১৯৬৫ সালের CERD এর মূল নীতিমালাসমূহ আলোচনা কর

CERD-এর মূল নীতিমালাসমূহ আলোচনা কর।


ভূমিকা: ১৯৬৫ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পৃথিবীর সর্বপ্রকার বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে একটি সাধারণ সনদ উপস্থাপন করা হয়, যাতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সাল নাগাদ এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কার্যাবলির ১৯নং প্রতিবেদন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই অধিবেশন, সাধারণ ভাষায় বলা হয় CERD। আর এই অধিবেশনে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাকে CERD চুক্তি বলা হয়। এই চুক্তি মূলত তৎকালীন বিশ্ববাস্তবজ্ঞায় কতকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে কিছু সাধারণ সমস্যা দূরীকরণের উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৬৫ সালের CERD এর মূল নীতিমালাসমূহ আলোচনা কর


CERD-এর নীতিমালা:

জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে সর্বপ্রকার বর্ণগত, জাতিগত, ধর্মগত বৈষম্য রোধকল্পে CERD এর শিরোনামে জাতিসংঘের অধিবেশনে কতকগুলো নীতিমালা প্রস্তাবিত এবং প্রণীত হয়। এই নীতিমালাগুলো নিম্নরূপ-


১নং নীতিমালা-

  • বৈষম্য বলতে বোঝানো হবে ধর্ম, বর্ণ বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ব্যক্তির সাথে বৈষম্যমূলক বা অসমতাসূচক আচরণ, যা তাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তার ন্যায্যতাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে।
  • CERD স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ কোনোভাবেই তার নাগরিকদের সাথে শারীরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোনোরূপ অসম রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করবেন না ও কোনো জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় আইন বৈষম্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করবেন না।
  • নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার দেশে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিক বা অনাগরিক ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে সকলের জন্য নির্ধারিত থাকবে।
  • অবশ্যই CERD স্বাক্ষরকারী দেশে নাগরিক এবং অনাগরিকের উভয়ের ক্ষেত্রে CERD-এর নীতিমালা কোনোরূপ বৈষম্য ছাড়া প্রয়োগ করতে বাধ্য থাকবেন।
  • যদি প্রয়োজন হয় তাহলে দেশে বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা অধিকার পুনরুদ্ধার এবং প্রয়োজনে অধিকার লঙ্ঘিত হলে তার জন্য দায়ী গোষ্ঠী বা ব্যক্তির বিচার, এর শান্তিপ্রদানের জন্য CERD এর দেশসমূহ বিশেষ আদালত, বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং বিশেষ বাহিনী নিয়োগ এ বাধ্য থাকবেন।


২ নং নীতিমালা- 

স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ বৈষম্যমূলক বাস্তবতা পরিহারে যেসব পদক্ষেপ জরুরি ভাববেন তা সত্ত্বর এবং প্রাধান্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবেন। এজন্য তাদের যা যা করতে হবে তা হলো-

  • রাষ্ট্র নিজে বৈষম্যমূলক কোনো কর্মকারের সাথে যুক্ত হবে না বা রাষ্ট্র পরিচালকদের মধ্যে কোনোভাবেই বৈষম্যকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কেউ থাকবেন না।
  • কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বৈষম্য সৃষ্টিকারী কার্যক্রমে যুক্ত থাকে, তবে রাষ্ট্র কোনোভাবেই তাদের সমর্থন করবে না।
  • রাষ্ট্রের সংবিধান, লেখনী, নির্দেশনামা, অথবা অন্য কোনো সরকারি নথি যেন বৈষম্যপূর্ণ না হয়, সেজন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • রাষ্ট্র অত্যন্ত সতর্ক থাকবে, যাতে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বৈষম্য সৃষ্টি করতে না পারে। এতে রাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্টভাবে নজরদারি করতে হবে এবং প্রয়োজনে এমন ব্যক্তি বা সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে
  •  বৈষম্য দূরীকরণের জন্য রাষ্ট্রকে গণপ্রচারণা, সমাজ সচেতনতা এবং মানবাধিকার বিষয়ক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বা গোষ্ঠীগুলোকে সব ধরনের সুবিধা এবং উৎসাহ দিতে হবে। রাষ্ট্রকে এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির এবং এগুলোর বিস্তার ঘটানোর জন্য ভূমিকা রাখতে হবে।

