নব্য উপনিবেশবাদ কী?

নব্য উপনিবেশবাদ কী? উপনিবেশবাদ কি?

ভূমিকাঃ নব্য উপনিবেশবাদ এবং উপনিবেশবাদ মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।উপনিবেশবাদের নতুন রুপকে নব্য উপনিবেশবাদ বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক শাসনে ধস নামে। নব্য উপনিবেশবাদে পূর্ববর্তী উপনিবেমবাদের সকল শোষণ প্রক্রিয়া ভিন্ন কৌশলে উপস্থাপন করা হয় মাত্র। নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ ধরে রাখার জন্য উপনিবেশবাদ গড়ে তোলে।

নব্য উপনিবেশবাদ কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে এবং ঔপনিবেশিক শাসনে ধস নামে। অনেক উপনিবেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, তবে সেই স্বাধীনতা ছিল আংশিক। আগের মতো সরাসরি শাসন না থাকলেও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে এই দেশগুলোর ওপর প্রভাব বজায় রাখে উপনিবেশিক শক্তিগুলো। ফলে, উপনিবেশবাদ পুরোপুরি বিলুপ্ত না হয়ে, এক নতুন রূপে নব্য উপনিবেশবাদের মাধ্যমে পুনরায় আবির্ভূত হয়


নব্য উপনিবেশবাদঃ নব্য উপনিবেশবাদ বাণিজ্য ও সাহায্য অর্থনীতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম এক মাধ্যম। আরও বলা যায় নব্য উপনিবেশবাদ হলো পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের এক নতুন কৌশল। ঔপনিবেশিক ছোবল থেকে এশিযা ও আফ্রিকার অনেক রাষ্ট্র নিজেদের মুক্ত করলেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ রাষ্ট্র গুলোর উপর বিভিন্ন ধরনের কৌশল যেমন- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার প্রচেষ্ঠা করে। নব্য উপনিবেশবাদ হলো এসকল প্রচেষ্ঠা বজায় রাখার একটি মাধ্যম। উপনিবেশবাদ বলতে একটি দেশ কর্তৃক অন্য একটি দেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে বোঝায়। এতএব নব্য উপনিবেশবাদ হলো পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের একটি নতুন কৌশল।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন মনীষী নব্য উপনিবেশবাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুরে ধরা হলো।

অধ্যাপক চার্লস এর মতে ''নব্য উপনিবেশবাদ বলতে বুঝায় অন্য দেশের স্বাধীনতার উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়।''

প্রফেসর শামসুল হুদা হারুন নব্য উপনিবেশবাদ এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন- ''The same man with new dress.''

জোহান গালতান এর মতে -''নব্য উপনিবেশবাদ হলো বিভিন্ন জনগণের মধ্যে এক ধরনের আভিজাত্যের সম্পর্ক।

বি. জি. হুয়েন বলেছেন- ''একটি দেশের উপর অন্য একটি দেশের যে কোন ধরনের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবই হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ।''

অধ্যাপক হেগেল উপনিবেশবাদ এর এক বাস্তবধর্মী সংজ্ঞা প্রদান করেছেন- ''একটি জাতির অভ্যন্তরীণ, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরেক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণকে নব্য উপনিবেশবাদ বলে।''

উপসংহারঃ সর্বশেষ বলা যায় যে, সাম্রাজ্যবাদের বৃহৎ অধ্যয়গুলোর পরিসমাপ্তি ঘটেছে ঠিকই কিন্তু উপনিবেশবাদ বিলুপ্ত হয়নি। নতুন ধারায় নতুন অবয়বে নতুনভাবে বঞ্চনার প্রক্রিয়া নিয়ে উপনিবেশবাদ বিশ্ব রাজনীতিতে বিরাজ করেছে। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র গুলোকে বৃহৎ রাষ্ট্রের অধীনে রেখে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিক থেকে শোষণ করার নতুন পদ্ধতিই নব্য উপনিবেশবাদ। এই আধুনিক শোষণব্যবস্থা আরও বিপজ্জনক, কারণ এটি দৃশ্যমান নয় বরং নরম কৌশলে ধীরে ধীরে একটি জাতিকে আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার কাঠামো থেকে সরিয়ে দেয়। অতএব, এ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস এবং সচেতন রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

No comments:

Post a Comment