সাহিত্য সমীক্ষা বলতে কি বুঝ? সাহিত্য সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, সাহিত্য পর্যালোচনা কাকে বলে? এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব আলোচনা কর।
ভূমিকা: গবেষণা হলো পুরাতন জ্ঞানের সাথে নতুন জ্ঞানের সংযোজন। আর সাহিত্য সমীক্ষা হলো গবেষণার একটি যাওয়া হয় তখন সাহিত্য সমীক্ষার প্রয়োজন হয়। সামাজিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা উভয়ের জন্য সাহিত্য পর্যালোচনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহিত্য সমীক্ষার মাধ্যমে গবেষণাকে পরিমার্জিত ও তথ্য বহুল করা হয়। মূলত বিভিন্ন তথ্যাবলি বিশেষ করে পাঠযোগ্য বই, জার্নাল প্রভৃতি তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণার বিষয়কে আরও ফলপ্রসূ করা হয়।
সাহিত্য সমীক্ষা পর্যালোচনার সংজ্ঞা: সাধারণত গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্বকৃত প্রাসঙ্গিক উপকরণ ব্যবহার করার নামই
হলো সাহিত্য সমীক্ষা। অর্থাৎ, কোন গবেষণা কার্য শুরু করার পূর্বে ঐ গবেষণা সংশ্লিষ্ট যেসব জ্ঞান আছে তা জানার জন্য জার্নাল, বই, প্রবন্ধ 'ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে পাঠ পর্যালোচনা করাকে সাহিত্য সমীক্ষা বলে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: ফিলিপস-এর মতে, "সাহিত্য সমীক্ষা হলো অজিত জ্ঞানের বাইরে গবেষণা সমস্যাকে কিভাবে সংযোজিত করা যায় তার একটি দিক নির্দেশনা।"
G. J. Mouly (মওলী)-এর মতে, "The review of the literature is an exacting task, calling for a deep insight and eler perspective of the over all field."
ওয়াল্লার আর বর্গ-এর মতে, "সাহিত্য সমীক্ষা গবেষণা প্রতিবেদন ও কোন ব্যক্তির পরিকল্পিত গবেষণা অনুকল্প সংশ্লিষ্ট মতামতের অবস্থান নির্ণয়, পাঠ ও মূল্যায়নকে নির্দেশ করে।"
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর অ্যাল্যকে বলা যায় যে, গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে ধারণা লাঙ্কের জন্য পূর্বে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয় যা উপকরণ ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে বলা হয় সাহিয়া সমীক্ষা। আর এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, সানিতা সমীক্ষা গবেষণার পাইক দিক নির্দেশকের ভূমিকা পালন করে থাকে।
সাহিত্য সমীক্ষার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা: যে কোন গবেষণার কোন বিষয় জানতে গবেষককে সাহায্য করে সাহিতা সরীক্ষা। সাহিত। পরীক্ষা ব্যাতীত কোন গবেষণার পরীতে যাওয়া যায় না। আত্মাড়া কোন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে সাহিয়া সমীক্ষা সাহায্য করে থাকে। নিম্নে সাহিত্য সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
১. গবেষণা সমস্যার সীমা নির্ধারণ: গবেষণায় বিষয়টি নির্ধারণ করার পর প্রথমে গবেষককে জানতে হয় গবেদগার পরিধি কতটুকু। এরপর সমস্যার প্রকোপ, প্রভাব ব্যাপকতা, সম্ভায্য কারণ সম্পর্কে বিস্তারির জন্য অপরিহার্য হয়ে গড়ে। আর এসব বিষয় সম্পর্কে ভালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাহিত্য সমীক্ষা ব্যতীত সম্ভব নয়।
২. উদ্দেশ্য নির্ধারণ: গবেষনার উদ্দেশ্যের সাথে সাহিত্য সমীক্ষা ও ররগ্রোয়ভাবে জড়িত। গবেষণায় বিষয়বস্তু নির্ধারণের পর এর সঠিক উদ্দেশ্য ও নির্ধারণ করতে হবে। কোন বিষয়ে করা হাব কি কারণে করা হবে, কখন বাস্তবায়ন করা হবে ইত্যাদি নিনির উদ্দেশ্য থাকতে হবে যা সাহিত। সমীক্ষা গবেষককে ধারণা নিয়ে নাকে।
৩. নতুন শব্দ সৃষ্টি: সাহিত্য সমীক্ষা নতুন ও হুগোপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়তা করে থাকে। চিন্তাচেতনা লায়ে এটা সহায়ক। কেননা, সাহিত্য সমীক্ষায় সর্বদা নতুন শব্দ সৃষ্টি করতে হয়।