২. ওপরে উল্লিখিত আইনগত কার্যক্রমের পাশাপাশি রাষ্ট্র দেশের অভ্যন্ততে বৈষম্য বিরোধী বৈষম্য বিলুপ্তকারী অর্থনৈতিক, সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রেক্ষাপট সৃষ্টি তার সঠিক বাস্তবায়ন তার বিকাশ বিস্তায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।


৩ নং নীতিমালা:-

রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বৈষম্যমূলক সকল কর্মকান্ত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন সেটা সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক যাই হোক। 


৪ নং নীতিমালা:-

রাষ্ট্র তার সীমানার অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা সংগঠনের নিজেকে উৎকৃষ্টতর Superion হিসেবে প্রকাশভারী কোনো ধরনের প্রচারণা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি থেকে নিজেকে নিরত রাখবেন এবং অন্যদেরকে বিরত রাখতে বাধ্য থাকবে। এজন্য রাষ্ট্র যা যা করবেন তা হলো-

  • নিজেকে উৎকৃষ্টতা বা superiority ঘোষণা করা ব্যক্তিরা, গোষ্ঠী বা সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করতে হবেবেন এবং প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণে বাধ্য থাকবেন।
  • এই প্রকার নিজেকে উৎকৃষ্ট ঘোষণাকারী সংস্থা, সংগঠন বা ব্যক্তির কর্মকাণ্ড যাতে কোনোভাবে দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত না হয় সেজন্য সুস্পষ্ট আইনের বিধান তৈরি করে তা প্রচার বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন।
  • রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও সরকারি অংশের কর্মচারীরা যেন এই ধরনের গোষ্ঠী বা ব্যক্তির কার্যক্রমে নিযুক্ত না হন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।


৫ নং নীতিমলা:-

জাতিগত, ধর্মগত ও অন্যান্য কারণে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর কিছু অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র সরাসরি ভূমিকা রাখবেন। এই অধিকারগুলো হলো-

  • রাষ্ট্রের আইনি দৃষ্টিতে সুবিচার প্রাপ্তির অধিকার।
  • রাষ্ট্রের কোনো সরকারি বাহিনী বা বেসরকারি কোনো মানুষ সংগঠন এবং সম্প্রদায় কর্তৃক যে-কোনো শারীরিক আক্রমণ হতে সুরক্ষা পাওয়ার রাস্ত্রীয় নিশ্চয়তার অধিকার।
  • রাজনৈতিক অধিকার অর্থাৎ রাষ্ট্রের সফল ব্যক্তি জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ভোট দান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ।।

বিভিন্ন ধরনের বেসামরিক অধিকার যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (ক) রাষ্ট্রের সীমার অভ্যন্তরে সকল স্থানে গমন এবং বসবাসের অধিকার।

(খ) যে-কোনো সময়ে দেশ ছাড়া এবং দেশে ফিবো আসার অধিকার

(গ) নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়ার অধিকার।

(ঘ) বিয়ে এবং সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার।

(ঙ) একা বা অন্য কারো সাথে সম্পত্তি মালিকানার অধিকার।

(চ) উত্তরাধিকারের অধিকার।

(ছ) চিন্তা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীন অধিকার।

(জ) স্বাধীন মত ধারণ ও তা প্রকাশের অধিকার।

(ঝ) বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করার অধিকার।

(ঞ) অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার যাতে নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে-

  1. যে-কোনো জায়গায় চাকরি করার, চাকরি ছাড়ার এবং চাকরি হীনতায় চাকরি চাওয়ায় অধিকার।
  2. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং তাতে যুক্ত হওয়ার ৪. অধিকার।
  3. বাড়ি করার অধিকার।
  4. চিকিৎসা এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রাপ্তির অধিকার।
  5. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভের অধিকার।
  6. সাংস্কৃতিক কর্মকারে অংশগ্রহণের অধিকার।
  7. দেশের অভ্যন্তরে সফল জনসংযোগের জায়গা যেমন- হোটেল, রেস্টুরেন্টে যাওয়া ও খাকার অধিকার।


৬ নং নীতিমালা:-

রাষ্ট্র সংখ্যালঘু এবং অসমতার জন্য বঞ্চিত শ্রেণির প্রতি কোনো প্রকার শোষণ এবং অবিচার রোধের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন। যার কাজ হবে যে-কোনো স্থানে যে-কোনো সময়ে সংখ্যালঘু ক্ষমতাহীন অংশের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার ও নির্যাতন ঘটলে তার তাৎক্ষণিক ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ দোষী চিহ্নিত করে শাস্তিবিধান এবং নির্যাতিত অংশের সঠিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।


