকমা জাতি অন্যতম এছাড়াগারো, সাওতাল বসবাস করে থাকে।
২০২২সালের আদমশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬,৫১,৫৮,৬১৬ (১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬) জন। যার মধ্য মোট পুরুষের সংখ্যা ৮,১৭,১২,৮২৪ (৮ কোটি ১৭ লক্ষ ১২ হাজার ৮২৪) জন। নারীর সংখ্যা ৮,৩৩,৪৭,২০৬ (৮ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ২০৬) জন এবং ৩য় লিঙ্গের সংখ্যা ১২,৬২৯ (১২ হাজার ৬২৯) জন। ২০২২ সালের জনশুমারিতে ১৭৫০৭ টি থানার ৮৫৯৫৭ গ্রামের তথ্য পাওয়া গেছে। মোট জনসংখ্যা ও লিঙ্গভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে সর্বমোট বাসগৃহের সংখ্যা ৩,৫৯,৯০,৯৫১ টি যার মধ্যে পল্লী এলাকায় ২,৭৮,১১,৬৬৭ টি এবং শহর এলাকায় ৮১,৭৯,২৮৪ টি। সর্বাধিক বাসগৃহের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে (৮১,১৯,২০৫ টি ও সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে (১৮,৮৫,০১৭ টি)।
আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সাল অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৯১.৪% মুসলমান, ৭.৯৫% হিন্দু, ০.৬১% বৌদ্ধ, ০.৩০% খ্রিস্টান এবং ০.১২% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ১.০০%। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ১.০১% ও মহিলার ক্ষেত্রে ০.৯৯% । চট্টগ্রাম বিভাগের মোট জনসংখ্যার ২.৯৯% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যা সকল বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং এ হার বরিশাল বিভাগে ০.০৫% যা সর্বনিম্ন।
আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে ৫০ টির মত। এদের মধ্য-
দেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী=চাকমা।
দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী= গারো।
তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী= মারমা।
চতুর্থ বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী=সাওতাল।
Comments
Post a Comment