৪. উপযুক্ত পদ্ধতি নির্ধারণ: সাহিত্য সমীক্ষার মাধ্যামে উপযুক্ত পদ্ধতি নির্ধারণ করা যায়। সাহিত্য সমীক্ষা একজন গবেষককে গবেষণাক্ষেত্রে উপযুক্ত গদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ করতে সহায়তা করে থাকে। কেননা, সাহিত্য সমালোচনায় কাজই হলো গবেষণাকে সহায়তা করা।
৫. পুনরাবৃত্তি এড়ানো: সাহিত্য সমীক্ষা গবেষণায় সব সময় পুনরাবৃত্তি দূর করতে সহায়তা করে থাকে। গবেষণার সবচেয়ে খারাপ দিক হলে। কোন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটানো। আর দূত করতে সাহিত্য সমীক্ষা আবশ্যক।
৬. যথার্থতা নিরূপণ: সাহিত্য সমীক্ষা গবেষকের গবেষণার বিষয়ে যথার্থতা নিরূপণে সহায়তা করে থাকে। এখানে বিষয়বস্তু্কে যথার্থরুপে নির্ধারণ করা হয়, যা সাহিত্য সমীক্ষা কাজ করে।
৭. অনুমান গঠন: অনুমান গঠনে সাহিত্য সমীক্ষা কাজ করে থাকে। কেননা, সাহিত্য সমীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটা গবেষকে অনুমান নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। গবেষক বিভিন্ন বই, জানান, পুজদ, পত্রপত্রিকা প্রভৃতি অধ্যয়ন করে এ ধারণা পেয়ে থাকেন।
৮. অনুসন্ধানের কৌশল: গবেষণা কর্মে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানের বিষয় নিরাহণ এবং মৃতুন নতুন কল্যাশ্রীশদ নির্ধারণে সাহিত্য সমীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গায়েক। সাহিত্য সমীক্ষায় মানাতে কি অনুসন্ধান করতে হবে এবং কোদ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান করতে হবে তা জানা সম্ভব হয়।
৯. মতামত: সমসাময়িককালে বিরাজমান সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্তির মহমেত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন সাহিত্য সমীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব গবেষণাকার্য পরিচালিত হয়েছে সেসব বিষয়ে অধ্যয়ন করা জরুরি।
১০. গবেষককে নির্ভরযোগ্য করে: উপযুক্ত Reference গবেষককে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে থাকে যা সাহিত্য সমীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
১১. নকশার মানোন্নয়ন: গবেষণার সমস্যা নির্ধারিত হওয়ার পর পাবষণা নকশা প্রণয়ন করা হয়। নকশা প্রণয়ন করার সাথে গবেষণার উদ্দেশ্য যৌক্তিকতা, গবেষণা পদ্ধতি সমর, বাজেট ইত্যাদি মানোন্নয়নে সাহিত্য সমীক্ষা অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে।
১২. উপকরণের অপচয় রোধ: গবেষণার সাথে সংশ্লিত্ব, যেমনঃ অর্থ, সময়, বাজেট, প্রশ্রম ইত্যাদির অপচয় রোধে সাহিত্য সমীক্ষা সহায়তা করে থাকে। সাহিত্য সমীক্ষার মাধ্যমে সমজাতীয় গবেষণায় কি পরিমাণ খরচ, শ্রম ও সময় প্রয়োজন হয়েছে তা জানা গেলে পরবর্তী গবেষণায় অনেক ভুলভ্রান্তি দূর করে অপচয় তোর করা সম্ভব হয়।
১৩. পরবর্তী গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি: গাবষণা সমস্যা নির্ধারণ করার পর সংশ্লিষ্ট গবেষণায় কি কি সীমাবদ্ধতা ছিল এবং কি কি বিষয় উদঘাটিত হয়নি তা জানতে সাহিত্য সমীক্ষা প্রয়োজন। সাহিত্য সমীক্ষার ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করা যায়।
১৪. গবেষণার পটভূমি ও ইতিহাস: গবেষণা সমস্যার পটভূমি ও ইতিহাস জানতে সাহিত্য সমীক্ষা প্রয়োজন। গবেষণার পটভূমি জানতে গবেষককে অবশ্যই সাহিত্য সমীক্ষা জানতে হবে।
১৫. গবেষণার যৌক্তিকা: গবেষক গবেষণার জন্য বর্তমানে যে বিষয়টি নির্ধারণ করবেন তা যৌক্তিকতা গঠনের জন্য সাহিত্য সমীক্ষার প্রয়োজন হয়।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণা কর্মে গবেষণা বিষয় নির্ধারণ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত গবেষককে সাহিতা সমীক্ষার সাহায্য নিতে হয়। গবেষণায় ব্যবহাত প্রচলিত সব ধারণার উপযুক্ত ব্যাখ্যা সংজ্ঞায়ন প্রভৃতি দিয়ে থাকে সাহিত্য সমীক্ষা। মোট কথা সাহিত্য সমীক্ষা ব্যতীত গবেষক গবেষণায় কাজ পরিচালিত করতে পারবে না এতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, বস্তুগত ও অবস্তুগত জ্ঞানের ক্ষেত্রে সমীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।