৭ নং নীতিমালা:-

মূলধারায় শিক্ষাব্যবস্থাতে অত্যাবশ্যকভাবে সংখ্যালঘু এবং বঞ্চিত অংশের বিভিন্ন পরিস্থিতিমূলক এবং তাদের বঞ্চনা নিরাময় বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনা অন্তর্ভূক্ত করা। দরকার হলে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মশালার ব্যবস্থা করা, যাতে সংখ্যালঘুদেরকে শিশুরা অন্যভাবে দেখতে না শেখে।


৮ম নীতিমালা:-

  • প্রতিটি দেশকে ১৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে হবে, যা সংখ্যালঘুদের জন্য কার্যকর পাঠ্যক্রম তৈরি এবং পরিবেশ তৈরির দায়িত্বে থাকবে। এই কমিটির সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরের বিশিষ্ট নাগরিকদের নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। এসব সদস্যরা দেশীয় বাস্তবতা এবং সংখ্যালঘুদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখবেন, এবং এই কমিটি আন্তর্জাতিকভাবে দেশটির প্রতিবেদন পেশ করবে।
  • কমিটির সদস্যদের নির্বাচন হবে গোপন ব্যালট পদ্ধতিতে এবং এটি হবে দেশের অভ্যন্তরের বিশিষ্ট অংশের নির্বাচন। নির্বাচিত সদস্যরা তাদের মধ্যে একজন নেতৃত্বকারী ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন, যিনি এই কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। এছাড়া, এই কমিটির সদস্যরা জাতিসংঘের অধিবেশনের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয় করবেন।
  •  এই কমিটি প্রতিটি তিন মাস পর পর প্রতিবেদন পেশ করবেন। এতে তারা দেশের অভ্যন্তরীণ সংখ্যালঘু জনগণের বর্তমান অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট দেবেন। এই সংগঠন সদস্য হবেন।

ক) এই কমিটির মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।

খ) প্রতি দুই বছর অন্তর জাতিসংঘের মূল নয় সদস্য পরিবর্তিত হবেন এবং সভাপতি এই নয় জন নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারেন।

গ) সভাপতির ছুটি এবং অন্যান্য সময়ে একজন সভাপতি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করবেন যে এই নয়জন মূল সদস্যদের মধ্য হতে নির্বাচিত হবেন।

জাতিসংঘ নিযুক্ত এই সকল কমিটির সদস্য এবং সভাপতি এদের বেতন ভাতা রাষ্ট্র সংঘের সদস্যদের বিভিন্ন অর্থ সাহায্য দ্বারা নির্ধারিত হবে।


৯ম নীতিমালা:-

প্রতিটি দেশের কমিটি প্রতি বছর তাদের দেশের সংখ্যালঘু জনগণের অর্থনৈতিক, আইনগত এবং রাজনৈতিক অবস্থার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং জাতিসংঘের মূল কমিটির কাছে পাঠাবে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতিসংঘের মূল কমিটি একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং তা জাতিসংঘের সভাপতিকে প্রতি বছর বার্ষিক অধিবেশনের পূর্বে দাখিল করবে।


১০ম নীতিমালা:-

জাতিসংঘের সংখ্যালঘু বিষয়ক মূল কমিটি কতকগুলো নিয়ম অনুসরণ করে চলবে। তা হলো-

  • কার্যনির্বাহী সদস্যরা দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
  • সদস্যদের নির্বাচনে জাতিসংঘ মহাসচিবের সরাসরি তত্ত্বাবধায়ন এবং হস্তক্ষেপ থাকবে।
  • সদস্যদের বার্ষিক ও মাসিক, ত্রৈমাসিক সভাগুলো জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে।


১১তম নীতিমালা:-

  • যদি কোনো একটি রাষ্ট্র এর সম্পর্কে সংখ্যালঘুদের সাথে অবিচার নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তাহলে তিন মাগে মধ্যে অভিযুক্ত দেশের এই অবিচারের ব‍্যাপারে ব্যবস্থা। গ্রহণের রিপোর্ট জাতি সংযে পেশ করতে হবে।
  • যদি তাতেও কার্যকর কোনো ফলাফল না হয় তাহলে তিন মাসের মধ্যে প্রথম রাষ্ট্রটি আবার অভিযোগ দাখিল করতে পারবে।
  • নিজদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘুদের অবিচার নির্ঘাতন রোধে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করতে বাধ্য থাকবে।
  • যদি এভাবেও সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে জাতিসংঘের কার্যালয়ে উভয় পক্ষের আলোচনার প্রেক্ষিতে সমস্যা উত্তরসের রাস্তা অন্বেষণ করা হবে।
  • তারপরেও যদি সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে জাতিসংঘের নিজস্ব প্রতিনিধি ঐ দেশে গমন করে ঐ বাস্তবতায় গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।


