কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর সমাজদর্শন বিস্তারিত বিবরণ দাও । অথবা, মার্কসবাদের মূলনীতিসমূহ বর্ণনা কর

কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর সমাজদর্শন বিস্তারিত বিবরণ দাও । অথবা, মার্কসবাদের মূলনীতিসমূহ বর্ণনা কর

📚 কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর সমাজদর্শন বিস্তারিত বিবরণ দাও। 

অথবা, মার্কসবাদের মূলনীতিসমূহ বর্ণনা কর।

সমাজ বিকাশের সাথে উৎপাদন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে  কার্ল মার্কস (Karl Marx) যে তত্ত্ব দিয়েছেন তাই মার্কসীয় তত্ত্ব । অন্যভাবে বলা যায় যে, সমাজ বিবর্তনের সাথে উৎপাদন ব্যবস্থায় দুটি শ্রেণী বিদ্যমান একটি হলো শ্রমিক শ্রেণী অন্যটি মালিক শ্রেণী ।

কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর সমাজদর্শন বিস্তারিত বিবরণ দাও


 শ্রমিক শ্রেণী উৎপাদন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তারা নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত । ফলে শ্রমিকের সাথে মালিকের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। আর এ ধরনের দ্বন্দ্ব থেকে রুপ নেয় সংগ্রামের। এ মূল বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর মার্কসীয় তত্ত্ব। কোন সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা কোনো একটি শ্রেণীর অনুকূলে কাজ করে।

কার্ল মার্কসের সমাজদর্শন বা মার্কসবাদের মূলনীতিঃ

সমাজ দর্শনে কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর সবচেয়ে বড় অবদান হলো সমাজতন্ত্রকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা। কার্ল মার্কসের সমাজদর্শন ইউরোপিয়ান সমাজতন্ত্রের অবাস্তব ও কাল্পনিক গন্ডি থেকে সমাজকে মুক্ত করেন। কার্ল মার্কসের তত্ত্ব কতকগুলো মূলনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। নিম্নে কার্ল মার্কসের মূলনীতিসমূহ আলোচনা করা হলো-

১। শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাঃ কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর তত্ত্বের অন্যতম একটি মূলনীতি হলো শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রে মূল লক্ষ্যেই হলো শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। শ্রেণিহীন সমাজ ব্যবস্থায় দরিদ্রের অবসান ঘটে এবং শাসক ও শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটে।

২। রাষ্ট্রে বিলোপ সাধনঃ কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর তত্ত্বের অন্য আরেকটি মূলনীতি হলো রাষ্ট্রের বিলোপ সাধন। সর্বহারা শ্রেণিদের দ্বারা যখন একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে তখন কোনো মানুষের মাঝে আর কোন ভেদাভেদ থাকবে না। অর্থাৎ সবধরনের শ্রেণি বৈষম্য অবসান হবে। শ্রেণি বৈষম্যর পরিপূর্ণ বিলোপসাধনের মধ্যদিয়ে শ্রেণিহীন সমাজের প্রতিষ্ঠা হয়। আর এক সময়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজন শেষ হয় বলে রাষ্ট্রের বিলোপ ঘটে।

৩। শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কতন্ত্রঃ শ্রেণি বা শ্রেণিদের একনায়কতন্ত্রকে কার্ল মার্কসের সমাজ দর্শন বা মাকর্সবাদের মূলনীতি হিসেবে চিহিৃত করা হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ সাধনের ফলে সমাজে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। আর ব্যক্তিগত সম্পত্তির তখনই বিলোপ ঘটে যখন কোনো সংগ্রামের ফলে পুঁজিবাদী তাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে এবং ক্ষমতা চলে যাবে শ্রমিক সর্বহারাদের হাতে।

৪। ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যাঃ বস্তুই হলো চরম সত্য একথাটাই মার্কসবাদের মূল কথা। কেননা কোনো বস্তু থেকেই প্রাণ, মন, চেতনার সৃষ্টি। এছাড়া বস্তুই সামাজিক ও মানসিক সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।অপরপক্ষে উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারাই ইতিহাসের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। কেননা উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটলে সামাজিক পরিবর্তন হয়।

৫। শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব মতবাদঃ  কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর তত্ত্বের মতে সমাজে যে উৎপাদন পদ্ধতির সৃষ্টি হয়েছে তার উপর ভিত্তি করেই মুলত দুটি শ্রেণির উদ্ভব হয়।যার মধ্যে একটি হলো শাসক শ্রেণি অন্যটি শোষিত শ্রেণি। এ দুটি শ্রেণির স্বার্থ বিপরীত হওয়ায়  তাদের মধ্য দ্বন্দ্ব সংঘাত সবসময় লেগে থাকে। যার ফলে শ্রেণি সংগ্রাম সমাজের রুপান্তর ঘটায়। আর তাদের হারজিতের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারা নতুন সমাজের গোড়াপত্তন ঘটে।

 ৬। সমাজবিপ্লবঃ সমাজ বিপ্লবকে কার্ল মার্কস তত্ত্বের অন্যতম একটি মূলনীতি হিসেবে চিহিৃত করা হয়। সমাজ বিপ্লব বলতে পণ্যের মূল্য পুঁজিপতিদের হাতে থাকার কারণে যখন মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ক্রয় শক্তির অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদিত হবে। অপ্রত্যাশিত চাহিদা কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝায়।

৭। উদ্ধৃত্ত মূল্য মতবাদঃ কার্ল মার্কস (Karl Marx) তত্ত্বের অন্য আরেকটি মূলনীতি হলো  উদ্ধৃত্ত মূল্য মতবাদ। শ্রমিকরা উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য শ্রম দেয় তবে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য শ্রমিকরা পায়না বা তাদের দেওয়া হয়না। উদ্ধৃত্ত মূল্য মতবাদ বলতে  দ্রব্যের বিক্রয়মূল্য এবং দ্রব্য উৎপাদনের জন্য শ্রমিকরা যে মজুরি পায় তার পার্থক্যকে উদ্ধৃত্ত মূল্য তত্ত্ব।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কার্ল মার্কসের তত্ত্বের মূলনীতিসমূহ থেকে কার্ল মার্কস (Karl Marx) তত্ত্বের ধারণা পাওয়া যায়। কেননা কার্ল মার্কস (Karl Marx) তত্ত্বটি একটি বাস্তবভিত্ত্বিক জ্ঞান দান করে ।কার্ল মার্কস (Karl Marx) তত্ত্বের মূল যে বিষয়টি সেটা হলো শাসক শ্রেণি ও শোষিত শ্রেণি এর মধ্যে দ্বন্দ্ব বা সংঘাত। কারণ, এ অবস্থা থেকে সমাজে শ্রেণি সংগ্রামের সূচনা হয়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post