১২তম নীতিমালা:-

জাতিসংঘ, প্রেরিত তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি এডহক কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি সমস্যাস্থলে গিয়ে অত্যাচারিত পক্ষ এবং অন্য সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে কথা বলবে, এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। কমিটির সদস্যরা সংশ্লিষ্ট দেশের পক্ষ থেকে নির্বাচিত হবে এবং তাদের কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে জাতিসংঘের মহাসচিব থাকবে। প্রয়োজনে, কমিটির সভা এবং আলোচনা জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রকে, কমিটির সদস্যদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং অর্থনৈতিক, আইনগত ও অন্যান্য সুবিধা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে


১৩তম নীতিমালা:

সদস্যরা তাদের কাজের ভিত্তিতে পরিস্থিতির উত্তরণে কী কী করণীয় হতে পারে তার একটি বিবরণী তৈরি করবেন। এবং এডহক কমিটির সভাপতির মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশের সরকারকে অবহিত করবেন একই সাথে আতিসংঘের সদর দপ্তরে মহাসচিবের নিকট অবহিত করবেন।


১৪তম নীতিমালা:-

যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট দেশ জাতিসংঘের নির্ধারিত সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে না বা তাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘের সদস্যরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। যদি কোনো পক্ষ সংঘে কার্যরত সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তাহলে সেই বিষয়টি জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অবহিত করা হবে।

যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়, তবে সেটি আন্তর্জাতিক আদালতে পিটিশন হিসেবে দাখিল করা হবে। পিটিশনটি তিন মাসের মধ্যে রাষ্ট্রকে জানানো হবে, এবং যদি রাষ্ট্র অভিযোগকারীর দাবি নিরসনে ব্যর্থ হয়, তবে পিটিশনটি গৃহীত হবে। পিটিশনকারী যদি জাতিসংঘের সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তবে তা বিশ্বস্ত প্রমাণ হিসেবে পরিগণিত হবে এবং পিটিশনকারীকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।


১৫ তম নীতিমালা:-

যেসব মানবাধিকার সংস্থা, যারা সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে, তারা অভিযোগ দাখিল করবে বা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে প্রতিবেদন দেবে, সেগুলির ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধান প্রক্রিয়া আগের আলোচনার অনুসারে সামগ্রিকভাবে একইভাবে কার্যকর হবে।

যদি কোনো দেশ বা সংস্থা অভিযোগ উপেক্ষা করে বা যত্নসহকারে তার সমাধানে উদ্যোগ না নেয়, তাহলে জাতিসংঘের মহাসচিব সরাসরি দায়ী থাকবেন এবং তাঁর অধীনে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এছাড়া, জাতিসংঘের দপ্তর বা অন্য কোনো প্রশাসনিক সংস্থা যদি অভিযোগ গ্রহণ করে এবং সেগুলি সরাসরি সংখ্যালঘু অধিকার সংশ্লিষ্ট কমিটি বা জাতিসংঘের দায়িত্বরত অংশ কাছে না পাঠায়, তবে তা অভিযোগ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করবে। এই ক্ষেত্রে মহাসচিব নিশ্চিত করবেন যে, সমস্ত অভিযোগ এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিষয়গুলি একই গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে এবং সমাধানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

অন্যথায়, যেকোনো অযোগ্যতা বা দায়িত্বহীনতার ক্ষেত্রে, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য মহাসচিব তাঁর সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য থাকবেন।


১৬তম নীতিমালা:-

যদি কোনো নির্দিষ্ট দেশ জাতিসংঘ প্রস্তাবিত পদ্ধতির বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং তা জাতিসংঘকে জানায় না, তবে জাতিসংঘ কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না, তবে মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সেই দেশ নিজস্ব এবং দেশীয় পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধান করার অধিকার রাখবে।

এমনকি, যদি কোনো বিশেষ দেশ মানবাধিকার বিষয়ক সমস্যা সমাধানে নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চায়, জাতিসংঘ সেই দেশকে সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে বাধ্য থাকবে, তবে তা মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বিশ্ব শান্তির জন্য সুষ্ঠু এবং কার্যকর হতে হবে।


১৭তম নীতিমালা:-

জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ যেকোনো প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরাসরি বা অপ্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখতে পারবেন। জাতিসংঘ এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না, বরং সদস্য দেশসমূহকে তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনের জন্য উৎসাহিত করবে এবং সহায়তা প্রদান করবে।


১৮তম নীতিমালা:-

সদ্য স্বাধীন বা জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন করে নি এমন দেশের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।


১৯তম নীতিমালা:-

এই নীতিমালা পাস হওয়ার পর, চুক্তিনামার ২৭তম অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতিসংঘের  সঠিক অর্থ অনুদান নিশ্চিত করার পর, ১৩তম কার্যদিবস থেকে, স্বাক্ষরকারী দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই নীতিমালাটি অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে।


২০তম নীতিমালা:

এই নীতিমালার কোনো অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে যদি কোনো রাষ্ট্র মত প্রকাশ করে বা কোনো বিষয় সম্পর্কে দ্বিমত প্রকাশ করে, তবে ঐ রাষ্ট্র অভিযোগকারী দেশ হিসেবে মহাসচিবকে অবহিত করবে এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক পরবর্তী সভা কার্যবিবরণীতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এরপর, জাতিসংঘের সভাপতি সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন করবেন এবং অভিযোগের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোটাভুটি করবেন। যদি দুই তৃতীয়াংশ সদস্য অভিযোগকারী দেশের পক্ষে ভোট দেন, তবে অভিযোগের ভিত্তিতে নীতিমালা সংশোধন বা বাতিলের জন্য পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, নিয়মিত নির্ধারিত সময় ৯০ দিনের মধ্যে, ঐ নীতিমালা সংশোধন বা বাতিল করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এবং তা জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হবে। পরবর্তীতে, মহাসচিবের সরাসরি তত্ত্বাবধানে  সংশোধিত বা বাতিল করা নীতিমালা প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করতে হবে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নীতিমালার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে এবং পরিবর্তিত বিধি অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এর আলোকে পরিচালিত হতে হবে।


২১তম নীতিমালা:

কোনো একটি নীতিমালা বাদ দিতে হলে জাতিসংঘ মহাসচিবের লিখিত নির্দেশ জারি হবার পর তা কার্যকর করবার জন্য এক বছর সময়কাল পর্যন্ত সরকার ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে সময় দেওয়া হবে।


২২তম নীতিমালা:-

যদি নীতিমালায় কোনো একটি অধ্যাদেশ কার্যকর বিষয়ে দুই বা ততোধিক দেশের নিজেদের মধ্যে দন্দ্ব নিরসনে এরা ব্যর্থ হয় তাহলে এই দন্দ্ব সরাসরি আন্তর্জাতিক আদালতে তা অভিযোগ আকারে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পেশ করা হবে।


২৩তম নীতিমালা:

প্রয়োজনে যে-কোনো একটি নীতিমালা পুনর্মূল্যায়নের জন্য কোনো লিখিত আবেদন করতে পারবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর যে-কোনো সময়ে।


পরিশেষে বলা যায় যে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৬৫ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবীর সর্বগ্রাফিক বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত প্রথম প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ এ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা বৈষম্য দূরীকরণে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এই চুক্তির মাধ্যমে, জাতিসংঘ পৃথিবীজুড়ে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট এবং ব্যাপক কাঠামো স্থাপন করে, যা ভবিষ্যতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে তাদের শাসনব্যবস্থা, আইন ও সমাজব্যবস্থায় বৈষম্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ দিয়েছে।

CERD (The International Convention on the Elimination of All Forms of Racial Discrimination)-এর অন্যতম লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো, পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য স্বাধীনতা, সমান সুযোগ, এবং সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ নিশ্চিত করা। এই চুক্তি মানবাধিকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে কাজ করছে, যা বৈষম্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী অবস্থান গ্রহণে এক বড় পদক্ষেপ।

এর মাধ্যমে, দেশগুলোকে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষা এবং মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করা হয়, যা মানবতার জন্য একটি অমূল্য অবদান।

No comments:

Post a Comment